জুলীয়াস চৌধুরী
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ‘কিংস পার্টি’ একটি আলোচিত অধ্যায়, যেখানে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে একদল নেতা নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে এবং পরে হারিয়ে যায়। ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে বেশ কয়েকটি দল জনগণের কাছে "কিংস পার্টি" হিসেবে পরিচিতি পায়। কিন্তু এসব দলের নেতাদের এখন কী অবস্থা? সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাওয়া এই নেতারা কেমন আছেন, কোথায় আছেন, আর কতটুকু প্রভাবশালী? ক্ষমতার মঞ্চে আবারও জায়গা পাওয়ার চেষ্টা করছেন, নাকি রাজনীতির আড়ালে হারিয়ে গেছেন? এমন প্রশ্ন আজ অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
প্রশ্ন উঠছে, 'কিংস পার্টির' নেতারা এখন কোথায়? গত দেড় দশকের আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা এসব দল মূলত ক্ষমতাসীনদের সরাসরি বা পরোক্ষ সমর্থন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল থেকে বিচ্ছিন্ন নেতাদের নিয়ে গঠিত এসব দলগুলোকে জনগণ "কিংস পার্টি" নামে চিনেছে।
২০২৩ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছোট রাজনৈতিক দল, যেমন তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) অংশ নেয়। তবে এসব দল প্রার্থী দিলেও অধিকাংশই জামানত হারায়। বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনের বর্জন করায়, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা ন্যূনতম পর্যায়ে ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার এই দলগুলোর অংশগ্রহণকে নির্বাচনের বৈধতা প্রদানের একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল বলে সমালোচকরা মনে করেন।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচনেও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামে আরেকটি দল আলোচনায় আসে। তবে আজ এই দলগুলোর নেতারা অনেকটাই অদৃশ্য হয়ে গেছেন।
'কিংস পার্টি' বা ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা এসব দল বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ক্ষমতার ছায়ায় থেকে সাময়িক সফলতা অর্জন করা গেলেও, এসব দল দীর্ঘমেয়াদে জনগণের সমর্থন অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। 'কিংস পার্টি' গঠনের পেছনে রাজনৈতিক সুবিধাবাদী মনোভাব কাজ করেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বর্তমানে এই দলগুলোর নেতারা রাজনীতি থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন এবং তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ খুবই অনিশ্চিত। সময়ের সাথে সাথে তাদের অধিকাংশই রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে হারিয়ে যেতে বসেছেন, আর রাজনৈতিক ইতিহাসে তাদের স্থান ধীরে ধীরে 'অতীতের শিক্ষা' হিসেবেই রয়ে যাবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ‘কিংস পার্টি’ একটি আলোচিত অধ্যায়, যেখানে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে একদল নেতা নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে এবং পরে হারিয়ে যায়। ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে বেশ কয়েকটি দল জনগণের কাছে "কিংস পার্টি" হিসেবে পরিচিতি পায়। কিন্তু এসব দলের নেতাদের এখন কী অবস্থা? সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাওয়া এই নেতারা কেমন আছেন, কোথায় আছেন, আর কতটুকু প্রভাবশালী? ক্ষমতার মঞ্চে আবারও জায়গা পাওয়ার চেষ্টা করছেন, নাকি রাজনীতির আড়ালে হারিয়ে গেছেন? এমন প্রশ্ন আজ অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘কিংস পার্টি’ বলতে কি বুঝায়?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে "কিংস পার্টি" বলতে সাধারণত এমন একটি রাজনৈতিক দলকে বোঝানো হয়, যা শাসকগোষ্ঠী বা ক্ষমতাসীনদের সমর্থন ও প্রভাব নিয়ে তৈরি বা পরিচালিত হয়। এ ধরনের দলকে কখনো কখনো ক্ষমতাসীনদের অনুকূলে কাজ করার জন্য তৈরি করা হয় বা বলা হয়, তারা ক্ষমতায় আসার জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন লাভ করেছে। এই শব্দটি প্রধানত রাজনৈতিক বিশ্লেষণে ব্যবহার করা হয়, যেখানে এমন ধারণা প্রচলিত থাকে যে কোনো বিশেষ দলের পেছনে রাষ্ট্রীয় বা সামরিক শাসকদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন আছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, ২০০৬-২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বাইরে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি গঠনের চেষ্টা হয়েছিল। সে সময় জাতীয় পার্টি বা বিএনপির কিছু অংশকে "কিংস পার্টি" হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, কারণ অনেকে মনে করেছিলেন যে সামরিক প্রশাসনের সহযোগিতায় একটি বিকল্প দল তৈরি করা হচ্ছে।
সাধারণভাবে, "কিংস পার্টি" শব্দটি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়, যখন মনে করা হয় যে কোনো দল স্বতন্ত্র গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে প্রভাবশালী শক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন উঠছে, 'কিংস পার্টির' নেতারা এখন কোথায়? গত দেড় দশকের আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা এসব দল মূলত ক্ষমতাসীনদের সরাসরি বা পরোক্ষ সমর্থন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল থেকে বিচ্ছিন্ন নেতাদের নিয়ে গঠিত এসব দলগুলোকে জনগণ "কিংস পার্টি" নামে চিনেছে।
২০২৩ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছোট রাজনৈতিক দল, যেমন তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম), এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) অংশ নেয়। তবে এসব দল প্রার্থী দিলেও অধিকাংশই জামানত হারায়। বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনের বর্জন করায়, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা ন্যূনতম পর্যায়ে ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার এই দলগুলোর অংশগ্রহণকে নির্বাচনের বৈধতা প্রদানের একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল বলে সমালোচকরা মনে করেন।
তৃণমূল বিএনপি
তৃণমূল বিএনপি মূলত ২০১৫ সালে গঠিত হলেও নিবন্ধন পায় ২০২৩ সালে। দলটির প্রতীক সোনালী আঁশ, এবং দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ১৩৩টি আসনে প্রার্থী দেয়। কিন্তু কোনো আসনেই জয়ী হতে পারেনি। তৃণমূল বিএনপির অন্যতম নেতা শমসের মবিন চৌধুরী এবং তৈমুর আলম খন্দকার দল ছাড়ার পরে দলটির নেতৃত্বে আসেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে, দলের নেতারা অনেকটাই নিষ্ক্রিয় এবং রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন।বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)
বিএনএম দলটি নিবন্ধন পায় নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে, ২০২৩ সালের আগস্টে। তাদের নির্বাচনী প্রতীক ছিল নোঙর, এবং ৫৪টি আসনে প্রার্থী দিলেও প্রায় সবাই জামানত হারিয়েছে। বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মো. আবু জাফর, যিনি একসময় আওয়ামী লীগ এবং পরে বিএনপির নেতা ছিলেন, এখন এই দলটির নেতৃত্বে আছেন। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার অনেকটাই সুবিধাবাদী হিসেবে পরিচিত, এবং তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিএনএমের বর্তমান অবস্থানও অনিশ্চিত।বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ২০২৩ সালের নির্বাচনে ৭৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, কিন্তু কোনো প্রার্থীই জয়ী হয়নি। দলটির প্রতীক ছিল একতারা, এবং এর প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী আল মাইজভাণ্ডারী। এই দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণও মূলত ক্ষমতাসীনদের সুবিধার্থে ছিল বলে ধারণা করা হয়।কিংস পার্টির অতীত ও বর্তমান
২০০৭ সালের এক-এগারোর সময় বাংলাদেশে অনেক ছোট রাজনৈতিক দল গঠিত হয়, যারা সরাসরি সামরিক প্রশাসনের প্রভাবে রাজনীতিতে উঠে আসে। এর মধ্যে ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি), কাজী ফারুক আহম্মদের ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, শওকত হোসেন নীলুর ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), এবং মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইবরাহিমের কল্যাণ পার্টি উল্লেখযোগ্য। এসব দলগুলোর নেতৃত্বে থাকা অনেকেই এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে নিষ্ক্রিয় বা অবসর নিয়েছেন।২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচনেও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামে আরেকটি দল আলোচনায় আসে। তবে আজ এই দলগুলোর নেতারা অনেকটাই অদৃশ্য হয়ে গেছেন।
'কিংস পার্টি' বা ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা এসব দল বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ক্ষমতার ছায়ায় থেকে সাময়িক সফলতা অর্জন করা গেলেও, এসব দল দীর্ঘমেয়াদে জনগণের সমর্থন অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। 'কিংস পার্টি' গঠনের পেছনে রাজনৈতিক সুবিধাবাদী মনোভাব কাজ করেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বর্তমানে এই দলগুলোর নেতারা রাজনীতি থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন এবং তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ খুবই অনিশ্চিত। সময়ের সাথে সাথে তাদের অধিকাংশই রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে হারিয়ে যেতে বসেছেন, আর রাজনৈতিক ইতিহাসে তাদের স্থান ধীরে ধীরে 'অতীতের শিক্ষা' হিসেবেই রয়ে যাবে।
COMMENTS