![]() |
রায়হানা বেগম রত্না |
গাজীপুর প্রতিনিধি
একটি সরকারি অফিসের নিয়ন্ত্রণ কীভাবে ব্যক্তি-পরিবারের হাতে চলে যেতে পারে, তার উদাহরণ হয়ে উঠেছিল গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। বছরজুড়ে সেবা গ্রহীতাদের অভিযোগ, অতিরিক্ত ঘুষ আদায়, অসহনীয় হয়রানি—এসবের কেন্দ্রে ছিলেন রায়হানা বেগম রত্না ও তার ভাই আল আমিন। বদলি হয়ে পদ হারালেও, এখন আবার পুরনো দপ্তরে ফিরে আসার জন্য নেপথ্যে চলছে কোটি টাকার দেনদরবার—এমনটাই জানা গেছে নির্ভরযোগ্য সূত্রে।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে কালীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্নীতিবাজ নকল নবিস আল আমিনের কর্মকাণ্ড সামনে আসে। কিন্তু অনুসন্ধান এগোতেই বেরিয়ে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য—আসলে আল আমিন শুধু একক ব্যক্তি নন, তার পেছনে ছিল পুরো একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এবং সেই সিন্ডিকেটের ‘মূল মস্তিষ্ক’ হিসেবে উঠে আসে তার বড় বোন রায়হানা বেগম রত্নার নাম।
১৯৯৬ সালে কালীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নকল নবিস হিসেবে যোগদান করেন রায়হানা বেগম। সরকারি চাকরি না হলেও, ঘুষ ও অনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে তিনি দ্রুত স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের নজরে আসেন। ২০১৬ সালে মোহরার পদে উন্নীত হয়ে কালিয়াকৈর অফিসে বদলি হন। পরে আবার ২০১৯ সালে ফিরে আসেন কালীগঞ্জে এবং নিজের ভাই আল আমিনকে নকল নবিস পদে বসিয়ে দেন।
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভাই-বোন মিলে গড়ে তোলেন দুর্নীতির একটি সুসংগঠিত নেটওয়ার্ক—যেখানে দলিল নিবন্ধনের বিনিময়ে নিয়ম বহির্ভূত অর্থ আদায়, কাগজপত্র আটকে রাখা, সেবা গ্রহীতাকে ভয়ভীতি দেখানোসহ নানা অভিযোগ উঠে আসে।
২০২২ সালের অক্টোবরে রায়হানা বেগম রত্নাকে পদোন্নতি দিয়ে টঙ্গী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বদলি করা হয়। এতে তার সরাসরি প্রভাব কমে যায়। একই সময়ে ভাই আল আমিনের দুর্নীতির তথ্য গণমাধ্যমে এলে, তাকে আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি না করে বরং বদলি করে দেওয়া হয় কালিয়াকৈরে।
ফলে কালীগঞ্জ অফিসে সিন্ডিকেটটি কার্যত ভেঙে পড়ে। কিন্তু এতে রায়হানা বেগম হাল ছাড়েননি।
বিশ্বস্ত সূত্রের দাবি, বর্তমানে রায়হানা বেগম মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পুনরায় কালীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বদলি হওয়ার চেষ্টা করছেন। জেলা রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার অভিযোগও উঠেছে। ঘন ঘন গোপন বৈঠক, রাজনৈতিক লবিং, প্রশাসনিক তদবির—সবই চলছে পুরনো জায়গা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে।
এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে গাজীপুরের জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
রায়হানা বেগম ও তার ভাইয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত কালীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দীর্ঘদিনের দুর্নীতির চক্র ভেঙে গেলেও, নতুন করে সিন্ডিকেট পুনর্গঠনের চেষ্টা স্পষ্ট। ভূমি মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের উচিত—এই দুর্নীতিবাজ চক্রকে আইনের আওতায় এনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং একইসঙ্গে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা।
দলিল নিবন্ধনের মতো সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ সেবা খাতে যেন কোনোভাবেই ব্যক্তির ‘ব্যক্তিগত মিশন’ বাস্তবায়িত না হয়, সেই নিশ্চয়তা দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
COMMENTS