মো. মোরশেদ আলম, গাজীপুর
দেশের পোশাক খাতের কেন্দ্রস্থল গাজীপুর বারবার উত্তাল হচ্ছে শ্রমিক অসন্তোষে। বকেয়া বেতন, মালিকদের অনুপস্থিতি, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন—সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতি কেবল শ্রমিকদের জীবনে নয়, পুরো অর্থনীতির উপরও প্রভাব ফেলছে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নতুন করে এই সংকটকে সামনে এনেছে।
শ্রমিকদের ভাষ্য: গাজীপুর মহানগরের মালেকের বাড়ি এলাকার টিএনজেড গ্রুপের পোশাক কারখানার শ্রমিক আলী হোসেন বললেন, "প্রতিবারই আন্দোলন ছাড়া বেতন আদায় সম্ভব হয় না।" শ্রমিক রাহেলা খাতুন যোগ করলেন, "আগে আন্দোলনে মালিকপক্ষ সমাধানে আসতো, কিন্তু এখন অনেক মালিক পালিয়ে যায়। প্রশাসনেরও আগের মতো ভূমিকা নেই।"
শ্রমিকরা জানান, বেশিরভাগ কারখানায় বেতন বকেয়া থাকা পুরোনো সমস্যা। মালিকদের মধ্যে অনেকেই ব্যবসা ভালো থাকা সত্ত্বেও সময়মতো বেতন দেন না। খারাপ সময় হলে তো আন্দোলন ছাড়া বিকল্পই থাকে না। আগে প্রশাসনের সক্রিয়তায় সমাধান মিলত, কিন্তু এখন প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে আন্দোলন দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
মহাসড়ক অবরোধ ও এর প্রভাব: গত শনিবার সকাল থেকে টিএনজেড গ্রুপের পাঁচ কারখানার প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক টানা ৬০ ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এর ফলে গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবন। আন্দোলনের ফলে উত্তরবঙ্গ ও ময়মনসিংহ বিভাগের ২২ জেলার যানবাহন চলাচলে বিশাল ভোগান্তি হয়।
এক ট্রাকচালক আক্কাস আলী বলেন, "মালিক-শ্রমিকদের আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা উচিত। মহাসড়ক বন্ধ থাকলে আমাদের পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়।" সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতিদিন গাজীপুরের মহাসড়কে ৬০-৬৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে।
মালিকপক্ষ ও প্রশাসনের বক্তব্য: তুসুকা গ্রুপের পরিচালক তারিকুল হাসান বলেন, "শ্রমিকরা সকালে শান্ত থাকলেও বিকেলে আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। তৃতীয় কোনো পক্ষ উসকানি দিচ্ছে।"
বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের গাজীপুর শাখার সভাপতি জিয়াউল করিম খোকন বলেন, "সরকারের পরিবর্তনের ফলে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়েছে। কিছু কারখানায় মালিকানা দ্বন্দ্ব এবং তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে শ্রমিকরা মাঠে নামছে।"
গাজীপুর কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ২,৬৩৩টি নিবন্ধিত শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকলেও বাস্তবে সংখ্যাটি ৪ হাজারেরও বেশি।
উৎসাহ এবং অভিযোগ: পুলিশ এবং মালিকপক্ষের অভিযোগ, শ্রমিকদের এই আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ সক্রিয়। তারা শ্রমিকদের উসকে দিচ্ছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের বেতন সরকার পরিশোধ করায় অন্য মালিকদের মধ্যে ধারণা জন্মেছে যে সরকারই শেষমেশ দায়িত্ব নেবে।
সরকারের ভূমিকা: শ্রম সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, টিএনজেড গ্রুপের চেয়ারম্যানের সম্পদ বন্ধক রেখে ৬ কোটি টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হয়েছে। তবে, শ্রমিকদের অভিযোগ, সরকার শুরুতেই হস্তক্ষেপ করলে জনদুর্ভোগ এড়ানো যেত।
টিএনজেড গ্রুপের পরিচালক রিমান্ডে: গাজীপুরের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত টিএনজেড গ্রুপের পরিচালক আব্দুল হালিমের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। বৃহস্পতিবার, ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাঁকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। অভিযোগ, গ্রুপের পাঁচ কারখানার শ্রমিকদের উসকে ৬০ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি এবং ৬৩ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার রাতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে চট্টগ্রামের হালিশহর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া আব্দুল হালিমের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে। টিএনজেড গ্রুপের এক কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ শ্রমিকদের বেতনের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন। অপর মামলাটি করেছে পুলিশ, যেখানে মহাসড়ক অবরোধ, কারখানা ভাঙচুর, জানমালের ক্ষতি এবং জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এইচডিএফ অ্যাপারেলসের শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ: বকেয়া বেতন এবং কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন এইচডিএফ অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা। সকাল থেকেই তারা কাওরাইদ অভিমুখী সড়ক অবরোধ করেন, যা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এতে সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় এবং যাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন।
গাজীপুর নাগরিক কমিটির সভাপতি জুলীয়াস চৌধুরী বলেন, গাজীপুরের শ্রমিক অসন্তোষ একটি বহুস্তরীয় সংকটের প্রতিফলন। বকেয়া বেতন, মালিকদের অনুপস্থিতি, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। আন্দোলনের ফলে শ্রমিকদের যেমন আর্থিক নিরাপত্তার প্রশ্ন জাগছে, তেমনি ব্যবসা হারিয়ে মালিকপক্ষও বিপর্যস্ত। এই সংকট সমাধানে সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও মালিক-শ্রমিক আলোচনা জরুরি। অন্যথায়, এই সমস্যা কেবল গাজীপুর নয়, পুরো দেশের পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎকেই হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
তিনি বলেন, এ আন্দোলন শ্রমিক অসন্তোষের নতুন একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে, যা শিল্পাঞ্চলগুলোতে সড়ক অবরোধের মতো চরমপন্থা অবলম্বনের প্রবণতা আরও স্পষ্ট করে তুলছে।
দেশের পোশাক খাতের কেন্দ্রস্থল গাজীপুর বারবার উত্তাল হচ্ছে শ্রমিক অসন্তোষে। বকেয়া বেতন, মালিকদের অনুপস্থিতি, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন—সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতি কেবল শ্রমিকদের জীবনে নয়, পুরো অর্থনীতির উপরও প্রভাব ফেলছে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নতুন করে এই সংকটকে সামনে এনেছে।
শ্রমিকদের ভাষ্য: গাজীপুর মহানগরের মালেকের বাড়ি এলাকার টিএনজেড গ্রুপের পোশাক কারখানার শ্রমিক আলী হোসেন বললেন, "প্রতিবারই আন্দোলন ছাড়া বেতন আদায় সম্ভব হয় না।" শ্রমিক রাহেলা খাতুন যোগ করলেন, "আগে আন্দোলনে মালিকপক্ষ সমাধানে আসতো, কিন্তু এখন অনেক মালিক পালিয়ে যায়। প্রশাসনেরও আগের মতো ভূমিকা নেই।"
শ্রমিকরা জানান, বেশিরভাগ কারখানায় বেতন বকেয়া থাকা পুরোনো সমস্যা। মালিকদের মধ্যে অনেকেই ব্যবসা ভালো থাকা সত্ত্বেও সময়মতো বেতন দেন না। খারাপ সময় হলে তো আন্দোলন ছাড়া বিকল্পই থাকে না। আগে প্রশাসনের সক্রিয়তায় সমাধান মিলত, কিন্তু এখন প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে আন্দোলন দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
মহাসড়ক অবরোধ ও এর প্রভাব: গত শনিবার সকাল থেকে টিএনজেড গ্রুপের পাঁচ কারখানার প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক টানা ৬০ ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এর ফলে গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবন। আন্দোলনের ফলে উত্তরবঙ্গ ও ময়মনসিংহ বিভাগের ২২ জেলার যানবাহন চলাচলে বিশাল ভোগান্তি হয়।
এক ট্রাকচালক আক্কাস আলী বলেন, "মালিক-শ্রমিকদের আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা উচিত। মহাসড়ক বন্ধ থাকলে আমাদের পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়।" সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতিদিন গাজীপুরের মহাসড়কে ৬০-৬৫ হাজার যানবাহন চলাচল করে।
মালিকপক্ষ ও প্রশাসনের বক্তব্য: তুসুকা গ্রুপের পরিচালক তারিকুল হাসান বলেন, "শ্রমিকরা সকালে শান্ত থাকলেও বিকেলে আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। তৃতীয় কোনো পক্ষ উসকানি দিচ্ছে।"
বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের গাজীপুর শাখার সভাপতি জিয়াউল করিম খোকন বলেন, "সরকারের পরিবর্তনের ফলে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়েছে। কিছু কারখানায় মালিকানা দ্বন্দ্ব এবং তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে শ্রমিকরা মাঠে নামছে।"
গাজীপুর কলকারখানা ও পরিদর্শন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ২,৬৩৩টি নিবন্ধিত শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকলেও বাস্তবে সংখ্যাটি ৪ হাজারেরও বেশি।
উৎসাহ এবং অভিযোগ: পুলিশ এবং মালিকপক্ষের অভিযোগ, শ্রমিকদের এই আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ সক্রিয়। তারা শ্রমিকদের উসকে দিচ্ছে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের বেতন সরকার পরিশোধ করায় অন্য মালিকদের মধ্যে ধারণা জন্মেছে যে সরকারই শেষমেশ দায়িত্ব নেবে।
সরকারের ভূমিকা: শ্রম সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, টিএনজেড গ্রুপের চেয়ারম্যানের সম্পদ বন্ধক রেখে ৬ কোটি টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হয়েছে। তবে, শ্রমিকদের অভিযোগ, সরকার শুরুতেই হস্তক্ষেপ করলে জনদুর্ভোগ এড়ানো যেত।
টিএনজেড গ্রুপের পরিচালক রিমান্ডে: গাজীপুরের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত টিএনজেড গ্রুপের পরিচালক আব্দুল হালিমের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। বৃহস্পতিবার, ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাঁকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। অভিযোগ, গ্রুপের পাঁচ কারখানার শ্রমিকদের উসকে ৬০ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি এবং ৬৩ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার রাতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে চট্টগ্রামের হালিশহর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া আব্দুল হালিমের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে। টিএনজেড গ্রুপের এক কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ শ্রমিকদের বেতনের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন। অপর মামলাটি করেছে পুলিশ, যেখানে মহাসড়ক অবরোধ, কারখানা ভাঙচুর, জানমালের ক্ষতি এবং জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এইচডিএফ অ্যাপারেলসের শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ: বকেয়া বেতন এবং কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন এইচডিএফ অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা। সকাল থেকেই তারা কাওরাইদ অভিমুখী সড়ক অবরোধ করেন, যা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এতে সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় এবং যাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন।
গাজীপুর নাগরিক কমিটির সভাপতি জুলীয়াস চৌধুরী বলেন, গাজীপুরের শ্রমিক অসন্তোষ একটি বহুস্তরীয় সংকটের প্রতিফলন। বকেয়া বেতন, মালিকদের অনুপস্থিতি, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। আন্দোলনের ফলে শ্রমিকদের যেমন আর্থিক নিরাপত্তার প্রশ্ন জাগছে, তেমনি ব্যবসা হারিয়ে মালিকপক্ষও বিপর্যস্ত। এই সংকট সমাধানে সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও মালিক-শ্রমিক আলোচনা জরুরি। অন্যথায়, এই সমস্যা কেবল গাজীপুর নয়, পুরো দেশের পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎকেই হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
তিনি বলেন, এ আন্দোলন শ্রমিক অসন্তোষের নতুন একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে, যা শিল্পাঞ্চলগুলোতে সড়ক অবরোধের মতো চরমপন্থা অবলম্বনের প্রবণতা আরও স্পষ্ট করে তুলছে।
COMMENTS