![]() |
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। |
এনএনবি, ঢাকা
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার গণিত শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ
হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীর করা যৌন হয়রানি ও নীপিড়নের অভিযোগের
সত্যতা মিলেছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪) বিকালে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া
সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম
এন্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন।
এর আগে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর অবিভাবকের করা
মামলায় গত সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪) মধ্যরাতে ঢাকার কলাবাগানের বাসা থেকে
ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, ৪৮ বছর বয়সী শিক্ষক মুরাদ একাধিক ছাত্রীদের শরীরের বিভিন্ন
স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়েছেন। তাদেরকে জড়িয়ে ধরে চুম্বনও করেছেন। সর্বশেষ ১৯
নভেম্বর, ২০২৩ বিকালে শিক্ষক মুরাদের কোচিং সেন্টারে কোচিং শেষে অন্য ছাত্রীরা
চলে গেলেও একজন ছাত্রীকে শিক্ষক মুরাদ কৌশলে বসিয়ে রেখে নামাজের রুমে যেতে বলেন।
এরপর সেই ছাত্রীকে জোর করে জড়িয়ে ধরে যৌন নির্যাতন করেন। পরে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে
মুরাদ বলেন, ‘আমি তোমার বাবার মতো। এই ঘটনা জানাজানি হলে তোমার মা-বাবার
সম্মানহানি হবে এবং স্কুল থেকে তোমাকে বের করে দেবে।’
সংবাদ সম্মেলনে ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘আজিমপুর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড
কলেজ শাখার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকার কোচিং শেষে একাধিক ছাত্রীর
সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন। অল্প বয়স্ক এসব ছাত্রী ভয়ে এসব প্রকাশ করেনি। একজন
ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারের এ ধরনের অশালীন আচরণের
ঘটনা স্কুল কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ভুক্তভোগী ছাত্রীর মাসহ
আরও বেশ কয়েকজন অভিভাবককে নিজ নিজ সন্তানসহ স্কুলে ডেকে নিয়ে আসে স্কুল
কর্তৃপক্ষ। অভিভাবকবসহ স্কুলের সাবেক ও বর্তমান অধ্যয়নরত অনেক ছাত্রীর সঙ্গে একই
অশালীন আচরণ করে শ্লীলতাহানী ঘটিয়েছে বলে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী ছাত্রী জানিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক ছাত্রীর সঙ্গে এই ধরনের অশালীন কার্যকলাপের বিষয়টি প্রকাশ
পেলে স্কুলের প্রাক্তন এবং বর্তমান অসংখ্য ভুক্তভোগী ছাত্রী ও অভিভাক শিক্ষক
মোহাম্মদ মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ স্কুলের সামনে
মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ এবং প্রেসক্লাবে প্রেস কনফারেন্স করেন।’
ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘ভুক্তভোগী ছাত্রীর মা মামলা করার পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি,
২০২৪ রাত ১টার দিকে কলাবাগান থানা এলাকা থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ মুরাদ
হোসেন সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন, দুটি সিম
কার্ড এবং একটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়। এছাড়া একাধিক ছাত্রীর বেশকিছু অডিও রেকর্ডিং
ও কথোপকথনের তথ্য পাওয়া গেছে। এগুলো যাচাই-বাচাই অব্যাহত আছে।’
এ ঘটনার পর অনেক অভিভাবকই চিন্তিত। তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে অনেকেই ভয়
পাচ্ছেন। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে অভিভাকদের উদ্দেশে কোনো বার্তা আছে কি-না
জানতে চাইলে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘নারী ও শিশুর বিষয়ে পুলিশ অত্যন্ত
সংবেদনশীল। এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ যদি কেউ করে থাকে তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা
হবে। যেসব শিক্ষার্থী স্কুল-কোচিংয়ে যাচ্ছে তারা স্বাভাবিকভাবে যাবে, ঢাকা
মেট্রোপলিটন পুলিশ এক্ষেত্রে বদ্ধ পরিকর।’
ভিকারুন্নেসা স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পেশাগত অবহেলা রয়েছে কি-না জানতে
চাইলে ড. মহিদ বলেন, ‘ব্যক্তির দায় কখনো প্রতিষ্ঠান নেয় না। প্রতিষ্ঠানটিতে আরও
অনেকে চাকরি করেন। তারা নিশ্চিয় এমন আচারণ করছেন না। একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে
তাদের যে আচরণ করা দরকার তারা সেটাই করছেন। বিক্ষিপ্তভাবে একজন শিক্ষক যদি এ
ধরনের কাজ করেন সে দায়ভার তো অন্য শিক্ষক নেবে না।’
একই প্রতিষ্ঠানে এমন অভিযোগে তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে। সেই তদন্তে
তাদের দায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই দায় মুক্তি পুলিশের তদন্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক
কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘এটি একটি একাডেমিক
বিষয়। তদন্তের বিষয়গুলো প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং কমিটি রয়েছে। তাদের দায়িত্বশীল যে
জায়গাগুলো আছে সেগুলো তারা দেখবেন। তবে ফৌজদারি বিষয়গুলো আমাদের অংশ। এই বিষয়গুলো
আমরা দেখছি। আমাদের কর্মকর্তারা নারী ও শিশুদের প্রতি অত্যন্ত সহমর্মিতা ও
ভালোবাস দেখায়। ফলে এটা আমরা দায়িত্ব নিয়ে আমরা তদন্ত করবো।’
COMMENTS