
শাহীন রহমান
এনএনবি, পাবনা
পাবনা জেলায় সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার ঐতিহ্যবাহী বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র গৌরবময় শতবর্ষ পূর্ণ করেও অসামান্য অবদান রেখে চলছে।
পাবনা শহরের প্রাণকেন্ত্রে অবস্থিত বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রে নিয়মিত মঞ্চস্থ হয় নানা অনুষ্ঠান। সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারায় প্রশিক্ষণসহ সংগঠনগুলোকে আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান।
গত ৫ মার্চ পাবনার জেলার সাংস্কৃতিক চর্চার বাতিঘর বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূর্ণ করেছে। দীর্ঘ এই পথচলায় গর্বিত জেলার সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চায় পাবনা জেলার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এই জেলায় জন্মেছেন বহু গুণী শিল্পী, কবি ও সাহিত্যিক। রয়েছে নাটক, সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তিচর্চার একাধিক সক্রিয় সংগঠন। মিলনায়তনের ব্যবস্থা করে জেলায় সংস্কৃতিচর্চার সেই ধারা সক্রিয় রেখেছে শহরের বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র।
এনএনবি, পাবনা
পাবনা জেলায় সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার ঐতিহ্যবাহী বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র গৌরবময় শতবর্ষ পূর্ণ করেও অসামান্য অবদান রেখে চলছে।
পাবনা শহরের প্রাণকেন্ত্রে অবস্থিত বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রে নিয়মিত মঞ্চস্থ হয় নানা অনুষ্ঠান। সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারায় প্রশিক্ষণসহ সংগঠনগুলোকে আর্থিক প্রণোদনা দিচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান।
গত ৫ মার্চ পাবনার জেলার সাংস্কৃতিক চর্চার বাতিঘর বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূর্ণ করেছে। দীর্ঘ এই পথচলায় গর্বিত জেলার সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক চর্চায় পাবনা জেলার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এই জেলায় জন্মেছেন বহু গুণী শিল্পী, কবি ও সাহিত্যিক। রয়েছে নাটক, সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তিচর্চার একাধিক সক্রিয় সংগঠন। মিলনায়তনের ব্যবস্থা করে জেলায় সংস্কৃতিচর্চার সেই ধারা সক্রিয় রেখেছে শহরের বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকাল ও পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, পাবনার জমিদার রায়বাহাদুর বনমালী রায়ের দুই ছেলে ক্ষীতিশ রায় ও রাধিকা রায় সংস্কৃতিমনা ছিলেন। তাঁরাই সংস্কৃতি চর্চার প্রসার ও প্রেরণা দিতে ১৯২৪ সালের ৫ মার্চ তাঁদের বাবার নামে প্রতিষ্ঠা করেন বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র। ৩৯ শতাংশ জমির ওপর তৈরি হয় বিশাল মিলনায়তন। তখন এর নাম ছিল বনমালী রঙ্গমঞ্চ। পরে করা হয় বনমালী ইনস্টিটিউট। যার বর্তমান নাম বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
একপর্যায়ে পুরনো মিলনায়তনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়। ২০০৯ সালে সরকারি উদ্যোগে মিলনায়তন সংস্কার শুরু হয়। তখন এটিকে বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবাদ জানান স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী ও সুধীজনেরা। নিজেদের অর্থায়নে মিলনায়তনটি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উপযোগী করেন। গড়ে তোলা হয় আধুনিক সুবিধা-সংবলিত মিলনায়তন হিসেবে। এ সময় নতুন করে এর নামকরণ করা হয় বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র।
একপর্যায়ে পুরনো মিলনায়তনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়। ২০০৯ সালে সরকারি উদ্যোগে মিলনায়তন সংস্কার শুরু হয়। তখন এটিকে বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবাদ জানান স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী ও সুধীজনেরা। নিজেদের অর্থায়নে মিলনায়তনটি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উপযোগী করেন। গড়ে তোলা হয় আধুনিক সুবিধা-সংবলিত মিলনায়তন হিসেবে। এ সময় নতুন করে এর নামকরণ করা হয় বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র।

প্রতিষ্ঠানটি সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত কমিটি দিয়ে পরিচালিত হয়। বর্তমানে ত্রি-বার্ষিক এ কমিটির সভাপতি স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মো. হাবিবুল্লাহ।
মো. হাবিবুল্লাহ জানান, এখানে নিয়মিত অভিনয়, আবৃত্তি, সংগীত ও নৃত্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন বয়সী ছেলেমেয়েরা এখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিয়মিত বিভিন্ন প্রযোজনা করা হচ্ছে। অন্য সংগঠনগুলোর জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ।
মো. হাবিবুল্লাহ জানান, এখানে নিয়মিত অভিনয়, আবৃত্তি, সংগীত ও নৃত্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন বয়সী ছেলেমেয়েরা এখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিয়মিত বিভিন্ন প্রযোজনা করা হচ্ছে। অন্য সংগঠনগুলোর জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ।

এখানে অনুষ্ঠান করার জন্য মিলনায়তনের ভাড়া দিতে হয় না, বরং সংগঠনগুলোকে প্রণোদনা হিসেবে নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের আগে চারদিন স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, মাইকিং, বিলবোর্ড স্থাপন, মিলনায়তনের সাজসজ্জা, লিফলেট ছাপা, মঞ্চ ব্যবস্থাপনা সব করে দেওয়া হয়। ফলে সংগঠনগুলোকে বাড়তি চাপ নিতে হয় না।
বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের সভাপতি ও স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী বলেন, দেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। শতবর্ষের এই পথচলায় বনমালীতে বহু গুণী ব্যক্তির পদচারণা পড়েছে। দেশের বহু খ্যাতনামা সংগঠন ও শিল্পী এখানে নাটকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেছেন। জেলার সাংস্কৃতিক চর্চায় এটি মাইলফলক। আগামী দিনেও বনমালীর এই ধারা অব্যাহত রাখবে।
বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্রের সভাপতি ও স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী বলেন, দেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। শতবর্ষের এই পথচলায় বনমালীতে বহু গুণী ব্যক্তির পদচারণা পড়েছে। দেশের বহু খ্যাতনামা সংগঠন ও শিল্পী এখানে নাটকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেছেন। জেলার সাংস্কৃতিক চর্চায় এটি মাইলফলক। আগামী দিনেও বনমালীর এই ধারা অব্যাহত রাখবে।

১৯৪৯ সালে এক সঙ্গীতানুষ্ঠানে এসেছিলেন দেশবরেণ্য গায়ক আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদ। বনমালী মঞ্চে ১৯৯৬ সালে দেড় মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় উপমহাদেশের অন্যতম বড় নাট্যোৎসব। দেশের ৩৬টি নাট্য সংগঠন এখানে নাটক মঞ্চস্থ করে। বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র নিজস্ব শিল্পীদের অংশ গ্রহণে এ পর্যন্ত দু’সহস্রাধিক নাটক মঞ্চস্থ করেছে। এছাড়া নিজস্ব প্রযোজনায় অসংখ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। প্রতিষ্ঠানের প্রযোজিত ‘সীতা’ নাটকে অভিনয় করতে কলকাতা থেকে এসেছিলেন চলচ্চিত্র জগতের শক্তিমান অভিনেতা ছবি বিশ্বাস, রবি রায়, মমতা ব্যানার্জী প্রমুখ। বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেনও একাধিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালে বনমালীর উদ্যোগে ৩৩টি নাট্যসংগঠনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় আন্তঃজেলা নাট্যোৎসব। ১৯৪৯ সালে পাবনার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মাহাতাব উদ্দিন সরকারের উদ্যোগে এখানে মঞ্চস্থ হয় নাটক সিরাজদ্দৌলা। সিরাজ চরিত্রে অভিনয় করেন শিল্পী তেজেন চক্রবর্তী, আলেয়া চরিত্রে অভিনয় করেন নিশিকান্ত বকশী। দেশবরেণ্য কবি-সাহিত্যিক ডা. মাযহারুল ইসলাম, ড. আবুহেনা মোস্তফা কামাল, কবি বন্দে আলী মিয়া, সৈয়দ শামছুল হক, কবির চৌধুরী, কবি শামসুর রাহমান, বদরুদ্দিন উমর, নির্মলেন্দু গুণ, কামাল লোহানী, গীতিকার গৌরী প্রসন্ন মজুমদার, শান্তি নিকেতনের অধ্যক্ষ ড. শৈলজারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, কবি সুফিয়া কামাল, সুপ্রিয়া বারী, মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ, হাসান আজিজুর হক, ড. আব্দুল খালেক, জুলফিকার মতিন, নাজিম মাহমুদ প্রমুখ। নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বারীণ মজুমদার, জগন্ময় মিত্র, অহীন্দ্র চৌধুরী, ফেরদৌসী রহমান, নিত্য গোপাল জোয়ার্দার, বুলবুল চৌধুরী, পিলু মমতাজ, তপন চৌধুরী, আব্দুল জব্বার, ফরিদা ইয়াসমিন, ওস্তাদ ইয়াছিন খান, আমজাদ হোসেন, আনোয়ারা, আনোয়ার হোসেন, ডলি জহুর, হুমায়ুন ফরীদী, সুবর্ণা মোস্তফা, পিযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাইসুল ইসলাম আসাদ, মামুনুর রশিদ, আলী যাকের, রামেন্দু মজুমদার, ড. এনামুল হক, মাসুম আজিজসহ দেশের অগণিত শিল্পী-কুশলীগণ বনমালীতে এসে এ প্রতিষ্ঠানকে মহিমান্বিত করেছেন।

শতবর্ষ পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে বছরব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে বনমালী শিল্পকলা কেন্দ্র। অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে শত বছরের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনী, সুধী সমাবেশ, সুভ্যেনির প্রকাশ, নাটক, আবৃত্তি, নৃত্য ও সংগীত অনুষ্ঠান।
COMMENTS