এনএনবি নিউজ
পঞ্চগড়ে করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় উদ্ধার অভিযানের তৃতীয় দিনে আরও ১৭ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে।
গত তিন দিনে মোট ৬৮ জনের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, এখন নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত চারজন।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দীপঙ্কর রায় জানান, ৫১ জনের লাশ উদ্ধারের পর সোমবার রাতে অভিযান স্থগিত করা হয়েছিল। মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে আবার নদীতে তল্লাশি শুরু করেন উদ্ধারকর্মীরা।
বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বোদা উপজেলার আউলিয়া ঘাট, দেবীগঞ্জের করতোয়া ঘাট এবং দিনাজপুরের বীরগঞ্জ এলাকায় নদী থেকে মোট ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
পঞ্চগড় এবং আশপাশের জেলার ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট এ উদ্ধার অভিযনে অংশ নিচ্ছে। এ ছাড়া রংপুর, কুড়িগ্রাম ও রাজশাহী থেকে আসা তিনটি দলে ৯ জন ডুবুরি অংশ নিচ্ছেন তল্লশিতে।
গত দুদিনের মত মঙ্গলবারও নিখোঁজদের সন্ধানে আওলিয়া ঘাটসহ করতোয়ার বিভিন্ন অংশে ছুটে বেড়াচ্ছেন স্বজনরা। জেলা প্রশাসনের করা তালিকা অনুযায়ী, অন্তত চার জনের কোনো সন্ধান এখনও মেলেনি।
রোববার মহালয়া উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নৌকায় করে বোদা উপজেলার বরদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন উৎসবে যোগ দিতে। দুপুরের দিকে মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় একটি নৌকা উল্টে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, নৌকাটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল। কিছু মানুষ সাঁতরে নদীর তীরে ফিরতে পারলেও অনেকে নিখোঁজ থাকেন। নৌকাডুবির পরপরই স্থানীয়রা নৌকা নিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা নামেন তল্লাশিতে।
রোববার ২৫ জনের লাশ উদ্ধারের পর সোমবার দিনভর তল্লাশিতে নদীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়া আরও ২৬টি লাশ তুলে আনেন উদ্ধারকর্মীরা।
বোদা থানার ওসি সুজয় কুমার রায় দুপুরে বলেন, “স্রোতের টানে হয়তো অনেক লাশ আশপাশের নদীতে ভেসে গেছে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করছে।”
হিমালয়ের পাদদেশ থেকে আসা করতোয়া নদী উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় এমনিতে খুব খরস্রোতা নয়; গভীরতাও খুব বেশি নয়। কিন্তু কয়েক দিনের টানা বর্ষণের পর উজানের ঢলে নদীতে পানি বেড়েছে অনেকটা।
এর মধ্যে দুর্ঘটনায় পড়া নৌকায় ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী ওঠায় এবং মাঝ নদীতে নৌকাডুবির কারণে মৃত্যু এত বেশি হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
এ ছাড়া এই নদী থেকে অবাধে বালু ও পাথর উত্তোলন করা হয়। ফলে নদীর স্থানে স্থানে বেশ বড় ধরনের গর্ত রয়েছে। সেখানে লাশ পড়ে বালুর নিচে আটকে যেতে পারেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, নৌকাটি যখন ঘাট থেকে ছেড়ে যায় তখনও সেখানে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের লোকজন উপস্থিত ছিল। কিন্তু নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী উঠলেও তারা তাতে কোনো বাধা দেননি।
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে তীর্থযাত্রীদের নৌকা ডুবির ঘটনায় লাশ উদ্ধারের পর মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদের সামনে একটি নোটিশ বোর্ডে ছবি টানিয়ে দেওয়া হয়।
COMMENTS