এনএনবি নিউজ
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যদি ইউক্রেইনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করেন, তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররা সেদেশে আগ্রাসন চালানো রুশ সেনাসহ তাদের সব সমরাস্ত্র ও সমরযান ধ্বংস করবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র সাবেক পরিচালক ডেভিড পেত্রাউস।
এবিসি নিউজকে রোববার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন বলে জানিয়েছে ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকা।
তবে তিনি এও বলেছেন যে, পরমাণু অস্ত্র নিয়ে রাশিয়ার দিক থেকে ক্রমাগত উস্কানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে তা নিয়ে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে কথা বলেননি। সুলিভানের অফিসের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বার বার মস্কোর সঙ্গে যোগযোগ করছেন।
পেত্রাউস বলেন, ‘‘আমি শুধুমাত্র অনুমানের ভিত্তিতে আপনাকে বলছি। আমরা নেটোকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো করে প্রতিক্রিয়া জানাব- এটি একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা- যা ইউক্রেইনের যুদ্ধক্ষেত্র এবং ক্রাইমিয়া থেকে রাশিয়ার প্রচলিত সব বাহিনী যাদের আমরা দেখতে এবং শনাক্ত করতে পারছি, তাদের সবাইকে বের করে দেবে, এমনকী কৃষ্ণ সাগরের প্রতিটি জাহাজ থেকেও।”
সম্প্রতি পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোকে ইউক্রেইন যুদ্ধে তার পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুঁশিয়ারিকে ‘ধাপ্পা’ বলে ভাবতে বারণ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখন এর পরিণতি নিয়ে এই হুঁশিয়ারি এল। অনেকেই একে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাদের বড় ধরনের যুদ্ধ বেধে যাওয়ার ইঙ্গিত বলে অনুমান করছেন।
যদি রাশিয়া ইউক্রেইনে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং নেটো এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জাবাবে পেত্রাউস বলেন, যদি তাই হয়, তবে সেটি নেটোর আর্টিক্যাল ফাইভ-কে সক্রিয় করার মত পরিস্থিতি হবে না। কারণ, ইউক্রেইন নেটো সদস্য নয়। তাই তারা আক্রান্ত হলে সেটি পুরো নেটো জোট আক্রান্ত হয়েছে বলে বিবেচিত হবে না।
‘‘তবে যাই হোক না কেনও, এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও নেটোর প্রতিক্রিয়া পরিস্থিতি অনুসারেই হবে।”
যদি পুতিন ইউক্রেইনে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করেন, তবে সেটির তেজস্ক্রিয়তা প্রতিবেশী নেটোভূক্ত দেশগুলোতেও ছড়াবে এবং সেক্ষেত্রে আর্টিকেল ফাইভ সক্রিয় হতে পারে। কারণ, সেটি নেটোর সদস্যদের উপর হামলা বলে বিবেচিত হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘‘হয়ত আপনি এটা নিয়ে তর্ক করতে পারেন। তবে অন্যভাবে বললে বলা যায়, পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার এতটাই ভয়ঙ্কর হবে যে, এর জবাব দিতেই হবে...তেমন পরিস্থিতিতে জবাব না দিয়ে কেউ বসে থাকবে না।”
‘‘আপনি আবারও এখানে একটি পরমাণু যুদ্ধ বেধে যাওয়ার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে দেখতে চান না। তবে আপনাকে এটাও দেখাতে হবে যে, যদি তাই হয় তবে আপনি কোনাভাবেই তা মেনে নেবেন না।”
সম্প্রতি ইউক্রেইনের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে দেশটির সেনারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং রুশ বাহিনীকে পাল্টা আক্রমণ করে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কয়েকটি অঞ্চল পুনর্দখল করে নিয়েছে। ইউক্রেইন একে নিজেদের জন্য বড় জয় হিসেবে দেখছে। রাশিয়ার জন্য যা চরম অপমানের।
গত শুক্রবার ইউক্রেইনের চারটি অঞ্চল জাপোরিজিয়া, খেরসন, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে নিজেদের সঙ্গে সংযুক্ত করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন পুতিন। ওদিকে, অতি সম্প্রতি দোনেৎস্ক অঞ্চলের নগরী লিমানের দখল হাতছাড়া হয়েছে রুশ বাহিনীর। আরও কয়েকটি নগরীতে তুমুল পাল্টা আক্রমণ করেছে ইউক্রেনীয় সেনারা।
এ পরিস্থিতিতে পুতিন পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এমনকী তার মিত্ররাও প্রকাশ্যে তাকে ইউক্রেইনে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
COMMENTS