![]() |
ছবি: সংগৃহীত |
এনএনবি, বাগেরহাট
বাগেরহাটের মোংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) ভারতীয় মালিকানাধীন
ভিআইপি লাগেজ ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভের সময় পুলিশ ও
ইপিজেডের নিরাপত্তা কর্মীদের সাথে শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া এবং সংঘর্ষের
ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (২৫ মার্চ, ২০২৪) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত মোংলা
ইপিজেডের গেটে এ ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ, সংবাদকর্মীসহ অন্তত ৩০ শ্রমিক আহত
হয়েছেন।
সকাল থেকেই ভিআইপি লাগেজ ফ্যাক্টরীর শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে ফ্যাক্টরীর
সামনে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরই জেরে ইপিজেড ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু
করলে তাঁদের শান্ত করার চেষ্টাকালে বেপজা সিকিউরিটি ও পুলিশের সাথে শ্রমিকদের
সংঘর্ষ হয়। এ সময় কারখানা ভাঙচুরেরও ঘটনা ঘটেছে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা পুলিশকে
লক্ষ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশও টিয়ারশেল ও
রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় পুলিশ ৮ শ্রমিককে আটক করেছে।
ওই কারখানার শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ভিআইপির ৭টি
প্লান্টের প্রায় ১৮০০ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। সোমবার সকালে কাজে এসে এমন
খবর শুনে শ্রমিকরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটির ৭টি প্লান্টের সামনে অবস্থান
নিয়ে তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে সেখান থেকে ইপিজেডের প্রধান ফটকে গেলে
নিরাপত্তা কর্মীরা তাঁদের আটকে দেয়। সেখান থেকে বের হতে না পেরে শ্রমিকরা
সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
ওই কারখানার দুই নারী শ্রমিক সুবর্ণা ও তানিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘বেতন আমরা
পাইনি। আবার কাজ দে’ বাদও দিয়ে দিছে। না পাওয়ার করণে আমরা আন্দোলন করছি। কিন্তু
আমাগো পরে হামলা করিছি। আমাগো পরেই বেশি হিংস্র হয়ে হামলা করছে। ৩০ জনের বেশি
শ্রমিক আহত হইছে। আরও কে কোথায় গেছে তা কতি পারি না।’
মোংলা থানার ওসি কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত, শ্রমিকরা
ইপিজেড ফটক ছেড়ে চলে গেছে। এর আগে কারখানা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মূলত সকাল ৯টা
থেকেই উত্তেজনা শুরু হয়। ইপিজেডের ভিআইপি লাগেজ ফ্যাক্টরি রবিবার তাঁদের প্রায়
১ হাজার ৮০০ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল সিদ্ধান্ত নিয়ে আজই ছাঁটাই
কার্যকর করেছে। প্রতিষ্ঠানটি (ভিআইপি লাগেজ) বলছে, তাঁরা নিয়ম অনুযায়ী
শ্রমিকদের এক মাসের বেতন, ভাতা ও বোনাস প্রদান করেছে। তবে শ্রমিকরা বলছেন, আমরা
টাকা পাইনি।’
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেলুর রহমান বলেন, ‘মোংলা ইপিজেডের
ভিআইপি নামের কারখানার শ্রমিকদের ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। কারখানা
কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়মের মধ্যে থেকেই তাঁরা কর্মী ছাঁটাই করেছে। তবে শ্রমিকদের
দাবি, তাঁরা যথাযথ পাওনা বুঝে পায়নি। এটা নিয়েই অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এর
প্রেক্ষিতে তাঁরা গেটে জড়ো হয়। আমরা তাঁদের বুঝাতে চেষ্টা করি তাঁরা যেন
শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি আদায়ের চেষ্টা করে, কোনো বিশৃঙ্খলা যেন না হয়।
কিন্তু একপর্যায়ে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ আশপাশে ভাঙচুর শুরু
করে। তখন বাধ্য হয়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের
নিয়ন্ত্রণে আছে। অধিকাংশ কর্মী চলে গেছে। অল্প কয়েকজন দূরে অবস্থান করছে।’
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা: খালিদ হোসেন বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন শান্ত। আমরা
উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছি।’
তবে এ বিষয়ে মোংলা ইপিজেড ও ভিআইপি লাগেজ কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া
যায়নি।
COMMENTS