বিশেষ প্রতিনিধি
বাংলাদেশের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল তদন্ত শুরু করেছে। কিন্তু এ তদন্ত কতটা কার্যকর হবে? আন্দোলনের শিকার পরিবার ও বিশেষজ্ঞরা কি আসলেই ন্যায়বিচার পাবেন? প্রশ্ন রয়ে গেছে।
দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, জাতিসংঘের এই তদন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও এর অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ট্রমা বিবেচনায় এটি প্রয়োজনীয়, কিন্তু আগের সরকারের সমর্থকদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা পাওয়া কঠিন হতে পারে।
কুগেলম্যান আরও বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সহযোগিতা করলেও আগের সরকারের সমর্থকরা হয়তো সহযোগিতায় আগ্রহী হবেন না, বিশেষ করে শেখ হাসিনার সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিবেচনায়।
১৭ বছর বয়সী গুলাম নাফিজের বাবা গুলাম রহমান জাতিসংঘের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তিনি চান জাতিসংঘের তদন্ত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করবে এবং একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
জাতিসংঘের এই তদন্ত বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ হলেও এর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। জাতিসংঘের তদন্ত কি আদৌ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবে, নাকি এটি শুধুই প্রক্রিয়ার একটি অংশ হিসেবে থেকে যাবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে নির্যাতিত পরিবারগুলোর প্রত্যাশা, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য একটি সমন্বিত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
বাংলাদেশের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল তদন্ত শুরু করেছে। কিন্তু এ তদন্ত কতটা কার্যকর হবে? আন্দোলনের শিকার পরিবার ও বিশেষজ্ঞরা কি আসলেই ন্যায়বিচার পাবেন? প্রশ্ন রয়ে গেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার তদন্তের শুরু
জুলাই-আগস্টে হওয়া বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল। ঢাকায় অবস্থানরত জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস (ওএইচসিএইচআর) এই তদন্ত পরিচালনা করছে। তারা আন্দোলনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের প্রমাণাদি সংগ্রহ, দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান করবে।আন্দোলনের পটভূমি
গত জুলাই মাসে কোটার সংস্কার দাবিতে শুরু হওয়া এই আন্দোলন অল্প সময়ের মধ্যেই সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ এই আন্দোলনে কয়েক হাজার মানুষ আহত হন এবং বহু আন্দোলনকারী নিহত হন। পুলিশের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থীদের ঘটনায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
আন্দোলনের এক পর্যায়ে, ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন। তবে এই আন্দোলনকালে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়।জাতিসংঘের প্রাথমিক প্রতিবেদন
গত মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের (ওএইচসিএইচআর) এক প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, নিরাপত্তা বাহিনী আন্দোলন মোকাবেলায় ‘অপ্রয়োজনীয় এবং অসম শক্তি’ ব্যবহার করেছে। তাদের তদন্তে বিচারবহির্ভূত হত্যা, জোরপূর্বক গ্রেপ্তার, গুম, নির্যাতন এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগগুলোও উঠে এসেছে।মানবাধিকারকর্মী ও বিশেষজ্ঞদের মতামত
মানবাধিকারকর্মী সারা হোসেন এই তদন্তের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস এ ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করছে। তিনি আশা করেন, এই তদন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে এবং তদন্তের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া গড়ে তুলবে।দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, জাতিসংঘের এই তদন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও এর অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ট্রমা বিবেচনায় এটি প্রয়োজনীয়, কিন্তু আগের সরকারের সমর্থকদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা পাওয়া কঠিন হতে পারে।
তদন্তের সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ
জাতিসংঘের এই দল নির্যাতিত ব্যক্তি, ডাক্তার এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে। তবে তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, এটি কোনো অপরাধমূলক তদন্ত নয়। সারা হোসেন এবং কুগেলম্যানও এই তদন্তের সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করে বলেন, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের পুরো পরিসরকে কাভার করতে নাও পারে।কুগেলম্যান আরও বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সহযোগিতা করলেও আগের সরকারের সমর্থকরা হয়তো সহযোগিতায় আগ্রহী হবেন না, বিশেষ করে শেখ হাসিনার সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিবেচনায়।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সংশয়
নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারগুলো জাতিসংঘের তদন্তের প্রতি মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত, যার ভাই মুগ্ধ আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত হন, জানান, জাতিসংঘের দলকে তিনি কিছু তথ্য দিয়েছেন। তবে তিনি আশাবাদী নন, কারণ জাতিসংঘের দলটি অপরাধ তদন্ত করছে না, শুধুমাত্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।১৭ বছর বয়সী গুলাম নাফিজের বাবা গুলাম রহমান জাতিসংঘের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তিনি চান জাতিসংঘের তদন্ত অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করবে এবং একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
বিচার নিশ্চিতে সমন্বিত পদক্ষেপের দাবি
দীপ্ত এবং গুলাম রহমান চান, নির্দিষ্ট সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হোক। তারা মনে করেন, বেনামী মামলার চেয়ে অপরাধীদের চিহ্নিত করা এবং সিসিটিভি ফুটেজ ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা জরুরি।জাতিসংঘের এই তদন্ত বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ হলেও এর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। জাতিসংঘের তদন্ত কি আদৌ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবে, নাকি এটি শুধুই প্রক্রিয়ার একটি অংশ হিসেবে থেকে যাবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে নির্যাতিত পরিবারগুলোর প্রত্যাশা, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য একটি সমন্বিত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
COMMENTS