খোরশেদ আলম, সাভার
"ভাই, আমি মরি নাই, কেউ যদি আমার অজান্তে কাগজে কলমে মাইরা ফালায়, তবে আমার কি বা করার আছে। আমারে যে মরা দেখাইয়া মামলা করছে আমার বৌ তা আমি জানতাম না, যখন শুনলাম তখন ভয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছি।
তিনি আরো বলেন, নিজের স্ত্রী যদি স্বামীকে মৃত বানিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন তবে সে স্বামী জীবনের সবচেয়ে দুর্ভাগা।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ভোরে সিলেট মেট্রোপলিটন দক্ষিণ সুরমা থানার একটি কক্ষে বসে এই প্রতিবেদক এর কাছে এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন, আশুলিয়া থানার হত্যা মামলায় দেখানো নিহত আল আমিন।
পুলিশ জানান, ছাত্র জনতার আন্দোলনে আশুলিয়া থানায় যে হত্যাযজ্ঞ হয়, সেখানকার একজনের পরিচয় ছিল অজানা। সেই অজ্ঞাতকেই নিজের স্বামী আল আমিন দাবী করেন কুলসুম নামের এক নারী। ২৪ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'সহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার বিজ্ঞ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন ঐ নারী। পরে সেটি ৮ নভেম্বর আশুলিয়া থানায় তা এজাহারভুক্ত হয়।
তবে পরবর্তীতে কুলসুমের আচরণে সন্দেহ হওয়ায় অনুসন্ধান নামে যমুনা এবং ঢাকা প্রতিদিনসহ কয়েকটি গণমাধ্যম। বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। কুলসুমের স্বামী সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থান এলাকায় অবস্থান করছেন এমন তথ্যের পর র্যাবের সহায়তা চাইলে আল আমিনের ভাইয়ের খোঁজ পায় । তার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হন মামলায় মৃত দেখানো আল আমিন বেঁচে আছে।
ভূক্তভোগী আল আমিনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভাই আমার বেঁচে আছে। সে গত তিন দিন আগে আমাকে বলেছে মামলার বিষয়টি।
আমরা সহ আল আমিন থানায়ও গিয়ে ছিলাম, কিন্তু তারা কোন সমাধানের পথ দেখাতে পারিনি। তাই ভয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছে। যখন র্যাব বিষয়টি জানতে পারে তখনই ভাইকে দক্ষিণ সুরমা থানা আসতে বলি।
কথা বলতে বলতে বাবার সঙ্গে থানার ভেতরে প্রবেশ করেন ভুক্তভোগী আল আমিন। সেখানেই একটি কক্ষে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি হেঁসে হেঁসে বলেন আমি মরিনি। আমি বেঁচে আছি। বাদী কুলসুমের ছবি দেখে নিশ্চিত করেন ছবির মানুষটি মামলার বাদি ও তার স্ত্রী। এরপর জানান একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
আল আমিন বলেন, বাবা মার অবাধ্য হয়ে মোবাইলের কথার সূত্র ধরে ভালবেসে বিয়ে করি কুলসুমকে। গত কয়েক মাস ধরে পারিবারিক কলহ বেড়ে যাওয়ায় সময়টা ভাল যাচ্ছিলো না। দেশের গন্ডগোলের পুরোটা সময় আমি ও আমার স্ত্রী সিলেটের জুড়িতে অবস্থান করেছি। সে সময় আশুলিয়াতে একবারের জন্যও যায়নি। অথচ আমাকে মৃত দেখিয়ে মিথ্যা মামলা করেছেন আমার স্ত্রী।
জীবিত ছেলেকে মৃত দেখিয়ে মামলার ঘটনায় হতবাক আল আমিনের বাবা নুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এমনটা হওয়ায় আল আমিনসহ পুরো পরিবার এখন আতঙ্কগ্রস্থ। এমনটি কেন ছেলের বৌ কুলসুম করেছে তা মাথায়ও আসছে না। বিষয়টি নিয়ে কুলসুম কোন কথাও বলছেন না।
আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানাকে আল আমিনকে উদ্ধারের বিষয়টি জানালে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাকিব সিলেটে গিয়েছেন। তাকে উদ্ধারের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
COMMENTS