
এনএনবি ডেস্ক
আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের
লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাপক সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান সহিংস বিক্ষোভের পর এটি
হবে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশে প্রথম নির্বাচন।
তবে নির্বাচন আয়োজনের চেয়ে সংস্কার কার্যক্রম ও ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের
অনিয়ম, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন প্রধান
উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট, ২০২৫) মালয়েশিয়ার
কুয়ালালামপুরে সিএনএ টিভিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ অবস্থান তুলে
ধরেন।
ড. ইউনূস জানান, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত
করা তাঁর প্রধান দায়িত্ব। তিনি বলেন, `যদি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হয়, তাহলে এর
কোনো মূল্য নেই। আমার কাজ হলো একটি সুষ্ঠু, পরিচ্ছন্ন ও উৎসবমুখর নির্বাচন
আয়োজন করা।'
তিনি আরও বলেন, “আমরা লক্ষ্যপূরণের খুব কাছাকাছি। আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছিল
ত্রুটিপূর্ণ, যা অপব্যবহার ও বিকৃত করা হয়েছে—তাই ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন।”
তাঁর মতে, গণ-অভ্যুত্থয়ের সময় জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা পূরণের প্রতিশ্রুতি
দেওয়া হয়েছে তিনটি ধাপে—সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন।
নির্বাচন আগে নাকি সংস্কার আগে—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “যদি নির্বাচন দিয়েই শুরু
করি, তাহলে আর সংস্কার ও বিচার হবে না। তখন সবকিছু নির্বাচিতদের হাতে চলে যাবে,
এবং আমরা আবার সেই পুরোনো সমস্যায় ফিরে যাব।”
গত বছরের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের
অবসান দাবি করে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে স্বৈরতন্ত্র,
দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিরোধী মত দমনের অভিযোগ রয়েছে। আগস্টে পদত্যাগের
পর তিনি ভারতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে অনুপস্থিতিতেই তাঁর বিচার চলছে।
বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়নের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগও তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে, যা
ওই আন্দোলনে এক হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়।
বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ জানালেও এখনো কোনো
সাড়া মেলেনি, যা দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি করেছে। হাসিনা অনলাইনে তাঁর
সমর্থকদের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানালে
ঢাকা, নয়াদিল্লিকে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ বিবৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান
জানায়।
এ বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা হাসিনাকে ফেরত আনতে কোনো যুদ্ধে যাচ্ছি না।
আপনারা তাঁকে রাখতে পারেন, আমাদের বিচার চলবে। তবে এই সময়ে যেন তিনি বাংলাদেশে
অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির সুযোগ না পান—এটাই গুরুত্বপূর্ণ।’
শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ কৌশলগত ও অর্থনৈতিক
সম্পর্ক থাকলেও পর্যবেক্ষকদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিতে আঞ্চলিক
মিত্রতায় একটি পরিবর্তন এসেছে। গত মার্চে বেইজিং সফরে ড. ইউনূস চীনা
প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব তুলে
ধরেন। তিনি জানান, অর্থনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশ যে কোনো বিনিয়োগকারী দেশের
সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী—এটি শুধু চীনের জন্য বিশেষ সুবিধা নয়, ভারতসহ অন্যান্য
দেশের জন্যও সমানভাবে উন্মুক্ত।
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে, ভারতের সঙ্গেও
তা বজায় রাখতে চাই। এটি বিনিয়োগ ও ব্যবসার নিরপেক্ষ ক্ষেত্র, যেখানে সবাই সমান
সুযোগ পাবে।’
COMMENTS