
এনএনবি, ঢাকা
অন্তর্বর্তী সরকার সারাদেশে সাশ্রয়ী মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত
করতে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বিদ্যমান নীতিমালার পুনর্মূল্যায়ন অব্যাহত রেখেছে বলে
জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল
কবির খান।
শনিবার (০৯ আগস্ট ২০২৫) অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তিতে তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ
ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও খরচ-সাশ্রয়ী করার লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ
হিসেবে স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের (আইপিপি) সঙ্গে করা চুক্তির সেই ধারাগুলো
পর্যালোচনা করা হয়েছে, যেখানে সরবরাহের পরিমাণ নয় বরং বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতার
ভিত্তিতে পেমেন্ট দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল।
তিনি জানান, সরকার ‘কুইক এনহ্যান্সমেন্ট অব ইলেকট্রিসিটি অ্যান্ড এনার্জি সাপ্লাই
(স্পেশাল প্রোভিশন) অ্যাক্ট, ২০১০’— যা কুইক রেন্টাল আইন নামে পরিচিত— তা বাতিল
করেছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কমাতে ও ট্যারিফ সমন্বয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র
পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে, কারণ বিভিন্ন কেন্দ্রে ট্যারিফ রেটে উল্লেখযোগ্য
পার্থক্য রয়েছে।
গ্যাস অনুসন্ধান প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ২০১০ সালের পর দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান
কার্যক্রমে কোনো অগ্রগতি হয়নি, কারণ পূর্ববর্তী সরকার আমদানির ওপর নির্ভর করেছে।
তবে বর্তমান সরকার নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অগ্রাধিকার দিয়েছে
এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে
(বাপেক্স) প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দ করেছে।
জাতীয় বাজেট উপস্থাপনার সময় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ
উৎপাদনের মোট ব্যয় ১০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে, যা বছরে প্রায় ১,১০০ কোটি
টাকা সাশ্রয় করবে। এ লক্ষ্যে আইপিপি ও যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর
সক্ষমতাভিত্তিক পেমেন্ট পর্যালোচনার জন্য দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) জানিয়েছে, এনডব্লিউপিজিসিএল,
এপিএসসিএল, ইজিসিবি, আরপিসিএল ও ব্রিপিএলসহ ২৩টি সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে তাদের
চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন
সক্ষমতা ২৮ হাজার মেগাওয়াট, যেখানে চাহিদা প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট। এই উদ্যোগ
থেকে বছরে প্রায় ২,৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয়ের আশা করা হচ্ছে, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে
প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজাউল করিম
সরকারের খরচ কমানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আইপিপি ও যৌথ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে
চুক্তি পুনঃপর্যালোচনায় সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য এ বছরের মধ্যে দেশীয় উৎস থেকে দৈনিক ৬৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট
গ্যাস এবং ২০২৮ সালের মধ্যে স্থানীয় কূপ থেকে অতিরিক্ত ১,৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস
আহরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে মহানগর এলাকার বিতরণ লাইন ও
সাবস্টেশনগুলো ভূগর্ভস্থ করার কাজ চলছে, যা সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও স্থিতিশীল ও
কার্যকর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর নেপালের সঙ্গে একটি চুক্তি
হয়েছে, যার মাধ্যমে গ্রীষ্মকালে ৪০ মেগাওয়াট সাশ্রয়ী জলবিদ্যুৎ আমদানি করা হবে।
সরকার আশা করছে, ২,৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ধাপে ধাপে উৎপাদন শুরু করে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ
সরবরাহ শুরু করবে।
COMMENTS