বিশেষ প্রতিনিধি
বাংলাদেশ রেলওয়ে স্থানীয় যাত্রীদের সুবিধার্থে পুনরায় চালু করতে যাচ্ছে ৯৩টি কমিউটার ট্রেন, যা বন্ধ ছিল ইঞ্জিন ও কোচ সংকটসহ নানান প্রতিকূলতার কারণে। বিশেষ করে স্বল্প-দূরত্বে ভ্রমণকারী যাত্রী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য এই ট্রেনগুলো একসময় ছিল অপরিহার্য। নতুন উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে, স্বল্প ও মাঝারি দূরত্বের ভ্রমণ সহজতর হবে, যা জনগণের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
স্থানীয় যাত্রীদের সুবিধার্থে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভ্রমণ সহজ করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে নতুন করে ৯৩টি বন্ধ কমিউটার ট্রেন চালুর পরিকল্পনা করছে। এ ট্রেনগুলো গত ১৫ বছরে ইঞ্জিন, কোচ ও জনবলের সংকটের কারণে বন্ধ করা হয়েছিল, যদিও আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা ছিল।
বিশেষ করে, ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় এই বন্ধের সংখ্যা বেড়ে যায়। এই ট্রেনগুলোর মধ্যে কয়েকটি ৫০ বছরের পুরনো, যা এখন সংস্কারের মাধ্যমে আবারও চালু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রী পরিষেবা হিসেবে ট্রেনগুলোকে ব্যবহার করা হবে।
এর মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হলো ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস, যা ১৯৭২ সালে চালু হয় এবং পাঁচটি জেলায় ৩৪টি স্টেশনে থামত। বিস্তীর্ণ হাওর এলাকার কর্মজীবী মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এই ট্রেনটিকে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবহার করতেন।
এছাড়াও চট্টগ্রাম-সিলেট রুটের জালালাবাদ এক্সপ্রেস ছিল সাত জেলার মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম। ময়মনসিংহ থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় দুইটি ট্রেন সকাল-বিকাল চলাচল করত, যা কর্মজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল অন্যতম ভরসা।
সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় চলাচল করা চারটি ট্রেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিত্যদিনের ব্যবসায়িক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত এক দশকে ইঞ্জিন ও কোচ আমদানি করা হলেও দ্বিতীয় শ্রেণির কমিউটার ট্রেন পুনরায় চালু করার ব্যাপারে সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অনাগ্রহ দেখা গেছে। ফলে, নতুন ইঞ্জিন ও কোচ রাজনৈতিক বিবেচনায় অন্যত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা চিন্তা করছি কিভাবে দ্বিতীয় শ্রেণির ট্রেনগুলোকে পুনরায় চালু করা যায়। আন্তঃনগর ট্রেনের পুরানো কোচগুলোকে কনভার্ট করে চালানোর একটি পরিকল্পনা করছি।"
এদিকে, সেপ্টেম্বর মাসে রেলওয়ের পক্ষ থেকে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের বন্ধ থাকা ট্রেনগুলোর তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই তালিকা রেলভবনে পাঠানো হয়েছে।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, "পূর্বাঞ্চলে নিয়মিত ৮৩০টি কোচ এবং ৬৩টি ইঞ্জিন থাকলেও, ইঞ্জিন সংকটের কারণে প্রতিদিন কিছু ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে।"
রেলওয়ের টাইমটেবিল অনুযায়ী, দেশে মোট ৩৮৩টি ট্রেন চলাচলের কথা থাকলেও, বাস্তবে চলছে মাত্র ২৮৪টি ট্রেন। এরমধ্যে পূর্বাঞ্চলে ৫০টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে ৪৯টি ট্রেন বন্ধ রয়েছে। এই বন্ধ ট্রেনগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই দ্বিতীয় শ্রেণির লোকাল, মেইল এবং কমিউটার ট্রেন।
রেলের পরিবহন ও যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ৩৮৩টি ট্রেন চালাতে ৫০০টির বেশি ইঞ্জিন এবং ৩,০০০টির বেশি কোচের প্রয়োজন, কিন্তু বর্তমানে সচল ইঞ্জিনের সংখ্যা মাত্র ২০০ এবং সচল কোচের সংখ্যা ২,০০০ এর কিছু বেশি।
এছাড়াও, পূর্বাঞ্চলে ১১৩১টি কোচ ও ৭৬টি ইঞ্জিন সচল থাকলেও পুরো কার্যক্রম চালাতে প্রয়োজন ১১৬টি ইঞ্জিন ও ১৫০০টির বেশি কোচ। অন্যদিকে, পশ্চিমাঞ্চলে প্রয়োজনীয় ইঞ্জিন ও কোচ থাকলেও, ক্রু বা চালকের সংকট দেখা দিয়েছে, যেখানে ৩০ শতাংশ চালক ও ক্রু সংকট রয়েছে।
মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী জানান, ক্রু সংকট কাটাতে অবসরে যাওয়া চালকদের চুক্তিভিত্তিক পুনর্নিয়োগের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
রেলওয়ে বিভাগ গত এক দশকে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ব্যয় করলেও, ইঞ্জিন ও কোচের যথাযথ পরীক্ষা না করে কেনা এবং ব্যবহারের অক্ষমতা রেলের উন্নয়নে বড় ধরনের বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে আরও ৩০০টি ইঞ্জিন আমদানি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তবে তা কার্যকর হতে দুই বছর সময় লাগবে। এ অবস্থায়, রেল সেবার স্বল্পতা এবং লোকসানের পরিমাণ বাড়ছেই।
সূত্র: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
বাংলাদেশ রেলওয়ে স্থানীয় যাত্রীদের সুবিধার্থে পুনরায় চালু করতে যাচ্ছে ৯৩টি কমিউটার ট্রেন, যা বন্ধ ছিল ইঞ্জিন ও কোচ সংকটসহ নানান প্রতিকূলতার কারণে। বিশেষ করে স্বল্প-দূরত্বে ভ্রমণকারী যাত্রী এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য এই ট্রেনগুলো একসময় ছিল অপরিহার্য। নতুন উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে, স্বল্প ও মাঝারি দূরত্বের ভ্রমণ সহজতর হবে, যা জনগণের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
স্থানীয় যাত্রীদের সুবিধার্থে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভ্রমণ সহজ করতে বাংলাদেশ রেলওয়ে নতুন করে ৯৩টি বন্ধ কমিউটার ট্রেন চালুর পরিকল্পনা করছে। এ ট্রেনগুলো গত ১৫ বছরে ইঞ্জিন, কোচ ও জনবলের সংকটের কারণে বন্ধ করা হয়েছিল, যদিও আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনগুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা ছিল।
বিশেষ করে, ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় এই বন্ধের সংখ্যা বেড়ে যায়। এই ট্রেনগুলোর মধ্যে কয়েকটি ৫০ বছরের পুরনো, যা এখন সংস্কারের মাধ্যমে আবারও চালু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় শ্রেণির যাত্রী পরিষেবা হিসেবে ট্রেনগুলোকে ব্যবহার করা হবে।
এর মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হলো ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস, যা ১৯৭২ সালে চালু হয় এবং পাঁচটি জেলায় ৩৪টি স্টেশনে থামত। বিস্তীর্ণ হাওর এলাকার কর্মজীবী মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এই ট্রেনটিকে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবহার করতেন।
এছাড়াও চট্টগ্রাম-সিলেট রুটের জালালাবাদ এক্সপ্রেস ছিল সাত জেলার মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম। ময়মনসিংহ থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় দুইটি ট্রেন সকাল-বিকাল চলাচল করত, যা কর্মজীবী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল অন্যতম ভরসা।
সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় চলাচল করা চারটি ট্রেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিত্যদিনের ব্যবসায়িক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত এক দশকে ইঞ্জিন ও কোচ আমদানি করা হলেও দ্বিতীয় শ্রেণির কমিউটার ট্রেন পুনরায় চালু করার ব্যাপারে সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অনাগ্রহ দেখা গেছে। ফলে, নতুন ইঞ্জিন ও কোচ রাজনৈতিক বিবেচনায় অন্যত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা চিন্তা করছি কিভাবে দ্বিতীয় শ্রেণির ট্রেনগুলোকে পুনরায় চালু করা যায়। আন্তঃনগর ট্রেনের পুরানো কোচগুলোকে কনভার্ট করে চালানোর একটি পরিকল্পনা করছি।"
এদিকে, সেপ্টেম্বর মাসে রেলওয়ের পক্ষ থেকে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের বন্ধ থাকা ট্রেনগুলোর তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই তালিকা রেলভবনে পাঠানো হয়েছে।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, "পূর্বাঞ্চলে নিয়মিত ৮৩০টি কোচ এবং ৬৩টি ইঞ্জিন থাকলেও, ইঞ্জিন সংকটের কারণে প্রতিদিন কিছু ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটছে।"
রেলওয়ের টাইমটেবিল অনুযায়ী, দেশে মোট ৩৮৩টি ট্রেন চলাচলের কথা থাকলেও, বাস্তবে চলছে মাত্র ২৮৪টি ট্রেন। এরমধ্যে পূর্বাঞ্চলে ৫০টি এবং পশ্চিমাঞ্চলে ৪৯টি ট্রেন বন্ধ রয়েছে। এই বন্ধ ট্রেনগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই দ্বিতীয় শ্রেণির লোকাল, মেইল এবং কমিউটার ট্রেন।
রেলের পরিবহন ও যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ৩৮৩টি ট্রেন চালাতে ৫০০টির বেশি ইঞ্জিন এবং ৩,০০০টির বেশি কোচের প্রয়োজন, কিন্তু বর্তমানে সচল ইঞ্জিনের সংখ্যা মাত্র ২০০ এবং সচল কোচের সংখ্যা ২,০০০ এর কিছু বেশি।
এছাড়াও, পূর্বাঞ্চলে ১১৩১টি কোচ ও ৭৬টি ইঞ্জিন সচল থাকলেও পুরো কার্যক্রম চালাতে প্রয়োজন ১১৬টি ইঞ্জিন ও ১৫০০টির বেশি কোচ। অন্যদিকে, পশ্চিমাঞ্চলে প্রয়োজনীয় ইঞ্জিন ও কোচ থাকলেও, ক্রু বা চালকের সংকট দেখা দিয়েছে, যেখানে ৩০ শতাংশ চালক ও ক্রু সংকট রয়েছে।
মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী জানান, ক্রু সংকট কাটাতে অবসরে যাওয়া চালকদের চুক্তিভিত্তিক পুনর্নিয়োগের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
রেলওয়ে বিভাগ গত এক দশকে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ব্যয় করলেও, ইঞ্জিন ও কোচের যথাযথ পরীক্ষা না করে কেনা এবং ব্যবহারের অক্ষমতা রেলের উন্নয়নে বড় ধরনের বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে আরও ৩০০টি ইঞ্জিন আমদানি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তবে তা কার্যকর হতে দুই বছর সময় লাগবে। এ অবস্থায়, রেল সেবার স্বল্পতা এবং লোকসানের পরিমাণ বাড়ছেই।
সূত্র: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
COMMENTS