$type=ticker$c=12$cls=0$b=0

বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতার প্রথম ১০০ দিনের নারকীয় তান্ডবের চিত্র তুলে ধরলেন সজীব ওয়াজেদ জয়


এনএনবি নিউজ

২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। সেই দিনগুলোতে কী পরিমাণ ভয়াবহ নারকীয়তা ও তান্ডব চালানো হয়েছিল সে চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পোস্টে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন তিনি। সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, “বিএনপি-জামায়াতকে যারা ভোট দেবে না, তাদের পরিণতি কত কঠিন হতে পারে, তার দৃষ্টান্ত শুরু হয়ে গিয়েছিল মাসখানেক আগে থেকেই। আওয়ামী লীগ এবং সংখ্যালঘু নিধনযজ্ঞ শুরু হয় নির্বাচনের আগে থেকেই।“নির্বাচনের দিন দুপুরের পরপরই দেশের ওপর যেন নরক ভেঙে পড়ে। শুরু হয় চারদিকে খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ ভয়াবহ সহিংসতা। দেশের মানুষ ৭১ ও ৭৫-এর পর এমন চরম আতঙ্কজনক পরিস্থিতি চাক্ষুস করেনি।”

সেই প্রতিশ্রুত ১০০ দিনে বিএনপি-জামায়াত জোট কী করেছিল-তৎকালীন প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলোতে শুধুমাত্র প্রকাশিত সংবাদের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে তরুণ প্রজন্মকে একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে লিখেছেন তিনি।

সজীব ওয়াজেদ জয়ের পোস্টের বিস্তারিত নীচে তুলে ধরা হলোঃ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২০০১-২০০৬ সাল বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কারণে চিহ্নিত হয়ে থাকবে সবসময়। একটি দেশকে ক্ষমতাসীন দল চাইলে কতটা নারকীয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, তার নিদর্শন বিএনপি-জামায়াতের এই শাসনামল। সেসময়কার পরিণত মানসিকতার মানুষ যারা বেঁচে আছেন, সেই শাসনামলের কথা মনে পড়লে আজও তারা শিউরে ওঠেন। ধীরে-সুস্থে নয়, ক্ষমতায় বসার আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল পিশাচদের তান্ডব উল্লাস। সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎকালীন সরকার প্রতিশ্রুতি দেয় ১০০ দিনেই দেশকে সুপথে পরিচালিত করবে বলে। কিন্তু সবই ছিল বাগাড়ম্বর।

গালভরা কথা মনে হলেও দেশবাসী উপায় না দেখে আশায় বুক বেঁধেছিল, এই বুঝি খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, সংখ্যালঘু নিপীড়নসহ সব কিছু বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু না, কিছুই ঘটেনি; জনতাকে দেয়া সেই ১০০ দিনের প্রতিশ্রুতির বেলুন ফুটো হয়ে গেছে। অর্থনীতি, আইন-শৃঙ্খলা, রাজনীতি, প্রশাসনসহ সর্বক্ষেত্রেই সরকারের চরম ব্যর্থতা মানুষকে আশাহত করেছে। দেশ নিয়ে উচ্চাশা করতেন যারা, সেই বুদ্ধিজীবীদের মুখে কুলুপ ঠুসে দেয়া হলো। কেউ প্রতিবাদ করলে তার নাম অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছিল কালো তালিকায়।

দেশের খনিজ সম্পদ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার একটা কমিটমেন্ট দিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। পরবর্তীতে তার প্রমাণ মেলে। কীভাবে রাষ্ট্রায়ত্ব গ্যাসক্ষেত্র বিদেশিদের হাতে তুলে দিয়ে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল। জ্বলে-পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায় রাষ্ট্রের অমূল্য খনিজ গ্যাস। ক্ষতিপূরণ যেন দিতে না হয়, সেজন্য বিএনপি-জামায়াত নেতৃবৃন্দ এবং আমলাদেরকে দেয়া হয়েছিল বিপুল অঙ্কের উপঢৌকন, দেশে-বিদেশে নানা সুবিধা, গাড়ি, ফ্ল্যাট ইত্যাদি। এসব যদিও ১০০ দিনের পরের ঘটনা, তবুও এসব বলার উদ্দেশ্য হলো, সেই সরকার কাদের সহায়তায় ক্ষমতা বসেছিল, তার ধারণা দেয়ার জন্য।

গদিতে বসার পর থেকে বিএনপি-জামায়াত যেভাবে দেশ শাসন করেছিল, মাস পার না হতেই সর্বক্ষেত্রেই দেখা দিয়েছিল বেশ কিছু প্রশ্ন: পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন এমন আনাড়ি হাতে কীভাবে সরকার পরিচালনা করছে? তারা কি আদৌ রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালনায় সক্ষম? মাত্র ১০০ দিনেই কি দলটি রাষ্ট্রের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে? এসব প্রশ্ন ছিল খোদ বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের মুখেও। জোটের শুভাকাঙ্খীরা পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা এবং পত্রিকার কলামে বুদ্ধিজীবীদের হতাশাভরা বক্তব্য ছিল এমনই- রাষ্ট্রের কোনো কিছুই ঠিকঠাক চলছে না, সবকিছুই স্থবির। প্রথমদিন থেকে সর্বক্ষেত্রে তারা ব্লান্ডার (ঘাপলা) করে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। মানবাধিকার পরিস্থিতিতে চরম বিপর্যয় ঘটেছে... ইত্যাদি।

এমনকি বিএনপি-জামায়াত জোটের অনেক সিনিয়র নেতাও সরকারের কর্মকান্ড নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। এখানে একটি সুনির্দিষ্ট ঘটনা উল্লেখ করা যায়। সংবাদ পাঠক সংসদ নামক একটি অনেক পুরনো সংগঠন কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত জোট সরকারের নেতৃবৃন্দ দেশজুড়ে মানুষের মাঝের হতাশা এবং সরকারের ব্যর্থতার কথা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। না হয়ে উপায় ছিল না। কারণ, সংবাদ পাঠক সংসদ কর্তৃপক্ষ বিগত ১০০ দিনে দেশজুড়ে ঘটে যাওয়া নারকীয় ঘটনাগুলোর বিস্তারিত তথ্য, সংবাদপত্রে প্রকাশিত ঘটনার বিবরণ জনসম্মুখে তুলে ধরেছিলেন।

সেসময় বিএনপি নেতা ও তৎকালীন পরিবেশ মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজ আক্ষেপ করে বলেছেন, '... আমরা এখন নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছি। জনগণ ইতোমধ্যে হতাশ ও দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কারণ আমাদের অনেক নেতা-কর্মী সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছে। কিন্তু তারা গ্রেপ্তার হচ্ছে না বা তাদের শাস্তি হচ্ছে না। জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর আমীর (রাজাকার) এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, জোট সরকারকে দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করতে হলে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ উপহার দিতে হবে। জনগণের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আগেই এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কারণ, জনগণ কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা দলকে ক্ষমতাসীন করার জন্য ভোট দেয়নি। জনগণ শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র চায়।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে পারছে না। সন্ত্রাস বন্ধ করার পরিবর্তে আরও বেড়েছে। কোনো অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। জনগণ আর বেশিদিন সময় দেবে না। জনগণ বিএনপির প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি চায় না, তারা কাজ চায়। ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুর রশিদ মজুমদার বলেছেন, জোট সরকারের উপর থেকে জনগণের আস্থা দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় জোট সরকারের সাফল্যের সম্ভাবনা তেমন দেখা যাচ্ছে না।

এসব বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, তৎকালীন সময়ে নারকীয় ঘটনা দেশকে এতটাই বিপর্যস্ত করে তুলেছিল যে, ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিরা সেসব ঘটনা স্বীকার না করে পারেননি। বাধ্য হয়েছিলেন জনগণের সামনে নিজেদের ব্যর্থতা মেনে নিতে।

সেদিন সংবাদ পাঠক সংসদ কর্তৃক একটি তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত সরকারের ১০০ দিনে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে নিহতের সংখ্যা ছিল ১২০০-এর বেশি। ধর্ষণের ঘটনা গড়ে প্রতিদিন ৪টি, খুনের সংখ্যা গড়ে প্রতিদিন ৬ জন।

সেই ১০০ দিনে ঘটে যাওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া যেতে পারে।

থানার ওসি নিজের প্রাণ বাঁচাতে জিডি করেছেন:

সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে চট্টগ্রামের রাউজান এলাকা কুখ্যাত হয়ে গিয়েছিল পকিস্তানপন্থী ফকা চৌধুরীর পরিবারের কারণে। তার রাজাকার পুত্ররা রাউজানকে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলে। দিনে-দুপুরেও সেখানে রাস্তা দিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী হাঁটতে পারত না ভয়ে, এই বুঝি প্রাণ যায়! রাউজান পৌরসভা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক কর্মীসভায় বিএনপি নেতা সাবেক এমপি রাজাকার গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী (গিকা চৌধুরী) দম্ভের সাথে জানান, রাউজান থানার ভূতপূর্ব ওসি আবুল হোসেনকে হত্যার জন্যে তার মাত্র ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল।

বর্তমান ওসিকেও হত্যার হুমকি দিয়ে গিকা চৌধুরী বলেন, তাকে হত্যার জন্য হয়তো কিছু বেশি খরচ হতে পারে। অবস্থা দেখে নিজের জীবন রক্ষার্থে সেই ওসি থানায় জিডি করেন। যেখানে পুলিশের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নাই, সেখানে সাধারণ মানুষ আর কতটুকু আশা করতে পারে! এমনই ছিল সেসময়কার পরিস্থিতি।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের কপালে লাগলো কালিমা : ফুটবলের পটল তুলেছেন পটল:

এমনিতে সাফ গেমস-এর বাইরে বাংলাদেশের ফুটবলের নাম শোনা যায় না। তবুও ফিফার সদস্য হিসেবে বাংলাদেশে একটি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন অন্তত আছে। আন্তর্জাতিক ফুটবলের আসরে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ে সেই সুবাদে। কিন্তু ক্ষমতায় এসেই বড় রকমের একটি অঘটন ঘটান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল। কোনো রকম পরিকল্পনা ও চিন্তাভাবনা ছাড়াই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বা বাফুফের পুরনো কমিটি ভেঙ দেয়ায় বাংলাদেশকে চরম খেসারত দিতে হয়। ফিফার সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয় বাংলাদেশকে। শুধুমাত্র প্রতিহিংসার কারণে, আগের সরকারের সময়ে নীতিমালা এবং সকল প্রক্রিয়া অনুসরণে গঠিত কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। নিজেদের লোকজনকে সেখানে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে। ফিফার আইন অমান্য করার কারণে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

ফুটবলের আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বাংলাদেশের এই বিতাড়িত হওয়াটা জাতি হিসেবে যে কতটা গ্লানি ও লজ্জার, তা ক্রীড়ামন্ত্রী আন্দাজও করতে পারেননি। ক্ষমতায় বসেই তার প্রথম লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ আমলের সকল কর্মকর্তাকে বিতাড়িত করা। দেশের ফুটবলের দখল নেয়া আর ধান্দা-ফিকিরের রাস্তা সুগম করা। ফিফার সদস্য হিসেবে খেলোয়াড়রা বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা বয়ে নিয়ে যেতেন। বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা উপলক্ষে বাংলাদেশের নামটা অন্তত উচ্চারিত হতো। সেই নিষেধাজ্ঞার ফলে সব কিছুতে শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের নাম। নেমে গেল বাংলাদেশের পতাকা। গণমাধ্যমের চাপে মন্ত্রী পটল অনেক অজুহাত দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন সমালোচনার মুখে। কিন্তু দেশবাসীর কথা ছিল একটাই- বিশ্ব অঙ্গনে বাংলাদেশের পতাকা যিনি উড্ডীন রাখতে পারেননি, তার গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়তে পারে না।

এ বিষয়ে প্রবীণ সাংবাদিক আতাউস সামাদ সেসময় লিখেছিলেন, নির্বাচিত জাতীয় ফুটবল ফেডারেশন কমিটি বাতিল করার দায়ে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলা থেকে বহিষ্কার করেছে ফিফা। ফলে সার্ক ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ অনুষ্ঠিত হলো না বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের দোষে। সরকার কোনো কারণই দেখাতে পারলো না এ রকম গাফিলতির। ঘটনাটায় হতাশ হলেন ফুটবল খেলোয়াড়রা, আজ লজ্জা পেল দেশবাসী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এখন এ কথা বলতে পারেন যে, তার সরকার যেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ ও মর্যাদা এনে দিয়েছে, সেখানে খালেদার সরকার আন্তর্জাতিক ফুটবল অঙ্গনে বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে চরম অপমান।

হাওয়া ভবন নামে মাফিয়া সাম্রাজ্যের তেলেসমাতি শুরু প্রথম দিন থেকেই।

আজ এত বছর পরও হাওয়া ভবনের সেই লুটপাটের ভার বহন করছে বাংলাদেশ। রাস্তার পাশে একটা পান দোকান দিতে হলেও হাওয়া ভবনের নামে চাঁদা দিতে হতো সেসময়। দেশের মানুষের যে কোনো ব্যবসা, দেশে আসা বিনিয়োগ, বাস-অটোরিক্সা নামানো, কলকারখানা স্থাপন, চাকরি-পদোন্নতি-বদলি থেকে শুরু করে হেন কোনো বিষয় ছিল না, যা সরাসরি হাওয়া ভবনের সাথে সম্পৃক্তদের মধ্যস্থতা ছাড়া হতো। মন্ত্রী-এমপিদের ওপরেও ধার্য করা ছিল চাঁদার নির্দিষ্ট হার। লুটপাটকৃত বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করে গড়ে তোলা হয়েছে বিপুল মাফিয়া সাম্রাজ্য।

ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ ও আত্মীয়করণের এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। খালেদা জিয়া ছিলেন নামে মাত্র প্রধানমন্ত্রী, নেপথ্যে থেকে দেশ চালাতেন 'ক্রাউন প্রিন্স' তারেক রহমান। মন্ত্রী-এমপি না হয়েও তিনিই ছিলেন সর্বেসর্বা। দ্বিতীয় পুত্র আরাফাতও দখল করলেন ক্রিকেট বোর্ড। প্রধানমন্ত্রীর বড় বোন 'চকলেট আপা' মন্ত্রীসভার সদস্য। ভাই সাঈদ সাঈদ এস্কান্দারও এমপি হলেন, তার দাপটে কাঁপত বাংলাদেশ বিমানসহ বিভিন্ন খাত। সোনালী ব্যাংকের ১২ কোটি টাকার সুদও মওকুফ করে নিয়েছিলেন এস্কান্দার। খালেদা জিয়ার ভাগ্নে শাহরিন ইসলাম তুহিন এমপি পদে পরাজিত হলেও জায়গা হয় হাওয়া ভবনে। তদবিরের একটা টেবিল ছিল তারও দখলে। খালেদা জিয়ার আত্মীয়দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লুটপাটে শামিল ছিলেন বিএনপির অন্যান্য নেতৃবৃন্দও।

তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পুত্র মাহী বি. চৌধুরীর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও তাকে এবং অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের পুত্রকেও এমপি বানিয়ে আনা হয়। 'আমরা আর মামুরা'- এই নীতি নিয়ে ক্ষমতায় আরোহণের প্রথম দিন থেকেই চলতে শুরু করে হাওয়া ভবন সাম্রাজ্য আর লুটপাটতন্ত্রের মাফিয়া রাজ। তারেক রহমান পরিচালিত হাওয়া ভবনের মাফিয়া সাম্রাজ্যের যাবতীয় কর্মকান্ড ছিল ওপেন সিক্রেট। তাদের সাহস এতটাই বেড়েছিল যে, তারা নিশ্চিত ছিল, কেউ তাদের কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারবে না। বিরোধীদল এসব নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে পরবর্তীতে প্রহিতিংসার শিকার হয়েছিল। গ্রেনেড ছুড়ে তাদের স্তব্দ করে দেয়ার চেষ্টা চালায় এই মাফিয়া সর্দাররা।

প্রথম আলো পত্রিকায় হাওয়া ভবন নিয়ে ২০০২ সালের ১৭ জানুয়ারি এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হওয়া ভবন শুরু থেকে আজ অবধি বহুল আলোচিত। বনানীর সড়ক ১৩/ডি, বাড়ি-৫৩, ঠিকানায় হাওয়া ভবন বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় হিসেবে চালুর গোড়াতেই দলের এক অংশ একে 'কাশিমবাজার কুঠি' বলে অভিহিত করেন। এই কার্যালয় সম্পর্কে তারা সন্দিহান ছিলেন। ... সরকার গঠনের পর হাওয়া ভবন আবারও আলোচনায় আসে। অনেকেই বলেন- প্রশাসন মূলত হাওয়া ভবন থেকে পাওয়া নির্দেশেই চলছে। মন্ত্রী, সচিব ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ প্রকাশ্যে আলোচনা করেন। ওই বাড়ি দ্বিতীয় ক্ষমতাকেন্দ্র বা সরকারের ভেতরে সরকার হয়ে উঠছে। ... বিএনপি সরকার গঠনের পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে হাওয়া ভবনের কথাই শেষ কথা। সরকারি খাত থেকে বাণিজ্যিক সুবিধা লাভের জন্য এখানে তদবির চলে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর এক আত্মীয়, যিনি গত সংসদ নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের একটি আসনে পরাজিত প্রার্থী, তিনিই অগ্রগামী রয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের লোকেরাও হাওয়া ভবনের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করেন। হওয়া ভবন ও তারেক রহমানকে নিয়ে যা কিছু ঘটছে, কিছুরই রাখঢাক নেই, সবই উন্মুক্ত অবস্থায় চলছে।

দেশ কে চালাচ্ছে মানুষের মধ্যে এই প্রশ্ন জেগে ওঠা কি স্বাভাবিক নয়? খালেদা জিয়ার ডাক নাম ছিল পুতুল। আক্ষরিক অর্থেই তাকে 'পুতুল' বানিয়ে রেখেছিল তারেক এবং তার গ্যাং। তবে খালেদা জিয়া 'পুতুল' অবস্থাতে থাকলেও তার সায় ছিল পুত্রের যাবতীয় অপকর্মে। বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত খালেদা জিয়া পুত্রদের সকল অপকর্মের অন্যতম দোসর। শুধু সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি গদিতে বসতেন, সই করার এখতিয়ারটুকু ছিল তার। বাদ বাকি ক্ষমতা ছিল মাফিয়া সর্দার তারেক রহমানের হাতে।

প্রশাসন নাকি প্রহসন:

ক্ষমতায় বসেই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার প্রশাসনকে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নেয়ার নামে যে হারে রদবদল ও চাকুরিচ্যুত করতে শুরু করে, দ্রুতই তার সমাপ্তি ঘটবে বলে মানুষ আশা করেছিল। জোট সরকারের প্রথম ১০০ দিনেই মানুষের এই ধারণা ভেঙে যায়। সেই সময়টা সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য দুঃস্বপ্নের কাল বলে বিবেচিত হয় আজও। আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগপ্রাপ্তদের গণবদলি, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো, পদোন্নতি স্থগিত, চাকুরিচ্যুতিসহ বিভিন্ন কারণে প্রশাসনে নেমে এসেছিল অস্থিরতা। কখন কোন অছিলায় কার চাকরি যাবে, কাকে কোথায় বদলি করা হবে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না চাকরিজীবীদের মধ্যে।

সরকারি অফিসগুলোতে কি কাজের পরিবেশ আছে? সরকারি কর্মচারীরা কি তাদের দায়িত্ব পালন যথাযথভাবে করতে পেরেছেন জোট সরকারের প্রথম ১০০ দিনে? এ সম্পর্কে ২০০২-এর ২২ জানুয়ারিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত আস্থাভাজন ও তার ভাষণ লেখক, সাংবাদিক শফিক রেহমান সম্পাদিত পত্রিকা যায়যায়দিন লিখেছিল:

বর্তমান সরকারে শুভাকাঙ্খীরাও এখন বলছেন, অনেক হয়েছে, সরকারের উচিৎ খুব শিগগিরই ব্যুরোক্রেসিকে স্থির করা। আমলাতন্ত্রের মধ্যে অতীতে আর কোনো সিভিল গভর্ণমেন্টের আমলে এখনকার মতো এত বেশি অস্থিরতা দেখা যায়নি। ... বর্তমান সরকারের আমলে প্রশাসন ও আমলাতন্ত্র সম্পর্কে সু কিংবা কু কোনোরকম নীতি আছে বলে মনে হয় না। এখন পর্যন্ত ব্যুরোক্রেসি নিয়ে যা করা হয়েছে তাকে নৈরাজ্য বা বিশৃঙ্খলা বলাই ভালো। ... পুরস্কার ও তিরস্কারের কোনো সুনির্দিষ্ট নীতি না থাকায় ক্ষমতাধর সুবিধাবাদী লোকেরা ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীস্বার্থে প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় ডিকটেট করছে। উড়ো চিঠি, ফোন এবং ভুল তথ্যের ভিত্তিতে চাকরি যাচ্ছে, শোকজ নোটিশ দেয়া হচ্ছে, সাসপেন্ড করা হচ্ছে সরকারি অফিসারদের। এর মধ্যে দক্ষ, যোগ্য ও সৎ কর্মকর্তারাও পড়ে যাচ্ছেন অনেক সময়। কে কোনদিক থেকে কী করছেন কেউ ঠাহর করতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের নামে, হাওয়া ভবনের নামে, বিএনপির পাওয়ারফুল নেতাদের নামে এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনের নাম করে ঘটানো হচ্ছে এ ধরণের অপকর্ম।

খালেদা জিয়ার আশীর্বাদপুষ্ট শফিক রেহমান-এর পত্রিকায় পর্যন্ত জনঅসন্তোষের মুখে এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে প্রকৃত পরিস্থিতি যে কতটা দুর্বিষহ ছিল, তা সহজেই অনুমেয়।

দখলদারিত্বের সর্বকালের রেকর্ড ভাঙলো বিএনপি-জামায়াত জোট:

ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে সবকিছু দখলে নেয়ার জন্য বেপরোয়া আচরণ করতে শুরু করে বিএনপি-জামায়াত সরকার ও তার সমর্থকরা। কী ছিল না তাদের দখলের তালিকায়? ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো, বাস টার্মিনাল, গণশৌচাগার, ভিসির অফিস, বাড়ি, জমি, মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়, ঠিকাদার অফিস, কবরস্থান, আড়ত, দোকান, প্রেসক্লাব, কলেজ, এমপি হোস্টেলের স্যুট ও কক্ষ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কারপার্কিং-এর স্থান...। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও পর্যন্ত ছিল তাদের দখলের এই তালিকায়।

এই দখলদারিত্বের বিষয়ে সাপ্তাহিক ২০০০-পত্রিকায় ২০০২ সালের ১৮ জানুয়ারি সংখ্যায় 'দখলের নতুন অধ্যায়' শিরোনামে ৯ পৃষ্ঠার একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যা দেখে চমকে ওঠে দেশের মানুষ। কীভাবে সরকার ও প্রশাসনের ভেতরে বিস্তার করা হচ্ছে এক কালো থাবা, কীভাবে মাফিয়াদের কালো ছায়া গ্রাস করছিল পুরো দেশটাকে, কীভাবে দেশের সকল প্রতিষ্ঠান একে একে কুক্ষিগত হচ্ছিল মাফিয়াদের আস্তিনের তলে, তার এক নিদর্শন ছিল সেই প্রতিবেদন।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বদলে দিয়ে রাতারাতি মিথ্যাচার প্রতিষ্ঠা করা হয় পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে:

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দখল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দখলদারিত্বের তালিকায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে মিথ্যা ইতিহাস গেলানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। ৮ম শ্রেণির 'বাংলা সাহিত্য কণিকা'য়, স্বাধীনতার পথে স্মরণীয় যারা শীর্ষক রচনায় ঢোকানো হয়েছিল এক নির্লজ্জ মিথ্যাচার। লেখা হয়েছিল: "প্রভিশনাল বাংলাদেশ সরকারের সশস্ত্র বাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার ও রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।"

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যেখানে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল; জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষিত সরকারের একজন বেতনভুক সেনা কর্মকর্তা ছিলেন জিয়া। ২৫ মার্চ রাতে (ক্যালেন্ডারের ২৬শে মার্চ) বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর সেই ঘোষণাপত্র বিভিন্ন জায়গা থেকে পুনঃপঠিত হয়েছিল। চট্টগ্রামের মাত্র ১০ কিলোওয়াট রেঞ্জের বেতারকেন্দ্র থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের অন্তত ৮ জন সেই ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। কাছাকাছি থাকা মেজর রফিকুল ইসলামকে অনুরোধ করা হলে তিনি প্রতিরক্ষা ব্যূহ ত্যাগ করে ঘোষণাপত্র পাঠ করতে বিনীতভাবে অপারগতা জানানোর পর অপর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে জিয়াউর রহমান সেই ঘোষণাপত্র পাঠের অনুরোধ পেয়ে প্রথমে বঙ্গবন্ধুর নাম উল্লেখ ছাড়া এবং দ্বিতীয়বার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের চাপে 'বঙ্গবন্ধুর পক্ষে' শব্দবন্ধ যুক্ত করে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। যার ধারণকৃত অডিও এখনো সংরক্ষিত রয়েছে রেকর্ড হিসেবে। জীবিতাবস্থায় জিয়া নিজেকে কখনো স্বাধীনতার 'ঘোষক' বলে দাবিও করেননি। এমনকি বিচিত্রায় প্রকাশিত তার একটি প্রবন্ধে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল সামরিক বাহিনীর সবার কাছেই স্বাধীনতার ঘোষণা।

স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার নির্দেশে যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে এবং মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন জেনারেল ওসমানী। তাদেরকে ডিঙিয়ে সেই জিয়াকে বিএনপি সরকার 'সুপ্রিম কমান্ডার' এবং 'রাষ্ট্রপ্রধান' আখ্যা দিয়ে পাঠ্যপুস্তকে ঢুকিয়ে দিল! কতটা কদর্য তাদের চিন্তাভাবনা, এটা সহজেই অনুমেয়।

বিএনপির শুভাকাঙ্খী যায়যায়দিন সম্পাদক শফিক রেহমানও ইতিহাস দখলের এই অপচেষ্টা মেনে নিতে পারেননি। তিনি তার কলামে লিখেছেন- 'প্রকৃত ইতিহাস তা নয়। ঘোষণাটি জিয়াউর রহমান পাঠ করেন ২৭ মার্চ, ১৯৭১-এ এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নামেই তিনি সেই ঐতিহাসিক ঘোষণাটি পাঠ করেন। এই তথ্য বিকৃতির ফলে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা অনেকখানি কমে গেছে (যায়যায়দিন, ২২শে জানুয়ারি, ২০০২)।

অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ তার একটি কবিতায় লিখেছিলেন, 'একদিন সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে।' বিএনপি-জামায়াত সরকারের ১০০ দিনে সবকিছু কি নষ্টদের দখলে চলে যাওয়ার দৃশ্যই দেখেছে জাতি।

ঘর থেকে বেরোলে কি প্রাণ নিয়ে ঘরে ফেরা যাবে:

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থতির এতটাই অবনতি হয়েছিল যে, দেশের প্রতিটি মানুষ এক ভয়ঙ্কর অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই সংঘটিত হচ্ছিল মারাত্মক অপরাধসমূহ।

এ প্রসঙ্গে ২০০১ সালের ১০ অক্টোবরের ডেইলি স্টার পত্রিকায় লেখা হয়: 'সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (চট্টগ্রাম-৭), ভিপি জয়নাল (ফেনী-২), ইলিয়াস আলী (সিলেট-২) এবং হাফিজ ইব্রাহিম (ভোলা-২) এইসব বিএনপি নেতাদের অপরাধ জগতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা, বেআইনী জমি দখল, সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বদান এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এমনকি শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের (ঢাকা-৬) বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বাস টার্মিনাল দখলের। সন্ত্রাসের অভিযোগে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তার বিরুদ্ধে জন-নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের এবং চার্জশিটের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে।

নামগুলো দেখুন। রাজাকার সাকাচৌ, রাউজানের আরেক কুখ্যাত খুনি এবং সন্ত্রাসের গডফাদার, যার দাপটে রাউজান, রাঙ্গুনিয়াসহ বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ ছিল ঘরবাড়িছাড়া। দখল এবং হত্যাযজ্ঞ ছিল নিয়মিত ঘটনা। ফেনী অঞ্চলে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা সেই ভিপি জয়নাল, যার হাতে অগুণিত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী খুন হয়েছে। ইলিয়াস আলী তো ছাত্রাবস্থা থেকেই ছিলেন খুনি। এরশাদের নতুন বাংলা ছাত্রসমাজের সশস্ত্র ক্যাডার ইলিয়াসের খুন খারাবির হাত দেখে ছাত্রদলে তাকে টেনে এনে পদ দেয়া হয়। খালেদা জিয়ার নির্দেশে ৯০-তে ছাত্রলীগ নেতা চুন্নু ও ৯১-তে ছাত্রলীগ নেতা লিটনকে হত্যা করেন ইলিয়াস। সর্বমোট ১৮টি হত্যা মামলা ছিল তার নামে। ছাত্রদলের নেতৃত্বে উঠে আসেন তিনি; রুহুল কবির রিজভী হন সভাপতি, ইলিয়াস হন সাধারণ সম্পাদক। এরপর আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। ছাত্রদল ও বিএনপির বহু নেতাকেও হত্যা করেন তিনি। খালেদা জিয়া একে একে সব কিছু থেকে তাকে মুক্তি দিয়ে এমপি বানান।

এলাকায় সাইফুর রহমান গ্রুপের সাথেও ইলিয়াসের দন্ধ ছিল। তার গুম হওয়ার পেছনে দলীয় কোন্দলকে দায়ী করেন মির্জা আব্বাস। তবে এসব তো বেশিদিন আগের ঘটনা নয়। ২০০১-২০০৬ আমলে এমপি হয়েই প্রথম দিন থেকে বিরোধীদলকে দমনে রীতিমত রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছিলেন তিনি। হাফিজ ইব্রাহিম আবির্ভূত হন মূর্তিমান ত্রাস হিসেবে। ভোলা অঞ্চলের সংখ্যালঘুরা আজও তার নাম শুনলে কেঁপে ওঠেন। নির্বাচনে জয়লাভের পরই প্রথম দিন থেকে ভোলা এলাকায় তার সন্ত্রাসী বাহিনী হিন্দুদের ঘরবাড়ি লুট, অগ্নিসংযোগ, নারী-শিশু ধর্ষণ ও গণধর্ষণ, খুন, অঙ্গহানি, ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ, দেশত্যাগে বাধ্য করা, জমি দখলসহ হেন কোনো অপরাধ নেই, যা ঘটায়নি।

দেশের মানুষ রীতিমত অসহায় হয়ে পড়েছিলেন বিএনপি-জামায়াতের এই তান্ডবের কারণে। জনগণ ধরেই নিয়েছিলেন আত্মমর্যাদা নিয়ে নিজের মতো করে কাউকে হয়ত বাঁচতে দেবে না সরকার। আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনার কথা অনেকের মনে থাকবে। ছাত্রদল-যুবদলের ক্যাডার দোয়েল, খলিল, মোফাজ্জল ও রিপন এবং পুলিশের এসআই বাশারের কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ চারুকলার ছাত্রী সিমি। এভাবে দেশজুড়ে অপরাধ আর নৃশংসতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল সাধারণ মানুষের জীবন। ছিনতাই আর চাঁদাবাজি পরিণত হয় অন্যান্য অপরাধের তুলনায় অত্যন্ত লঘু ঘটনা।

সাপ্তাহিক যায়যায়দিন-এর ২২ জানুয়ারি ২০০২ সংখ্যায় সম্পাদকীয় কলামে লেখা হয়েছিল: ছোট ছোট অপরাধের ঘটনা ব্যাপকভাবে ঘটে চলেছে। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ছিনতাই ও চাঁদাবাজি। প্রতিদিন এই সবের শিকার হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। পথে হাঁটা, রিকশা বা বেবি ট্যাক্সিতে চলাচলকারী মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। তারা সর্বস্ব হারিয়েও থানায় জিডি করে না, কারণ এতে কোন লাভ হয় না। ... এক সপ্তাহে একই ব্যক্তি একাধিকবার ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। কখনো বেবি ট্যাক্সিতে উঠে, কখনো প্রকাশ্য রাস্তায় অস্ত্র বা ছোরা ঠেকিয়ে কেড়ে নিচ্ছে টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন সেট, ঘড়ি, কখনো টাকা নেয়ার পরও ছুরিকাঘাত করছে। চলে যাওয়ার সময় চোখে-মুখে জ্বালা ধরে এমন পাউডার বা কেমিক্যাল ছিটিয়ে যাওয়ার ঘটনাও শোনা গেছে। সাথে টাকা না পেয়েও জামা-কাপড় খুলে নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ঢাকা শহরের সব এলাকাতেও চলছে এ ধরণের ছিনতাই। ... একজন মানুষ সারা মাস পরিশ্রম করে মাস শেষে বেতন পায়। তার সংসারের পুরো মাসের সম্বল পকেটে পুরে অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলে তা কেড়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারী। আক্রান্তের মনের অবস্থাটা যে কী, তা বুঝতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এই রকম মানসিক ও আর্থিক নির্যাতন থেকে নাগরিকদের রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের।

দেশের শীর্ষ গণামাধ্যমগুলোর প্রথম পাতায় বড় হেডিংয়ের বক্তব্য ছিল- আমরা কি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে আবার নিরাপদে ফিরতে পারবো?

এ কোন শান্তিময় ভবিষ্যত:

ক্ষমতায় আরোহন করে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দেশের মানুষকে সুন্দর ও শান্তিময় ভবিষ্যতের যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, ১০০ দিনে তা পুরোটাই ভেস্তে যায়। সরকার ক্ষমতায় বসার পরেই মানুষের দুর্ভোগ সীমানা ছাড়া হয়ে যায়। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের বেসামাল সংলাপের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল নিত্যপণ্যের দাম। চাল, ডাল, আটা, তেল, মাছ-মাংসসহ সব জিনিসেরই দাম বেড়ে যায় হু হু করে। সেই তুলনায় বাড়েনি মানুষের আয়। সরকার দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ করতে ব্যর্থ, ছিল না ব্যবসায়ীদের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ। বিএনপি-জামায়াত জোটকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য যে পরিমাণ ইনভেস্ট (চাঁদা) করতে হয়েছে, তা উঠিয়ে নিতে হলে জিনিসপত্রের দাম না বাড়িয়ে উপায় কী- এমন প্রকাশ্য বক্তব্য ছিল ব্যবসায়ীদের। সরকারিভাবেই তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ানো হয়েছিল। খেতে না পেরে, পরিবারের ভরণ-পোষন দিতে না পেরে বহু মানুষের সপরিবারে রেলের নিচে বা নদীত ঝাঁপ, বিষ খেয়ে, গলায় দড়ি দিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ছিল নিত্তদিনের খবর।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এক সভায় বলেছিলেন, ১০০ দিনে জোট সরকার মুল্য বৃদ্ধি ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি। সাংবাদিক আতাউস সামাদও না বলে পারেননি- দেশের লোককে সুখের মুখ দেখানোর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি প্রদান এই সেদিনের ব্যাপার হলেও দেশজুড়ে মানুষকে অসুখী করেছে বিএনপি সরকার জ্বালানি, তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিয়ে। ভোটাররা এখন প্রকাশ্যেই প্রশ্ন করছেন, আর কী কী এবং কত ভারী সব বোঝা চাপাবে এই সরকার তাদের ওপর!

দায়িত্বশীলদের কান্ডজ্ঞানহীন মন্তব্যের কিছু নমুনা এবং অন্যান্য:

* ৬০ জনের মন্ত্রীসভা এমন কিছু বেশি নয়। এতে তেমন খরচ বাড়বে না : খালেদা জিয়া [প্রথম আলো, ৩ ডিসেম্বর, ২০০১]

* সবুরে মেওয়া ফলে। এতো অধৈর্য হলে চলবে না : বিএনপি মহাসচিব ও মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভুঁইয়া, শরিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে [প্রথম আলো, ১৫ জানুয়ারি, ২০০২]

* দেশ চালায় আল্লাহ, মন্ত্রীরা চালায় না : এমসিসিআই-এর সভায় অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান [ভোরের কাগজ, ২৫ জানুয়ারি, ২০০২]

* নজর রাখবেন আমার দলের লোক খুন হয়েছে, আবার দলের লোকদের বিরুদ্ধে যেন মামলা না হয় : দলীয় কোন্দলে নিহত বিএনপি নেতা খালেদ ইমামের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে বিএনপি সাংসদ মেজর মান্নান [প্রথম আলো, ২ জানুয়ারি, ২০০২]

* দলে চোর-ডাকাত অনেকেই থাকে। তাদের সঙ্গেই আমাদের রাজনীতি করতে হয় : বিএনপি চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি একরামুল করিম [প্রথম আলো, ১৩ ডিসেম্বর, ২০০১]

* শালাদের চোখ তুলে ফেল : আওয়ামী লীগ নেতাদের উপর হামলা চালনাকালে পুলিশের প্রতি এডিসি কোহিনুর মিয়ার নির্দেশ [ইত্তেফাক, ১০ জানুয়ারি, ২০০১]

* বিএনপি সরকারের আমলে ন্যায়বিচার পেলাম, খালেদা জিয়া জিন্দাবাদ : এরশাদ শিকদার, একটি হত্যা মামলায় খালাস পেয়ে [প্রথম আলো, ২৬ অক্টোবর, ২০০১]

* পুলিশের চাঁদাবাজি ও হয়রানির কারণে বান্দরবানের সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প এখন ধ্বংসের মুখে : জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবদুল মাবুদ [প্রথম আলো, ২র জানুয়ারি, ২০০২]

সূত্র: বাসস।  




COMMENTS

ফেসবুকে ফলো করুন...


Developed by Julius Choudhury
নাম

অপরাধ,81,অর্থনীতি,130,আইন ও আদালত,25,আন্তর্জাতিক,53,আবহাওয়া,25,আশুলিয়া,1,এভিয়েশন,3,কক্সবাজার,5,কলকাতা,2,কিশোরগঞ্জ,17,কুড়িগ্রাম,15,কুমিল্লা,5,কুষ্টিয়া,8,কূটনীতি,3,কৃষি,14,ক্যাম্পাস,15,খাগড়াছড়ি,1,খুলনা,1,খেলা,74,গণমাধ্যম,179,গাইবান্ধা,2,গাজীপুর,192,গোপালগঞ্জ,5,চট্টগ্রাম,15,চাঁদপুর,1,চাকরি,5,জয়পুরহাট,2,জাতীয়,3,জাপান,1,জামালপুর,5,টাঙ্গাইল,7,ঠাকুরগাঁও,1,ঢাকা,1,ঢাবি,1,দিনাজপুর,17,ধর্ম,17,নড়াইল,3,নবাবগঞ্জ,1,নরসিংদী,12,নাটোর,2,নীলফামারী,1,নেত্রকোণা,8,নেপাল,1,নোয়াখালী,2,পরিবেশ,11,পাকিস্তান,2,পাবনা,129,প্রবাস,4,প্রযুক্তি,51,ফটো,1,ফিলিপাইন,1,ফেনী,3,বগুড়া,1,বরিশাল,3,বাং,1,বাগেরহাট,2,বান্দরবান,9,বিচিত্র,2,বিনোদন,22,বিশেষ প্রতিবেদন,16,বিশ্ব,263,বেনাপোল,1,ব্যাংক,1,ব্রাহ্মণবাড়িয়া,12,ভারত,5,ভুটান,1,ভ্রমণ,9,মতামত,14,ময়মনসিংহ,13,মানিকগঞ্জ,1,মিয়ানমার,1,মুন্সীগঞ্জ,1,মেহেরপুর,13,যশোর,1,যুক্তরাষ্ট্র,2,যোগাযোগ,3,রংপুর,273,রাঙ্গামাটি,1,রাজধানী,69,রাজনীতি,189,রাজশাহী,2,রাশিয়া,2,লক্ষ্মীপুর,3,লালমনিরহাট,4,শরীয়তপুর,2,শিক্ষা,97,শিল্প ও সংস্কৃতি,2,শেরপুর,1,সংস্কৃতি,7,সাতক্ষীরা,2,সাভার,3,সারাদেশ,592,সাহিত্য,7,সিলেট,6,সুনামগঞ্জ,1,স্বাস্থ্য,56,
ltr
item
NNB - News Network of Bangladesh: বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতার প্রথম ১০০ দিনের নারকীয় তান্ডবের চিত্র তুলে ধরলেন সজীব ওয়াজেদ জয়
বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতার প্রথম ১০০ দিনের নারকীয় তান্ডবের চিত্র তুলে ধরলেন সজীব ওয়াজেদ জয়
বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতার প্রথম ১০০ দিনের নারকীয় তান্ডবের চিত্র তুলে ধরলেন সজীব ওয়াজেদ জয়
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEip9XNWkTEsgS3W_3hCSxqGxeYlTyrjbfLIp0FhzW_j9BcbPMJiZFHrhCqAJxZl7uHYthvd3TVG9XulMEnrYXc1DZcHTaZFfczoVhaiT6LLjX_tJe5WYUepjzuWzB-4oZXt6OTk6KU_zihaWbvLOsuzzzW5bt52htnH1rNrIPrJ_42atc5GEnlZeJBc/s320/joy.jpg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEip9XNWkTEsgS3W_3hCSxqGxeYlTyrjbfLIp0FhzW_j9BcbPMJiZFHrhCqAJxZl7uHYthvd3TVG9XulMEnrYXc1DZcHTaZFfczoVhaiT6LLjX_tJe5WYUepjzuWzB-4oZXt6OTk6KU_zihaWbvLOsuzzzW5bt52htnH1rNrIPrJ_42atc5GEnlZeJBc/s72-c/joy.jpg
NNB - News Network of Bangladesh
https://edition.nnb.com.bd/2022/10/100522100410.html
https://edition.nnb.com.bd/
https://edition.nnb.com.bd/
https://edition.nnb.com.bd/2022/10/100522100410.html
true
8430089477468953663
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts সব দেখনু Read More Reply Cancel reply Delete By হোম PAGES POSTS সব দেখনু সম্পর্কিত বিষয় ARCHIVE খোঁজ ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy Table of Content