আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
ফখরুল বলেন, “আমাদের সামনে পথ একটাই। সেই পথ হচ্ছে যে আমরা এই সরকারকে সরিয়ে দেব। কারণ তারা ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছে যে তারা বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে।”
গত দুই বারের নির্বাচন আর হতে না দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “সেই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন করবেন? নির্বাচন এখানে কখনোই হবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হবে।”
এই দাবিতে সব রাজনৈতিক দলকে এক কাতারে আনতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন তিনি।
“আমরা সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি, তাদেরকেও আমরা এই কাতারে আনার চেষ্টা করছি। সবার আগে যে কাজটা করতে হবে যে, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে।”
জাতীয়তাবাদী উলামা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব বলেন,, “এখানে আপনাদের মধ্যে অনেকে আছেন ছাত্রদেরকে পড়ান, তাদেরকে শিক্ষা দেন, আপনাদের দায়িত্ব অনেক বেশি। আপনাদের দায়িত্ব হচ্ছে- জনমতকে সংগঠিত করা, মানুষকে সংগঠিত করা।
“এই আবেদন রাখছি, সবাই সংগঠিত হবেন। নিজেদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে গিয়ে এক হন। পদের জন্য, কমিটির জন্য লড়াই করবেন না। এখন লড়াই করতে হবে দেশকে রক্ষা করার জন্য। এটা সবচেয়ে বড় লড়াই।”
দেশে এখন ‘অসহনীয়’ পরিবেশ বিরাজ করছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে মসজিদে পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমি কিছুদিন আগে দেখেছিলাম, এখন আছে কি না জানি না, খুতবাও তারা (সরকার) নির্ধারণ করে দেবে। এর চেয়ে খারাপ কথা আর কী হতে পারে।
“কিছুদিন আগে দেখেছি, মসজিদে মসজিদে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে, কেন? আমি আমার ধর্ম পালন করবো-এটা আমার সাংবিধানিক অধিকার, স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করব। সেই খানে নিয়ন্ত্রণ মানেই হচ্ছে তারা সেখানেও নিয়ন্ত্রণ করছে।”
নানা বিভাজন সৃষ্টি করে সরকার সব ধর্মের মানুষের উপর নিপীড়ন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
“শুধু মুসলমানদের ওপর নির্যাতন করছে, তা নয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার করে তাদের উপাসনালয় ভেঙে দেয়, পূজাম-প ভেঙে দেয়, তাদের সম্পত্তি দখল করে, বৌদ্ধদের .. রামুতে দেখেছে সেখানে কী হয়েছে? রামুর প্যাগোডা তছনছ করে দিয়েছিল। এ সবে নেতৃত্ব দিয়েছিল ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগের লোকরা।
ফখরুল বলেন, “আজ প্রতি পদে পদে, প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতি খাতে এই সরকার দেশটাকে লুট করে বর্গীদের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, তাদের নেতা, তাদের বশংবদরা এদেশে লুট করে অর্থ বাইরে নিয়ে যাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “আজকে আমাদের দেশনেত্রী, গণতন্ত্রের মাতা, আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রেখেছে, আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রেখেছে, ৩৫ লক্ষের বেশি মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। এখন আরো ২০/২৫ হাজার মামলা যুক্ত হয়েছে এই কয়েকদিনের মধ্যে।
“এই মিথ্যা মামলা দিয়ে এখানে বিরোধী দলকে সম্পূর্ণভাবে দমন করবার জন্য তারা এই পু্লশি লেলিয়ে দিয়েছে। সরকার হুকুম না করলে পুলিশ কি কিছু করতে পারে। সম্পূর্ণ দায় শেখ হাসিনার, সম্পূর্ণ দায় সরকারের।”
দেশের শীর্ষ আলেম-উলামাদের কারাবন্দি করে রাখার সমালোচনাও করেন বিএনপি মহাসচিব।
উলামা দলের আহ্বায়ক শাহ নেছারুল হকের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম তালুকদার ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সেলিম রেজার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাসির উদ্দিন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরাফত আলী, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ বক্তব্য রাখেন।
COMMENTS