জুয়েল হালদার, এনএনবি
‘জাল ফালাইলেই ইলিশ ধরা পড়ছে। কোনো জাইল্যাই সাগর থেইক্যা খালি হাতে ফেরছে না। এবার সাগরে ইলিশের চাপ বেশিই মনে হইতেছে। ইলিশের সাইজও বড়। সাগর থেকে ফিরে কথাগুলো বলছিলেন আফসার মাঝি। তাঁদের সঙ্গে শনিবার বিকেলে কথা হয় কলাপাড়ার মহিপুর মৎস্য বন্দরে। আফসার মাঝিসহ ২৪ জেলে গভীর সাগরে গিয়েছিলেন।
আফসার মাঝি বলছিলেন, গভীর সাগরে গিয়ে এক টানে দুই হাজার ইলিশ ওঠে তাঁর জালে। এক কেজি থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত ওজনের ইলিশ বেশি ধরা পড়েছে তাঁর জালে। ৪০ মণ ইলিশ মাছ পেয়েছেন। বিক্রি করেছেন ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকায়।
তিনি বলেন, গভীর সাগরে (১০০ থেকে ১৫০ হাত গভীর) প্রচুর ইলিশ রয়েছে। বেশি ইলিশ ধরা পড়ায় বাজারে ইলিশের দামও কমে গেছে বলে জানান তিনি।
আরেক জেলে ফজল বলেন, সরকারি আইন মাইন্যা মাছ ধরায় বেশী ইলিশ পাইতাছি, তাই মোগো আয় রোজগারও বাড়তেছে। মোরা সবাই যদি আইন মাইনা ইলিশ ধরতাম তাইলে মোগো আয় আরো বাড়তো।
একই এলাকার রফিক মিয়া নামে এক জেলে এ প্রতিবেদককে বলেন, সরকার আমাদের মত জেলেদের ভিজিএফ চাল দেয়ার পাশাপাশি ইলিশ উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনেককেই বকনা বাছুর এবং গরু পালনের ট্রেনিংও দিয়েছে।
পটুয়াখালীর উপকূলের কুয়াকাটা, মহিপুর, আলীপুর, খালগোড়া, ঢোস, চাড়িপাড়া, গঙ্গামতী, বুড়োজালিয়া, দেবপুরের আড়তগুলোতে ইলিশ মাছ কেনাবেচা চলছে দেদারসে। ৬৫ দিনের অবরোধ উঠে যাওয়ার পর এসব এলাকার বাজারগুলোতে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। তুলনামূলক দামও কম। কলাপাড়া পৌর শহরের লঞ্চঘাট এলাকার মাছবাজার, এতিমখানা মোড়, নিশানবাড়িয়া ব্রিজ-সংলগ্ন মাছের সন্ধ্যা বাজারেও ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে ক্রেতার ভিড়ও ছিল যথেষ্ট।
মৎস্য আড়তদারদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, এবার ৪০০ থেকে ৭০০ গ্রাম পর্যন্ত ইলিশ ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। ৬৫ দিনের অবরোধের আগে এর দর ছিল ৩২ থেকে ৩৩ হাজার টাকা মণ। এ বছর দেড়-দুই কেজি, এমনকি আড়াই কেজি পর্যন্ত ওজনের ইলিশও ধরা পড়ছে। এখন বাজারে তা ৩৯ থেকে ৪০ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। অবরোধের আগে তা ছিল ৪৫-৫০ হাজার টাকা মণ।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজাহারুল ইসলাম বলেন, ২০১৯-২০ সালে জেলায় ইলিশ ধরা পড়েছে ৫১ হাজার ৮৩৯ মেট্রিক টন, ২০২০-২১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৭০ হাজার ২ মেট্রিক টন। তবে ২০২১-২২ সালে কমেছে ৫৭ হাজার ৯৬৬ মেট্রিক টন। তখন আবহাওয়ার কারণে গভীর সাগরে জেলেরা যেতে না পারায় ইলিশ কম ধরা পড়ে। আশা করছেন চলতি বছর জেলেরা আশানুরূপ ইলিশ পাবেন।
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণ
২৩ জুলাই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর থেকেই জেলেরা ছুটেছেন সাগরে। ইলিশও পাচ্ছেন প্রচুর। মৎস্য খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবার ইলিশের উৎপাদন অপেক্ষাকৃত বেশি। এর কারণ কী?
বরিশালের মৎস্য অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক ও ইলিশ গবেষক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে এবার বেশ সফল হয়েছে। সাগরমোহনায় জেলেরা মাছ ধরা থেকে বিরত ছিলেন। এ কারণে অসংখ্য মা ইলিশ ও প্রাপ্তবয়স্ক ইলিশ ধরা পড়া থেকে বেঁচে গেছে। এসব ইলিশই সাগরে ফিরে গিয়ে আকার-আকৃতি ও ওজনে বৃদ্ধি পেয়েছে।
মো. কামরুল ইসলাম জানান, মৎস্য বিভাগের অবৈধ জাল উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনায় জেলেরা আগের তুলনায় বৈধ ও বড় ফাঁসের ভাসান (সাড়ে ৬ সেন্টিমিটার) জালের ব্যবহার বাড়িয়েছেন। তাই ছোট ও মাঝারি ইলিশ ধরা পড়া থেকে বেঁচে যাচ্ছে, যা পরে বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর বিস্তৃত অংশে অভয়াশ্রম থাকায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাসে মৎস্য বিভাগ ও প্রশাসন, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশের সমন্বিত অভিযানের কারণে অসংখ্য ইলিশ আহরণ থেকে বেঁচে গিয়ে আকারে বড় হতে পেরেছে।
মাছ ধরা বন্ধের সময় জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মস্থান ও খাদ্যসহায়তামূলক কার্যক্রমও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক মো. সাজেদুল হক। তিনি বলেন, ‘সরকারি সহায়তা সময়মতো জেলেরা পান না বলে শুনেছি। এসব বিষয়ে আরও আন্তরিক হতে হবে। তা ছাড়া জেলেদের জন্য এসব সুবিধা বাড়ানো গেলে আরও বেশি সুফল পাওয়া যাবে।’
খেপুপাড়া মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণ করার সময়টা সঠিক হয়েছে। এ সময়ে সরকারও যথাযথভাবে ইলিশ সম্পদ রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে পেরেছে। এসব কারণে ইলিশ বেড়েছে।
মাছ ব্যবসায়ীরা যা বলছেন
দেশে প্রতিবছর ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত এক দশকে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে দুই লাখ মেট্রিক টনের বেশি। ২০১১-১২ সালে দেশে ইলিশের উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন। আর সর্বশেষ ২০২০-২১ বছরে উৎপাদন হয়েছে ৫ দশমিক ৬৫ মেট্রিক টন। ইলিশ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় সরকারের নেওয়া বিশেষ কর্মসূচিগুলো এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে ধরা হয়।
মহিপুর মৎস্য আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি দিদার উদ্দিন আহমেদ মাসুম বলেন, গত বছর যে পরিমাণ ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে, এর বাজারমূল্য ২৮ হাজার কোটি টাকার ওপরে। ইলিশের এ ধারাবাহিক উৎপাদন ধরে রাখাও এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নদ-নদী, সাগরমোহনায় পাহারা এবং মৎস্য সংরক্ষণ কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন ও গতিশীল রাখা জরুরি।
আলীপুর মৎস্য আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, মা ইলিশ সংরক্ষণকালীন এবং অবৈধ জাল উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনায় উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযান পরিচালনা করে থাকেন। অভিযান চালাতে গিয়ে অনেক মৎস্য কর্মকর্তা-কর্মচারী জেলেদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এসব সমস্যা মেটাতে যুগোপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
ইলিশের পথ নিরাপদ করতে হবে
ইলিশের দৈহিক বৃদ্ধি ও প্রজননের জন্য মিঠা ও লোনাপানি দুই ধরনের পরিবেশ দরকার। ইলিশ প্রজনন ও বংশ রক্ষার্থে মিঠাপানিতে ডিম ছাড়তে যায়। এই লোনা থেকে মিঠাপানিতে তার যে বিহার, সেই যাত্রাপথ নির্বিঘ্ন ও এর পরিবেশ উন্নত হওয়া দরকার।
মৎস্য গবেষক মো. কামরুল ইসলাম বলছিলেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নদী-নদীর গতিপথ ও নদীর মোহনা প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে। এতে সাগর থেকে নদীতে বা নদী থেকে সাগরে ইলিশের অভিপ্রায়ণ (এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া) পথে অসংখ্য ডুবোচর সৃষ্টি হয়ে ইলিশের চিরচেনা গতিপথে বাধার কারণ হয়েছে। বিশেষ করে নদী-সাগরের সংগমস্থল বা মোহনায় বালু পড়ে অনেকটাই বন্ধ বা সংকুচিত হয়েছে। ইলিশের উৎপাদন সংকটমুক্ত বা ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে দরকার মোহনা সংস্কার বা বালু অপসারণ বা ড্রেজিং করা।
কামরুল ইসলাম বলছিলেন, প্রজননের সময় যত সহজে ইলিশ নিরাপদ অভিপ্রায়ণ করতে পারবে, তত বেশি ইলিশের ধারাবাহিক উৎপাদন সংরক্ষণ হবে।
ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের, প্রকল্প পরিচালক মোঃ জিয়া হায়দার চৌধুরী বলেন, ইলিশের টেকসই উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বর্তমান সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সরকার ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মাধ্যমে জেলেদের ইলিশ ধরার বৈধ জাল দেয়ার পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন উপকরণ ও প্রশিক্ষন দিচ্ছে। তাছাড়া জাটকা নিধন বন্ধে এবং মা ইলিশ রক্ষায় বিভিন্ন ধরেনর কার্যকরী পদেক্ষপের কারেন ইলিশের উৎপাদন অনেক বেড়েছে এবং আগামীতে এ ধারা অব্যাহত থাকবে ।
$type=ticker$c=12$cls=0$b=0
- অপরাধ
- অর্থনীতি
- আইন ও আদালত
- আন্তর্জাতিক
- আবহাওয়া
- আশুলিয়া
- এভিয়েশন
- কক্সবাজার
- কলকাতা
- কিশোরগঞ্জ
- কুড়িগ্রাম
- কুমিল্লা
- কুষ্টিয়া
- কূটনীতি
- কৃষি
- ক্যাম্পাস
- খাগড়াছড়ি
- খুলনা
- খেলা
- গণমাধ্যম
- গাইবান্ধা
- গাজীপুর
- গোপালগঞ্জ
- চট্টগ্রাম
- চাঁদপুর
- চাকরি
- জয়পুরহাট
- জাতীয়
- জাপান
- জামালপুর
- টাঙ্গাইল
- ঠাকুরগাঁও
- ঢাকা
- ঢাবি
- তুরস্ক
- দিনাজপুর
- ধর্ম
- নড়াইল
- নবাবগঞ্জ
- নরসিংদী
- নাটোর
- নির্বাচন
- নীলফামারী
- নেত্রকোণা
- নেপাল
- নোয়াখালী
- পরিবেশ
- পাকিস্তান
- পাবনা
- প্রবাস
- প্রযুক্তি
- ফটো
- ফিলিপাইন
- ফেনী
- বগুড়া
- বরিশাল
- বাং
- বাংলাদেশ
- বাগেরহাট
- বান্দরবান
- বিচিত্র
- বিনোদন
- বিশেষ প্রতিবেদন
- বিশ্ব
- বেনাপোল
- ব্যাংক
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া
- ভারত
- ভুটান
- ভ্রমণ
- মতামত
- ময়মনসিংহ
- মানিকগঞ্জ
- মালয়েশিয়া
- মিয়ানমার
- মুন্সীগঞ্জ
- মেহেরপুর
- যশোর
- যুক্তরাষ্ট্র
- যোগাযোগ
- রংপুর
- রাঙ্গামাটি
- রাজধানী
- রাজনীতি
- রাজশাহী
- রাশিয়া
- লক্ষ্মীপুর
- লালমনিরহাট
- শরীয়তপুর
- শিক্ষা
- শিল্প ও সংস্কৃতি
- শেরপুর
- সংস্কৃতি
- সাতক্ষীরা
- সাভার
- সারাদেশ
- সাহিত্য
- সিলেট
- সুনামগঞ্জ
- স্বাস্থ্য
সর্বাধিক পঠিত$type=one$s=0$rm=0$show=home
সর্বশেষ$type=blogging$l=0$c=12$m=0$s=hide$rm=0$va=0$hide=home
- অপরাধ
- অর্থনীতি
- আইন ও আদালত
- আন্তর্জাতিক
- আবহাওয়া
- আশুলিয়া
- এভিয়েশন
- কক্সবাজার
- কলকাতা
- কিশোরগঞ্জ
- কুড়িগ্রাম
- কুমিল্লা
- কুষ্টিয়া
- কূটনীতি
- কৃষি
- ক্যাম্পাস
- খাগড়াছড়ি
- খুলনা
- খেলা
- গণমাধ্যম
- গাইবান্ধা
- গাজীপুর
- গোপালগঞ্জ
- চট্টগ্রাম
- চাঁদপুর
- চাকরি
- জয়পুরহাট
- জাতীয়
- জাপান
- জামালপুর
- টাঙ্গাইল
- ঠাকুরগাঁও
- ঢাকা
- ঢাবি
- তুরস্ক
- দিনাজপুর
- ধর্ম
- নড়াইল
- নবাবগঞ্জ
- নরসিংদী
- নাটোর
- নির্বাচন
- নীলফামারী
- নেত্রকোণা
- নেপাল
- নোয়াখালী
- পরিবেশ
- পাকিস্তান
- পাবনা
- প্রবাস
- প্রযুক্তি
- ফটো
- ফিলিপাইন
- ফেনী
- বগুড়া
- বরিশাল
- বাং
- বাংলাদেশ
- বাগেরহাট
- বান্দরবান
- বিচিত্র
- বিনোদন
- বিশেষ প্রতিবেদন
- বিশ্ব
- বেনাপোল
- ব্যাংক
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া
- ভারত
- ভুটান
- ভ্রমণ
- মতামত
- ময়মনসিংহ
- মানিকগঞ্জ
- মালয়েশিয়া
- মিয়ানমার
- মুন্সীগঞ্জ
- মেহেরপুর
- যশোর
- যুক্তরাষ্ট্র
- যোগাযোগ
- রংপুর
- রাঙ্গামাটি
- রাজধানী
- রাজনীতি
- রাজশাহী
- রাশিয়া
- লক্ষ্মীপুর
- লালমনিরহাট
- শরীয়তপুর
- শিক্ষা
- শিল্প ও সংস্কৃতি
- শেরপুর
- সংস্কৃতি
- সাতক্ষীরা
- সাভার
- সারাদেশ
- সাহিত্য
- সিলেট
- সুনামগঞ্জ
- স্বাস্থ্য
COMMENTS