আশিকুর রহমান, নরসিংদী
নরসিংদীতে শীতকালীন সবজি ও রবি শষ্য চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কেউ জমি তৈরি করছেন, কেউ জমিতে বীজ বা চারা রোপণ করছেন। আবার কেউ জমিতে গজিয়ে ওঠা সবজির চারা গাছের পরিচর্যা করছেন। ক্ষেতের পর ক্ষেত যেদিকে চোখ যায় শুধু শীতের সবজি চাষাবাদের দৃশ্য। সবজি ক্ষেত নিংড়ানো, আগাছা পরিষ্কার ও পানি দিতে ব্যস্ত কৃষক-কৃষাণীরা। জেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে শোভা পাচ্ছে শশা, ফুলকপি,বাঁধাকপি, মুলা, মটর শুটি, মরিচ, আলু, সিম, টমেটো, ধনিয়া, পটল, বেগুন, কাকরুল, ঢেঁড়শ, শসা, লাউ, পালং ও লাল শাকসহ রকমারি শীতের সবজি। পাশাপাশি গম ও সরষে চাষাবাদও সন্তোষজনক। এমন দৃশ্য জেলার সদর উপজেলা ও শিবপুর উপজেলায় ঘুরে দেখা যায়। শিল্পনগর খ্যাত হলেও নরসিংদী জেলা সবজি উৎপাদনে সুনাম অর্জন করেছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী সহ বিভিন্ন জেলায় এসব সবজি রপ্তানি হয়ে থাকে। এবার নরসিংদী জেলায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টরেরও বেশী আবাদী জমিতে শীতকালীন শাকসবজি ও রবিশস্যের চাষ করা হচ্ছে বলে জানা যায়।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, এবার জেলার ৬টি উপজেলার ৭টি থানায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টরেরও বেশী আবাদী জমিতে শীতকালীন শাকসবজি ও রবিশস্যের চাষ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং দুইয়ে মিলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৩৩ লক্ষ মেট্রিক টন। সেই লক্ষ্য মাত্রা অর্জনের জন্য কৃষকরা মাঠে ব্যস্তসময় পার করছেন। এবার জেলায় অসময়ে অতিবৃষ্টি ও অকাল ঝড়ের কারণে শীতকালীন আগাম শাকসবজি ও রবিশস্য চাষাবাদে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এতে ভরা মৌসুমেও সবজির বাজারগুলোতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে যায় শীতকালীন শাকসবজির। অতিবৃষ্টি ও ঝড় কাটিয়ে দফায় দফায় চারা তৈরির পর এখন শাকসবজির পাশাপাশি রবিশস্যের উৎপাদন বাড়িয়েছেন কৃষকরা। পাশাপাশি পরিচর্যায়ও ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এর ফলে স্থানীয় বিভিন্ন হাটবাজার গুলোতে আগাম শীতকালীন শাকসবজি উঠতে শুরু করেছে।
শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের জয়মঙ্গল গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, এ বছর তিনি তার ৫ বিঘা জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, পটল ও শিমের চাষ করেছেন। অসময়ে বৃষ্টি ও ঝড়ে প্রথমদিকে চারা ও বীজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পূণরায় আবার চারা ও বীজ এনে রোপন করা হয় এবং ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। তিনি আরও জানান, ক্ষেত থেকে লাউ ও ফুলকপি উত্তোলন করে বাজারে নিয়ে প্রতিপিছ লাউ ৬০ টাকা ও ফুলকপি প্রতিপিছ ৪০ টাকা ধরে বিক্রি করেছি। আশাকরি এবছর প্রায় একলক্ষ টাকার সবজি বিক্রি করতে পারবো। এ বছর বীজ ও চারার দাম চড়া হওয়ায় বাজারে সবজির দামও চড়া। তাই আমাদের চড়া দামেই সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে।
একই গ্রামের আরেক কৃষক মারুফ বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার সবজির ক্ষেত দেখাশোনা করি এবং কৃষি কাজে বাবাকে সহযোগিতা করি। অন্যান্য ফসলের চেয়ে শীতকালীন সবজি চাষ করে বেশি লাভবান হওয়া যায়। এ কারণে আমি ও আমার বাবা প্রতিবছরই সবজি চাষ করি, তাতে বাজারে উৎপাদিত পণ্যের চাহিদাও থাকে আবার লাভবান হওয়া যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকতা বলেন, বৃষ্টি ও ঝড়ের ফলে সবজির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে কৃষি অধিদপ্তর। এরইমধ্যে আমরা কৃষকদের মাঝে প্রণোদনাস্বরূপ সার ও বীজ বিতরণ করেছি। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সার, বীজ ও রোগবালাই কীটনাশকও বিতরণ করা হয়েছে।
COMMENTS