রংপুরের বিএমডিএ' র পুকুর ও নদী খননেন ফলে সুবিধা পাচ্ছে অসহায় ভূমিহীন, জেলে পল্লী সহ মৎস্যজীবীর লোকজন। তারা পুকুরে হাঁস পালন, মাছ ও সবজি চাষ করে বিপ্লব ঘটাবে বলে বগেরবাড়ী আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দা তবারক আলী জানান, এছাড়াও বরেন্দ্র কতৃপক্ষ পুকুর খননের মাধ্যমে আমরা এখন অনেক সুবিধা পাবোই পুকুরের পানি সেচ কাজেও ব্যবহার করতে পারবো।
নদী খননের ফলে রংপুরের কয়েকটি নদী প্রাণ ফিরে পেয়েছে এবং জলাবদ্ধতা দূর করে হাজার হাজার কৃষকের জমিতে সোনার ফসল উৎপাদন বাড়ছে। এ বিষয়ে কথা হয় পীরগঞ্জ উপজেলার মেষ্টা গ্রামের রিজু মিয়া সাথে তিনি বলেন, গত কয়েকবছর থেকে মিঠাপুকুর এলাকা থেকে পানি নেমে এসে শান বিল সহ কয়েকটি বিলের কানায় কানায় ভরপুর হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পাকা ইরিধান পানির নিচে তলিয়ে থাকে আবাদ করেও চিন্তা, আবাদ না করেও চিন্তা। আমাদের এলাকায় কয়েকটি বিলে হাজার হাজার একর জমি প্রতিবছর আমন ও ইরি ধান জলাবদ্ধতা কারনে খেয়ে ফেলে, গত বছর থেকে শান নদী খননের ফলে এসব বিলে আর পানি জমে থাকে না আবাদ নিয়ে আর কোনো চিন্তা নেই। কৃষকের মাঠ ভরা ফসল এখন গোলায় উঠছে।নদী এলাকার জেলে পল্লীর লোকজন বলছেন, গ্রামবাংলার নদীগুলি মাটি ভরাট হয়েছিল, জেলেদের কে বড় নদীতে বা বিল-ঝিলে মাছ শিকারের জন্য যেতে হতো। এর ফলে মাছ শিকারীদের হয়রানি বাড়তো। বর্তমানে নদী খননের ফলে তাদের দুঃখ কষ্ট দূর হয়েছে এবং জেলে পল্লীতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
এলএলপি বা ভাসমান সেচ পাম্প এলাকার কৃষক বা ম্যানেজার জিল্লুর রহমান জানান, তিনি করতোয়া নদীর তীরে বিএমডিএর ভাসমান সেচ পাম্প স্থাপনে এনে দিয়েছ নতুন এক দিগন্ত। বালু চরে পানি নিয়ে হতাশ কেটে ভাসমান সেচ পাম্পের অধীনে হাজারো কৃষক সুবিধা পাচ্ছেন। কম খরচে কৃষি জমিতে কোনো প্রকার পানির ঘার্তী নেই। কৃষকের মুখে এবং বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষের মনে অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে। রংপুর বিএমডিএ সার্কেল অফিস সূত্রে জানাযায় , ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুরের জেলাগুলোতে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ একনেক কর্তৃক অনুমোদিত ২৮৮১১.৬৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে, ২৩০ কিলোমিটার খাল, ৯৮ টি (২৭৪.৩৮ একর) পুকুর ও ১০ টি (১৪৪.৬৮ একর) বিল পুনঃখনন পৃর্বক ভূ-উপরিস্থ পানির জলাধারা বৃদ্ধি, সংরক্ষণ এবং সেচ কাজে ব্যবহার করা। জলাবদ্ধতা জমির পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে ১০০০ হেক্টর জমি কৃষি উপযোগী করণ করা। ১৩৪০৫ হেক্টর জমিতে পরিকল্পিত ও পরিমিত সেচ সুবিধা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বছরে ১১২২৪০ মেঃটন ফসল উৎপাদন করা। ২১৩ টি সেচযন্ত্রের মাধ্যমে ভূ-ুপরিস্থ পানি সেচ কাজে ব্যবহার করা। সেচ কাজে নবায়নযোগ্য সৌর শক্তির ব্যবহার এবং বিদ্যুৎতের উপর চাপ হ্রাস করণ। ৫০ টি সৌর শক্তি চালিত পাতকুয়া খননের মাধ্যমে স্বল্প পানি গ্রাহী ফসল উৎপাদনের সুযোগ করা। ২.৩০ লক্ষ ফলদ, বনজ ও ঔষধী চারা রোপণ করে অতিরিক্ত বনজ সম্পদ সৃষ্টি এবং পরিবেশ উন্নয়নে সহায়তা করা।
এছাড়াও উক্ত প্রকল্পের আওতায় রংপুর জেলায় ৩৬০.০০ টাকা ব্যয়ে ১২ সেট সৌরশক্তি চালিত এলএলপি স্থাপন ও কমিশন। ৩৪০.৪০ টাকা ব্যয়ে ২৩ টি সেট সৌরশক্তি চালিত পাতকুয়া স্থাপন ও কমিশন। ২২১৪.০০ টাকা ব্যয়ে ৮২ টিব২.০ কিউসেক বিদ্যুৎ চালিত এলএলপি স্থাপন ও কমিশন। ১৫০.০০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১.১৫ লক্ষ (ফলদ /বনজ/ ঔষধী) বৃক্ষ রোপণ। ৮০০.০০ ব্যয়ে ১.০০ একর ভূমি উন্নয়নসহ ভূমি অধিগ্রহণ। ১৩০১.৮৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৬ টি ১ টি বিভাগীয় ও ৫ টি জোনাল অফিস ভবন নির্মাণ। ৪৯৪৩.৮৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৪৬.২১ কিঃমিঃ খাস খাল ও খাড়ী পূনঃখনন। ১০৩০.০১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১০ টি বিল পুনঃখনন। ১১৬৯.৬৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৫৩ টি পুকুর পুনঃ খনন। ৮৮৪.৮১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৯ টি সাব মার্জড ওয়্যার নির্মাণ। ৫৫১.১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৩ টি ফুট ওভার ব্রীজ নির্মাণ কাজ। ৭৯৭.১২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৯৪ টি ভূ-গর্ভস্থ ইউপিভিসি সেচনালা নির্মাণ। ২২.১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৭ টি ক্যাটেল ক্রসিং, কালভার্ট ও বৃষ্টির পানি নির্গমন ব্যবস্থা নির্মাণ এবং ৮.৭৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রংপুরের ৬২৫ জন কৃষকে প্রশিক্ষণ (জন) বাস্তবায়নাধীন / চলমান রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাজ দ্রুতগতিতে বাস্তবায়ন করছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে উক্ত কাজগুলো শেষ হবে। বতর্মান কাজের অগ্রগতি প্রায় ৮০%।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে বরেন্দ্র এলাকার সবজি চাষি আতিয়ার রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন পাতকুয়া স্থাপনের ফলে জমিতে ফসল উৎপাদন বেড়েছে। আগে সেচ পাম্প থেকে কৃষি আবাদি জমিতে সেচ নিশ্চিত করতে গিয়ে অল্প সময়ের বেশি পানি ফসলের জমিতে পড়তো। এতে করে আবাদ বা ফসলের চেহারা দুই রকম হতো। পাতকুয়া পানি প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা হচ্ছে এর ফলে আবাদও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
বিএমডিএর রংপুর সার্কেল প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোঃ হাবিবুর রহমান খান বলেন, শুরু থেকেই সেচের পরিধি বাড়াতে গভীর নলকূপ স্থাপন করেছে বিএমডিএ। এক পর্যায়ে প্রায় ৬০ শতাংশ কৃষি জমি বিএমডিএর সেচের আওতায় চলে আসে। এতে রংপুর অঞ্চলে কৃষিবিপ্লব হলেও ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে বন্ধ করা হয় গভীর নলকূপ স্থাপন। নদীনালার পানি বাড়তে থাকে সেচের আওতায় কিন্তু সেটিও পর্যাপ্ত নয়। ফলে বরেন্দ্র এলাকার বৃষ্টির পানি আহরণে খাস ও মজা পুকুর পুনঃর্খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রান্তিক কৃষকদের কাজের সুযোগ তৈরি হবে এবং বৃক্ষ রোপণের ফলে পরিবেশর উন্নয়ন ঘটছে। নদী পুনঃখনের ফলে জলাবদ্ধতা দূর হবে। কৃষক নদীর পানি কৃষি চাষাবাদে সেচ দিবে এবং পানিতে বারোমাস মাছ থাকবে।
COMMENTS