এনএনবি নিউজ
আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে সোমবার রাতভর সংঘর্ষে অন্তত ১০০ সেনা নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ন জানিয়েছেন, ওই রাতের সংঘর্ষে তাদের ৪৯ জন সেনা নিহত হয়েছে।
আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের ৫০ জন সেনা নিহত হয়েছে।
এই দুই প্রতিবেশী দেশ তিন দশকের মধ্যে দুইটি যুদ্ধে জড়িয়েছে এবং নিয়মিতভাবে ছোট ছোট সংঘর্ষে জড়াচ্ছে।
মঙ্গলবার রাশিয়া জানিয়েছে, তারা সর্বশেষ এই সংঘাতে থামাতে একটি যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করেছে।
প্রাথমিকভাবে আর্মেনিয়া জানিয়েছিল, সংঘর্ষ পুরোপুরি শেষ না হলেও থেমে আছে। পরে আজারবাইজান জানায়, প্রতিবেশীর ‘উস্কানির’ পর তারা তাদের লক্ষ্য পূরণ করেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিরোধের মূলে আছে নাগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল; আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমান্ত অনুযায়ী এটি পুরোপুরি আজারবাইজানের অংশ, কিন্তু এখানে প্রধানত আর্মেনীয় নৃগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে।
এই দুই দেশের সংস্কৃতি রাজনীতি থেকে শুরু করে ধর্মীয়ভাবেও বিভক্ত। আর্মেনিয়া একটি খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ অপরদিকে আজারবাইজানের অধিকাংশ বাসিন্দাই মুসলিম।
১৯৯১ সালে বিলুপ্তির আগ পর্যন্ত উভয় দেশই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। কিন্তু সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র থাকাকালেই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নিতে শুরু করে। এর জেরে ১৯৮০ ও ১৯৯০ দশকে দেশ দুটির মধ্যে পুরো মাত্রার একটি যুদ্ধ হয়, এরপর ২০২০ সালে ছয় সপ্তাহের এক যুদ্ধ হলেও ছোট ছোট সংঘর্ষ কয়ে দশক ধরে চলছে।
সর্বশেষ সহিংসতার ঘটনার জন্য উভয় দেশ একে অপরকে দায় দিয়েছে।
আর্মেনিয়া অভিযোগ করে বলেছে, তার প্রতিবেশী সীমান্ত বরাবর বেশ কয়েকটি শহরে গোলাবর্ষণ করেছে আর তারা এই উস্কানির জবাব দিয়েছে।
আজারবাইজান বলেছে, তাদের স্থাপনায়ই প্রথমে হামলা চালানো হয়েছে। দেশটির সামরিক মুখপাত্র লে. কর্নেল আনার এইভাজভ বলেছেন, গত কয়েকমাসের সামরিক গতিবিধিতে ‘বোঝা গেছে আর্মেনিয়া বড় ধরনের সামরিক উস্কানির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল’।
সোমবার রাতভর সংঘর্ষ চলার পর ভোরের দিকে মস্কো জানায়, তারা একটি দ্রুত অস্ত্রবিরতির ব্যবস্থা করছে যা মঙ্গলবার ভোর থেকে কার্যকর হবে।
আর্মেনিয়ার নিকোল পাশিনিয়ন বলেন, “সংঘর্ষের তীব্রতা কমেছে কিন্তু একটি বা দুটি ফ্রন্টে আজারবাইজান থেকে হামলা অব্যাহত আছে।
মঙ্গলবার আজারবাইজান জানায়, ‘আর্মেনিয়ার বড় ধরনের উস্কানিতে’ তাদের সেনা মারা গেছে এবং রাশিয়ার মধ্যস্থতায় হওয়া অস্ত্রবিরতি আর্মেনিয়া লঙ্ঘন করেছে।
ওই দিনই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে কথা বলে আর্মেনিয়ার সঙ্গে ‘বিদ্যমান যুদ্ধবিরতিতে ফিরে যাওয়ার’ আহ্বান জানান।
বিশ্ব সম্প্রদায় এ সংঘর্ষের নিন্দা জানায়। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন উভয় দেশের নেতাকে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে তাদের শান্তিপূর্ণ সমাধানে আসার ও আরও যুদ্ধ ঠেকানোর আহ্বান জানান।
রাশিয়ার আর্মেনিয়ার ঘনিষ্ঠ হলেও ওই অঞ্চলের বৃহৎ এই শক্তি উভয় দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক বজায় রাখে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ‘ব্যক্তিগতভাবে’ মধ্যস্থতায় ভূমিকা রাখছেন।
“সীমান্তে উত্তেজনা হ্রাসে সাহায্য করতে প্রেসিডেন্ট স্বাভাবিকভাবেই সব ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন,” বলেছেন তিনি।
মিত্র তুরস্ক আপাতদৃষ্টিতে ঘটনার আজারবাইজানীয় ভাষ্যকেই সমর্থন করেছে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেছেন, “আর্মেনিয়ার উচিত তার উস্কানি বন্ধ করে শান্তি আলোচনায় মন দেওয়া।”
সোমবার রাতে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াইটি ২০২০ এর যুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে তীব্র ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ এর যুদ্ধে দুই পক্ষের কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল। পরে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি হয় আর আর্মেনিয়া নাগর্নো-কারাবাখের দখলকৃত এলাকাগুলো থেকে তাদের সেনা ফিরিয়ে নেয়।
ওই যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী নাগর্নো-কারাবাখে প্রায় দুই হাজার রুশ শান্তিরক্ষী মোতায়েন আছে এবং তারা এখনও দায়িত্বপালন করে যাচ্ছে।
COMMENTS