
ফেরদৌস আহমদ
এনএনবি, নেত্রকোণা
নেত্রকোণায় হাজং বিদ্রোহের অন্যতম সাক্ষী নারীনেত্রী কমরেড কুমুদিনী হাজং আর নেই। বার্ধক্যজনিত কারণে ৯৫ বৎসর বয়সে দুর্গাপুর উপজেলার বহেড়াতলী গ্রামের নিজ বাড়িতে শনিবার (২৩ মার্চ, ২০২৪) দুপুরের দিকে মারা যান তিনি।
জানা যায়, কমরেড কুমুদিনী হাজং ব্রিটিশবিরোধী ও টঙ্ক আন্দোলনের নেত্রী হিসেবেই সমধীক পরিচিত। দুর্গাপুরের কুল্লাগড়া ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলের বহেড়াতলী গ্রাম এলাকার এক টিলায় বসবাস করতেন তিনি। হাজং বিদ্রোহের সাক্ষী কুমুদিনী হাজং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, টঙ্ক আন্দোলন, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানি জুলুম বৈষম্য ও নিপীড়ন, ১৯৬৪ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, মহান স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের কালের সাক্ষী ছিলেন।
তৎকালীন ব্রিটিশ পুলিশ কৃষকদের টংক আন্দোলন দমাতে আন্দোলনকারীদের বাড়িঘরে হানা দেয়। কমরেড কুমুদিনী হাজংয়ের স্বামী লংকেশ্বর হাজং টঙ্ক আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন। লংকেশ্বর হাজংকে খোঁজ করার নামে ব্রিটিশ পুলিশ তাদের বাড়িতে হানা দেয়। কুমুদিনী হাজং তখন নববধূ। তাঁর কাছে স্বামীর সন্ধান জানতে চায় পুলিশ। সন্ধান না দেয়ায় পুলিশ কুমুদিনী হাজংকে টেনেহিঁছড়ে দুর্গাপুরের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। খবর পেয়ে গ্রামের আর এক নারীনেত্রী রাশিমনি হাজং শতাধিক নারী পুরুষ সঙ্গে করে দা, লাঠি, বল্লম ও তীর ধনুকসহ সুমেশ্বরী নদীর তীরে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং কুমুদিনী হাজংকে ছেড়ে দিতে বলে। এ সময় পুলিশের গুলিতে রাশিমনি হাজং শহিদ হন। রাশিমনির সহযোদ্ধা সুরেন্দ্র হাজংয়ের এলোপাতাড়ি দায়ের কোপে ওই পুলিশও মারা যায়। পরে পুলিশ আরো গুলি চালালে ২২জন হাজং নারী-পুরুষ শহীদ হন। এ অবস্থায়ও পিছু না হটে হাজং নারী-পুরুষ পুলিশদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে এক সময় কুমুদিনী হাজংকে ছেড়ে দিয়ে পিছু হটে পুলিশ। তাঁর মৃত্যুতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এই শোক প্রভাব ফেলেছে হিন্দু-মুসলিমসহ সকল সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রাখায় কুমুদিনী হাজং অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তারমধ্যে, ১৯৯৯ সালে তেভাগা কৃষক আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তি পুরস্কার, ২০০৩ সালে নির্বাচিত অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার, ২০০৫ সালে স্বদেশ চিন্তা সংঘ ড. আহম্মদ শরীফ স্মারক পুরস্কার, ২০০৭ সালে মনিসিংহ স্মৃতিপদক পুরস্কার, ২০১০ সালে সিধু কানহু ফুলমনি পদক, ২০১৪ সালে জলসিঁড়ি পদক, ২০১৮ সালে হাজং জাতীয় পুরস্কার, ২০২১ সালে নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক সম্মাননা, ২০২২ সালে পথ পাঠাগার সম্মাননা অন্যতম।
কুমুদিনী হাজংয়ের মৃত্যুতে এলাকার সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ রুহী, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেমন্ড আরেং, ইউএনও এম রকিবুল হাসান, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা কমরেড দিবালোক সিংহ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিচালক গীতি কবি সুজন হাজং, দুর্গাপুর প্রেসক্লাব পরিবার, পথ পাঠাগার পরিবার, বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠন, সিপিবি নেত্রকোণা জেলা ও দুর্গাপুর উপজেলা কমিটি সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ হতে শোক প্রকাশ ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে।
মৃত্যুকালে তিনি ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। রোববার (২৪ মার্চ) সকালে স্থানীয় শ্মশানঘাটে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এনএনবি, নেত্রকোণা
নেত্রকোণায় হাজং বিদ্রোহের অন্যতম সাক্ষী নারীনেত্রী কমরেড কুমুদিনী হাজং আর নেই। বার্ধক্যজনিত কারণে ৯৫ বৎসর বয়সে দুর্গাপুর উপজেলার বহেড়াতলী গ্রামের নিজ বাড়িতে শনিবার (২৩ মার্চ, ২০২৪) দুপুরের দিকে মারা যান তিনি।
জানা যায়, কমরেড কুমুদিনী হাজং ব্রিটিশবিরোধী ও টঙ্ক আন্দোলনের নেত্রী হিসেবেই সমধীক পরিচিত। দুর্গাপুরের কুল্লাগড়া ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলের বহেড়াতলী গ্রাম এলাকার এক টিলায় বসবাস করতেন তিনি। হাজং বিদ্রোহের সাক্ষী কুমুদিনী হাজং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, টঙ্ক আন্দোলন, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানি জুলুম বৈষম্য ও নিপীড়ন, ১৯৬৪ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, মহান স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের কালের সাক্ষী ছিলেন।
তৎকালীন ব্রিটিশ পুলিশ কৃষকদের টংক আন্দোলন দমাতে আন্দোলনকারীদের বাড়িঘরে হানা দেয়। কমরেড কুমুদিনী হাজংয়ের স্বামী লংকেশ্বর হাজং টঙ্ক আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন। লংকেশ্বর হাজংকে খোঁজ করার নামে ব্রিটিশ পুলিশ তাদের বাড়িতে হানা দেয়। কুমুদিনী হাজং তখন নববধূ। তাঁর কাছে স্বামীর সন্ধান জানতে চায় পুলিশ। সন্ধান না দেয়ায় পুলিশ কুমুদিনী হাজংকে টেনেহিঁছড়ে দুর্গাপুরের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। খবর পেয়ে গ্রামের আর এক নারীনেত্রী রাশিমনি হাজং শতাধিক নারী পুরুষ সঙ্গে করে দা, লাঠি, বল্লম ও তীর ধনুকসহ সুমেশ্বরী নদীর তীরে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং কুমুদিনী হাজংকে ছেড়ে দিতে বলে। এ সময় পুলিশের গুলিতে রাশিমনি হাজং শহিদ হন। রাশিমনির সহযোদ্ধা সুরেন্দ্র হাজংয়ের এলোপাতাড়ি দায়ের কোপে ওই পুলিশও মারা যায়। পরে পুলিশ আরো গুলি চালালে ২২জন হাজং নারী-পুরুষ শহীদ হন। এ অবস্থায়ও পিছু না হটে হাজং নারী-পুরুষ পুলিশদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে এক সময় কুমুদিনী হাজংকে ছেড়ে দিয়ে পিছু হটে পুলিশ। তাঁর মৃত্যুতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এই শোক প্রভাব ফেলেছে হিন্দু-মুসলিমসহ সকল সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রাখায় কুমুদিনী হাজং অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তারমধ্যে, ১৯৯৯ সালে তেভাগা কৃষক আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তি পুরস্কার, ২০০৩ সালে নির্বাচিত অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার, ২০০৫ সালে স্বদেশ চিন্তা সংঘ ড. আহম্মদ শরীফ স্মারক পুরস্কার, ২০০৭ সালে মনিসিংহ স্মৃতিপদক পুরস্কার, ২০১০ সালে সিধু কানহু ফুলমনি পদক, ২০১৪ সালে জলসিঁড়ি পদক, ২০১৮ সালে হাজং জাতীয় পুরস্কার, ২০২১ সালে নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক সম্মাননা, ২০২২ সালে পথ পাঠাগার সম্মাননা অন্যতম।
কুমুদিনী হাজংয়ের মৃত্যুতে এলাকার সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ রুহী, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেমন্ড আরেং, ইউএনও এম রকিবুল হাসান, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা কমরেড দিবালোক সিংহ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিচালক গীতি কবি সুজন হাজং, দুর্গাপুর প্রেসক্লাব পরিবার, পথ পাঠাগার পরিবার, বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠন, সিপিবি নেত্রকোণা জেলা ও দুর্গাপুর উপজেলা কমিটি সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ হতে শোক প্রকাশ ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে।
মৃত্যুকালে তিনি ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। রোববার (২৪ মার্চ) সকালে স্থানীয় শ্মশানঘাটে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
COMMENTS