জুলীয়াস চৌধুরী
২০১২ সালে শুরু হওয়া গাজীপুর-বিমানবন্দর সড়কের বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প যানজট নিরসনের স্বপ্ন দেখিয়ে ছিল। কিন্তু প্রকল্পটির কাজ শুরুর এক দশক পর দেখা যাচ্ছে, এটি হয়ে উঠেছে নতুন এক দুঃস্বপ্ন। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়া, ভুল পরিকল্পনা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এই সড়কের যানজট ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিস্থিতি কতটা জটিল এবং কেন এই প্রকল্প এখন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটাই জানব বিস্তারিতভাবে।
বিআরটি প্রকল্পটি যানজট নিরসনের পরিবর্তে আরও জটিলতা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সঠিক পরিকল্পনা, নকশা এবং ব্যবস্থাপনার অভাবে এই প্রকল্পটি আশানুরূপ সুফল দিতে ব্যর্থ হতে পারে। এখন প্রশ্ন উঠছে, এর ভবিষ্যৎ কী হবে এবং কতটা কার্যকরভাবে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব?
২০১২ সালে শুরু হওয়া গাজীপুর-বিমানবন্দর সড়কের বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প যানজট নিরসনের স্বপ্ন দেখিয়ে ছিল। কিন্তু প্রকল্পটির কাজ শুরুর এক দশক পর দেখা যাচ্ছে, এটি হয়ে উঠেছে নতুন এক দুঃস্বপ্ন। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়া, ভুল পরিকল্পনা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এই সড়কের যানজট ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিস্থিতি কতটা জটিল এবং কেন এই প্রকল্প এখন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটাই জানব বিস্তারিতভাবে।
প্রকল্পের শুরু ও বর্তমান অবস্থা
গাজীপুর-বিমানবন্দর মহাসড়কে যানজট নিরসনের লক্ষ্য নিয়ে ২০১২ সালে শুরু হয় বিআরটি প্রকল্পের কাজ। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের একটি অংশে নির্ধারিত লেনের মাধ্যমে দ্রুতগামী বাস সেবা চালু করা। বর্তমানে প্রকল্পটির বেশিরভাগ ভৌত কাজ শেষ হলেও যানজট কমার পরিবর্তে বরং বেড়েছে। ব্যস্ত সময়ে এই করিডোরের ২০ কিলোমিটার পার হতে সময় লেগে যাচ্ছে ২-৩ ঘণ্টা, কখনো আরও বেশি।বিআরটি লেনের সমস্যা
বিআরটি প্রকল্পের আওতায় সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করা হলেও এর মাঝের দুই লেন শুধুমাত্র বিআরটির বাসগুলোর জন্য নির্ধারিত। বর্তমানে পরিষেবা চালু না হওয়ায় সব লেনেই যানবাহন চলাচল করছে। কিন্তু যখন এই লেনগুলো শুধুমাত্র বিআরটি বাসের জন্য সংরক্ষিত হবে, তখন সড়কের যানজট পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকার অন্যতম প্রধান প্রবেশদ্বার হিসেবে বিমানবন্দর-গাজীপুর মহাসড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। এই মহাসড়কে রয়েছে প্রচুর কলকারখানা, যেখান থেকে প্রতিদিন ভারী যানবাহন চলাচল করে। এছাড়াও আন্তঃজেলা পরিবহন এবং পথচারীদের চলাচল—সবকিছু মিলে সড়কটি সবসময় চাপের মধ্যে থাকে।স্টেশন ঘিরে জটিলতা
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের সবচেয়ে জটিল অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে বিআরটির স্টেশনগুলোর আশেপাশে। ২৫টি স্টেশনের মধ্যে মাটিতে থাকা ১৮টি স্টেশনে প্রতিনিয়ত যানজট দেখা যাচ্ছে। স্টেশনগুলোর কাছাকাছি এলাকায় রাস্তা সংকুচিত হওয়ায় যান চলাচল হয় ধীরগতিতে, যা যানজটকে আরও বাড়িয়ে তোলে।ভুল নকশা ও পরিকল্পনা
পরিবহন বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক মনে করেন, বিআরটি প্রকল্পের নকশায় মৌলিক ভুল রয়েছে। স্টেশনগুলো বানাতে গিয়ে সড়ক সংকুচিত হওয়ায় যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করিডোরের সার্ভিস লেনের প্রস্থ মাত্র সাত মিটার হলেও স্টেশন এলাকাগুলোতে তা ছয় মিটারে নেমে এসেছে, যা যান চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত নয়।বিনিয়োগকারীদের সরে যাওয়া
বিআরটি প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছে নানা সন্দেহ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), প্রকল্পটির প্রধান বিনিয়োগকারী, ইতিমধ্যে তাদের সম্পৃক্ততা থেকে সরে গেছে। একইভাবে, প্রকল্পের উপদেষ্টা হিসেবে থাকা বুয়েট এবং ভারতের SEPT ইউনিভার্সিটিও নিজেদের প্রত্যাহার করেছে। প্রকল্পটির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং এটি চালু হলে কেবল অর্থের অপচয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা নিয়ে মতপার্থক্য
বিআরটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন পর্যায়ে এসে অনেক বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিচ্ছেন করিডোরটি সব ধরনের যানবাহনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার। অধ্যাপক সামছুল হক বলেছেন, নতুনভাবে বিনিয়োগ করার আগে প্রকল্পটির কার্যকারিতা রিভিউ করা উচিত। তবে, ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলছেন, নকশায় পরিবর্তন আনা এখন আর সম্ভব নয়। জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই সড়ক প্রশস্ত করা সম্ভব নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।বিআরটি প্রকল্পটি যানজট নিরসনের পরিবর্তে আরও জটিলতা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সঠিক পরিকল্পনা, নকশা এবং ব্যবস্থাপনার অভাবে এই প্রকল্পটি আশানুরূপ সুফল দিতে ব্যর্থ হতে পারে। এখন প্রশ্ন উঠছে, এর ভবিষ্যৎ কী হবে এবং কতটা কার্যকরভাবে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব?
COMMENTS