হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম
অফিসের কাউকে তোয়াক্কা না করেই রাজার হালে অফিস করছেন কুড়িগ্রাম পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় অফিসের উপপরিচালক ডা. মোদাব্বের হোসেন। অফিসকেই বানিয়েছেন বাসা। সেখানে রয়েছে থাকা ও খাওয়ার সুব্যবস্থা। অফিস সহায়ক দাপ্তরিক কাজ ফেলে করছেন রান্নাবান্না। এমন বেহাল অবস্থা কুড়িগ্রাম পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় অফিসের। আওয়ামীলীগের সুবিধভোগী এই কর্মকর্তা শুধু নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। অনিয়মের ব্যাপারে সাংবাদিকদের তোয়াক্কা না করে বলেন, যান যা পারেন করেন।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের দুপুরের খাবারের জন্য অফিস সহায়ক নুরজাহান বেগম সরকারি কাজ বাদ দিয়ে অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য রান্না করছেন। সেখানে রাইচ কুকার, ইনডাকশন চুলাসহ হাঁড়ি-পাতিল রয়েছে। পাশের কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় একটি বিছানা, চেয়ার, আলনাসহ রয়েছে ব্যবহার্য অন্যান্য সামগ্রী। অফিস সহকারী জেসি আকতারের বসার কক্ষের পাশেও রয়েছে বিছানা বিশ্রাম নেবার। দীর্ঘদিন ধরে এই অফিসে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত চলে আসছে। এমন অনিয়মের আস্তানা শুরু হয়েছে কার্যালয়ের উপপরিচালক মোদাব্বের হোসেন ২০২২সালে যোগদানের পর থেকে। তিনি যোগদান করার পর থেকে কার্যালয়কে বানিয়েছেন তার বাসভবন। সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই অফিস কক্ষে রাত্রি যাপন করেন।
এছাড়াও উপপরিচালকের বিরুদ্ধে রয়েছে বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ। ইউনিয়ন পর্যায় কর্মচারীদের আকস্মিকভাবে কর্মস্থল থেকে অন্যত্র বদলি করা হয়। আবার মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে পুনরায় পূর্বের কর্মস্থলে পুনরায় বদলি করা হয়। যারা উপপরিচালকের সাথে সমঝোতায় আসে না তাদেরকে শাস্তি স্বরূপ বাইরের জেলায় বদলি করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায় কুড়িগ্রাম জেলায় ২০২২সালে ফ্যামিলি ওয়েল ফেয়ার অ্যাসিসটেন্ট পদে নিয়োগ বাণিজ্য করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেবার অভিযোগও রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তিনি উপপরিচালক পদে থাকাকালীন অবস্থায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়েরও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আমলে ভারতে পাচার কালে বিজিবির হাতে পরিবার পরিকল্পনার সরকারি ঔষধ ধরারও ঘটনা ঘটেছে এ জেলায়। সরকারি গাড়ি সে পারিবারিক কাজে ব্যবহার করে সরকারি পরিদর্শন দেখানোসহ বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাফর আলীর সই করা ২০২২সালের ২৯ অক্টোবর সুপারিশ করা হয়। তারা হলেন, যাত্রাপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মাহফুজা আকতার রোল নং-১২০৭০৮৯৩, দুর্গাপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সুমাইয়া আকতার শিমু রোল নং-১২০৭২১১২,কুড়িগ্রাম পৌরসভা ২নং ওয়ার্ডের কাকলী আকতার রোল নং-১২০৭১১২১,হাতিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের শেখ আয়শা সিদ্দিকা আশা রোল নং-১২০৭২১৪৯, মোগলবাসা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের তাসবিন নাহার তানবিন রোল নং-১২০৭০৯৬৪। তারা সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য হলেও সুপারিশ মালায় গরিব অসহায় দেখানো হয়েছে। এই তালিকার চার জনেরই চাকুরি হয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদেরকে মৌখিক পরীক্ষার প্রশ্ন হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন। উপপরিচালক মোদাব্বের হোসেনের হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ আদান প্রদানের তথ্যে প্রমাণ পাওয়ায় যায়।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বদলির ভুক্তভোগী জানান,বর্তমান ডিডি যোগদানের পর থেকে কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই কর্মস্থল থেকে বদলি করান। কেউ মাতৃত্ব ছুটি কেউবা সাময়িক ছুটিতে থাকাবস্থাতেও বদলির স্বীকার হয়েছে। পুনরায় আগের কর্মস্থলে বদলি নিতে গেলে ৫০হাজার থেকে এক লাখ টাকা ঘুষ নেন। যারা বদলির ব্যাপারে প্রতিবাদ করেছেন তাদেরকে জেলার বাইরে বদলি করিয়েছেন। আর তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে বা অভিযোগ দিতে সাহস পায় না। কারণ তার বন্ধু রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ডা: কামাল আহমেদসহ মন্ত্রণালয়ের অনেকেই তার শুভাকাঙ্ক্ষী, ডিডি সাহেবের অনিয়মের প্রধান সহকারী জেলা অফিসের সহকারী পরিচালক পদে প্রায় ১৪বছর ধরে থাকা ডা: মনজুর রহমান। সঠিক তদন্ত হলে ডিডির অপকর্মের ফিরিস্তি উঠে আসবে।
ফ্যামিলি ওয়েল ফেয়ার অ্যাসিসটেন্ট কাকলী আকতার বলেন,আমার যোগ্যতায় চাকুরি হয়েছে। তালিকায় নাম থাকার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,আপনাকে কোন জবাব দিতে বাধ্য নই আমি।
কুড়িগ্রাম পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়য়ের উপপরিচালক মোদাব্বের হোসেন ঔদ্ধত্য আচরণ করে বলেন, রান্না করে খাওয়া এবং থাকার ব্যবস্থা আছে। কোনো বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্য হয় না। আপনারা নিউজ করেন। কোনো সমস্যা নেই।
কুড়িগ্রাম সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু বলেন,সরকারি আইন অনুযায়ী কোন কর্মকর্তা অফিসে থাকা ও রান্না করার ব্যবস্থা নিয়মবহির্ভূত। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজের খোলস পরিবর্তন করে। ফলে সরকারের নাগরিক সেবা বঞ্চিত হয়ে আসছে এই অঞ্চলের মানুষ।
COMMENTS