
গাজীপুর প্রতিনিধি
সরকারি অফিস মানেই কি ঘুষ, দালালি আর দুর্নীতি? যেখানে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব, সেখানেই যদি কোটি টাকার ফাঁকি দিয়ে চলাফেরা হয়, তাহলে রাষ্ট্রের অর্থনীতি কোথায় দাঁড়াবে? এমনই এক চাঞ্চল্যকর চিত্র উঠে এসেছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। খোদ অফিসের ভেতরেই গড়ে উঠেছে একটি সুপরিকল্পিত দুর্নীতির সিন্ডিকেট—যার হোতা আপন ভাই-বোন! রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ফাঁকি, জমির শ্রেণী পরিবর্তন, ভূয়া মূল্যায়ন, আর ক্ষমতার অপব্যবহারে তারা যা করেছে, তা শুনলে আঁতকে উঠবেন যে কেউ। আর এই সিন্ডিকেটের পেছনে রয়েছে সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার ও প্রভাবশালী দলিল লেখকের প্রত্যক্ষ মদদ!
২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর, কালীগঞ্জ উপজেলার বালিগাঁও মৌজায় দুই ইউনিটের ছাদযুক্ত পাকা বাড়িসহ প্রায় দেড় কোটি টাকার মূল্যের ১৪.৮৭৫ শতাংশ জমি মাত্র ৭০ লাখ টাকায় মূল্যায়ন দেখিয়ে “বায়না নামা” দলিল (নং ৮৯৫৬/২০২০) রেজিস্ট্রেশন করেন রায়হানা বেগম ও তার ছোট বোন শিপা বেগম। ৩০ লাখ টাকা পরিশোধ এবং বাকি ৪০ লাখ টাকা বাকি দেখিয়ে সম্পাদিত হয় দলিলটি। অথচ জমির প্রকৃত বাজারমূল্য ছিল প্রায় দ্বিগুণ।
এখানেই শেষ নয়। ২০২১ সালের ৩১ মার্চ, “সাফ কবলা” দলিলের (নং ৩১২৩/২০২১) মাধ্যমে সেই জমি নিজেদের নামে হস্তান্তর করিয়ে নেন রায়হানা বেগম। কিন্তু এবার বায়না নামায় দেখানো ৭০ লাখ টাকার চেয়েও কম, মাত্র ৪০ লাখ টাকা দেখিয়ে দলিল রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন, যা স্পষ্টতই রাজস্ব ফাঁকি ও দলিল জালিয়াতির অপরাধের শামিল।
অভিযোগ রয়েছে, এই কাজগুলোতে সরাসরি সহায়তা করেছেন কালীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রার মো. শাহীন হাসান ও বিতর্কিত দলিল লেখক মাহবুব সরকার। জমির শ্রেণী অবৈধভাবে ‘সাইল’ (কৃষিজমি) দেখিয়ে কম স্ট্যাম্প ডিউটি দেওয়া হয়েছে। বায়না নামা দলিলের সূত্র ও তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে সাফ কবলা দলিলে গোপন করা হয়েছে, যা সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি এবং ফৌজদারি আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।
তারা ভাই-বোন মিলে গড়ে তোলেন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসভিত্তিক দুর্নীতির দুর্গ। একদিকে জাল দলিল, অন্যদিকে জমির অবমূল্যায়ন আর শ্রেণী পরিবর্তনের মাধ্যমে কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিতে থাকেন নিয়মিত। এই সিন্ডিকেট এতটাই প্রভাবশালী হয়ে ওঠে যে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে।
২০২২ সালের অক্টোবর মাসে রায়হানাকে অফিস সহকারি হিসেবে বদলি করে টঙ্গী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পাঠানো হলে দুর্নীতির ঘাঁটি খানিকটা নড়বড়ে হয়। এরপর ভাই আল আমিনের দুর্নীতির অনুসন্ধান প্রকাশ হলে তাকেও আইনি ব্যবস্থায় না এনে বদলি করে রক্ষা করা হয়। তবুও রায়হানা থেমে থাকেননি। বর্তমানেও তিনি বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে আবারও কালীগঞ্জে ফিরতে মরিয়া। জেলা রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে—এই দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অবিলম্বে তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানান।
রায়হানা বেগম বর্তমানে টঙ্গী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অফিস সহকারি হিসেবে এবং তার ভাই আল আমিন কালিয়াকৈর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নকল নবিস হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
সরকারি অফিস মানেই কি ঘুষ, দালালি আর দুর্নীতি? যেখানে রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব, সেখানেই যদি কোটি টাকার ফাঁকি দিয়ে চলাফেরা হয়, তাহলে রাষ্ট্রের অর্থনীতি কোথায় দাঁড়াবে? এমনই এক চাঞ্চল্যকর চিত্র উঠে এসেছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে। খোদ অফিসের ভেতরেই গড়ে উঠেছে একটি সুপরিকল্পিত দুর্নীতির সিন্ডিকেট—যার হোতা আপন ভাই-বোন! রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ফাঁকি, জমির শ্রেণী পরিবর্তন, ভূয়া মূল্যায়ন, আর ক্ষমতার অপব্যবহারে তারা যা করেছে, তা শুনলে আঁতকে উঠবেন যে কেউ। আর এই সিন্ডিকেটের পেছনে রয়েছে সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার ও প্রভাবশালী দলিল লেখকের প্রত্যক্ষ মদদ!
ভাই-বোনের সিন্ডিকেটে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি!
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী দুর্নীতির সিন্ডিকেট—যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন রায়হানা বেগম রত্না ও তার আপন ভাই আল আমিন। তদন্তে উঠে এসেছে, এই দুজন তাদের প্রভাব খাটিয়ে জমির দলিল নিবন্ধনের সময় শ্রেণী পরিবর্তন, অবমূল্যায়ন এবং কৌশলে জমির প্রকৃত মূল্য গোপন করে সরকারকে মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছেন।২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর, কালীগঞ্জ উপজেলার বালিগাঁও মৌজায় দুই ইউনিটের ছাদযুক্ত পাকা বাড়িসহ প্রায় দেড় কোটি টাকার মূল্যের ১৪.৮৭৫ শতাংশ জমি মাত্র ৭০ লাখ টাকায় মূল্যায়ন দেখিয়ে “বায়না নামা” দলিল (নং ৮৯৫৬/২০২০) রেজিস্ট্রেশন করেন রায়হানা বেগম ও তার ছোট বোন শিপা বেগম। ৩০ লাখ টাকা পরিশোধ এবং বাকি ৪০ লাখ টাকা বাকি দেখিয়ে সম্পাদিত হয় দলিলটি। অথচ জমির প্রকৃত বাজারমূল্য ছিল প্রায় দ্বিগুণ।
এখানেই শেষ নয়। ২০২১ সালের ৩১ মার্চ, “সাফ কবলা” দলিলের (নং ৩১২৩/২০২১) মাধ্যমে সেই জমি নিজেদের নামে হস্তান্তর করিয়ে নেন রায়হানা বেগম। কিন্তু এবার বায়না নামায় দেখানো ৭০ লাখ টাকার চেয়েও কম, মাত্র ৪০ লাখ টাকা দেখিয়ে দলিল রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন, যা স্পষ্টতই রাজস্ব ফাঁকি ও দলিল জালিয়াতির অপরাধের শামিল।
অভিযোগ রয়েছে, এই কাজগুলোতে সরাসরি সহায়তা করেছেন কালীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রার মো. শাহীন হাসান ও বিতর্কিত দলিল লেখক মাহবুব সরকার। জমির শ্রেণী অবৈধভাবে ‘সাইল’ (কৃষিজমি) দেখিয়ে কম স্ট্যাম্প ডিউটি দেওয়া হয়েছে। বায়না নামা দলিলের সূত্র ও তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে সাফ কবলা দলিলে গোপন করা হয়েছে, যা সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি এবং ফৌজদারি আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।
দুর্নীতির দীর্ঘ ইতিহাস: ‘নকল নবিস’ থেকে দুর্নীতির রানী!
রায়হানা বেগম রত্নার দুর্নীতির ইতিহাস এক-দুই দিনের নয়। ১৯৯৬ সালে ‘নকল নবিস’ হিসেবে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মজীবন শুরু করলেও অল্প সময়েই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে গা ঘষাঘষি, ঘুষ ও দালালচক্রের ছত্রছায়ায় প্রভাব বিস্তার করে আলোচনায় আসেন। ২০১৬ সালে মোহরার পদে পদোন্নতি বাগিয়ে নেন ‘ব্যক্তিগত প্রভাব ও রূপের প্রলোভন’ দেখিয়ে। ২০১৯ সালে ফের কালীগঞ্জ অফিসে ফিরে এসে আপন ভাই আল আমিনকেও একই অফিসে ঢুকিয়ে দেন নকল নবিস হিসেবে।তারা ভাই-বোন মিলে গড়ে তোলেন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসভিত্তিক দুর্নীতির দুর্গ। একদিকে জাল দলিল, অন্যদিকে জমির অবমূল্যায়ন আর শ্রেণী পরিবর্তনের মাধ্যমে কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিতে থাকেন নিয়মিত। এই সিন্ডিকেট এতটাই প্রভাবশালী হয়ে ওঠে যে, তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস পর্যন্ত হারিয়ে ফেলে।
২০২২ সালের অক্টোবর মাসে রায়হানাকে অফিস সহকারি হিসেবে বদলি করে টঙ্গী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পাঠানো হলে দুর্নীতির ঘাঁটি খানিকটা নড়বড়ে হয়। এরপর ভাই আল আমিনের দুর্নীতির অনুসন্ধান প্রকাশ হলে তাকেও আইনি ব্যবস্থায় না এনে বদলি করে রক্ষা করা হয়। তবুও রায়হানা থেমে থাকেননি। বর্তমানেও তিনি বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে আবারও কালীগঞ্জে ফিরতে মরিয়া। জেলা রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
কারা আড়াল করছেন এই সিন্ডিকেটকে?
এতসব চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরেও এখনো দৃশ্যমান কোনো তদন্ত কিংবা শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং অভিযুক্তরা সরকারি পদে বহাল থাকায় প্রশ্ন উঠেছে, প্রশাসন কি নিজেই এই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে?জেলা রেজিস্ট্রারের নির্লিপ্ততা
এ বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমানকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালে তিনি লিখেন, “আমি বর্তমানে অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত ও পারিবারিক কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। দুঃখিত ভাই, রিলেটেড অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।” তার এই প্রতিক্রিয়া বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত। এই সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে বারবার দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পরও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের এমন নির্লিপ্ততা উদ্বেগজনক।ক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ : বিচার দাবি
গাজীপুর নাগরিক কমিটির সভাপতি জুলীয়াস চৌধুরী বলেন, এই দুর্নীতির ভয়াবহতা শুধু কালীগঞ্জ নয়, পুরো দেশের নিবন্ধন ব্যবস্থাকেই কলুষিত করছে। জাতীয় রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যারা নিজেদের আঙুল ফুলিয়ে কলাগাছ বানায়, তারা দেশের শত্রু। এদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে এদেরকে অনুসরণ করে নতুন দুর্নীতিবাজরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে—এই দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অবিলম্বে তদন্ত ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানান।
রায়হানা বেগম বর্তমানে টঙ্গী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অফিস সহকারি হিসেবে এবং তার ভাই আল আমিন কালিয়াকৈর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নকল নবিস হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
COMMENTS