![]() |
বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে তিন দিন ধরে লাগাতার আন্দোলন করছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত |
এনএনবি, ঢাকা
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা বলেছেন,
তাঁরা সকল রাজনৈতিক ও নিষিদ্ধ সংগঠন থেকে বুয়েটকে মুক্ত রাখার ব্যাপারে
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
রবিবার (৩১ মার্চ, ২০২৪) সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা আবারও স্পষ্টভাবে জানিয়ে
দিচ্ছি যে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা সব ধরনের ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে। আমরা
মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী।'
আন্দোলনকারীদের সাথে জামায়াত-শিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।
তারা আরও বলেন, 'যদি বুয়েটের কোনো শিক্ষার্থীর শিবির সংশ্লিষ্টতার
প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে আমরা তাৎক্ষণিক তাঁদের বহিষ্কারের দাবি জানাব।'
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা শপথ করছি 'জীবনের ক্ষতি করে’ এমন সব ধরনের
ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে। আমরা আবরার ফাহাদ ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিব না।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, বুয়েটের ২০ তম ব্যাচের মোট শিক্ষার্থী এক
হাজার ২১৫ জন। তাঁদের মধ্যে এক হাজার ২১৩ জনই আজ অনুষ্ঠিত ফাইনাল পরীক্ষায়
বসেননি।
‘এ থেকেই শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত নৈতিক অবস্থান ক্যাম্পাসে পুনরায় ছাত্র
রাজনীতি প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে কতটুকু সুদৃঢ়, তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়’, বলেন
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আরও বলেন ‘ক্যাম্পাসের রাজনীতি মুক্ত থাকা, অপশক্তির
কবল থেকে মুক্ত থাকা এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে আমরা সকল ব্যাচের শিক্ষার্থী
অনতিবিলম্বে আমাদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে ফেরত যাবো।’
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে (২৮ মার্চ,
২০২৪) ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা বুয়েট ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করে রাজনৈতিক
কার্যক্রম চালায়। এ ঘটনার প্রতিবাদে ও ছয় দফা দাবি আদায়ে শুক্রবার (২৯ মার্চ,
২০২৪) থেকে আন্দোলন করছে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত বুয়েট শিক্ষার্থীরা রবিবার সকাল সাতটা থেকে বুয়েট শহিদ মিনারে জড়ো
একত্রিত হওয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তাজনিত ‘তীব্র শঙ্কার কারণে’ আন্দোলনকারীরা
কেউই ক্যাম্পাসে অবস্থান নেননি। সন্ধ্যার দিকে করা সাংবাদিক সম্মেলনে তারা এ
তথ্য জানান।
আন্দোলন থেকে সরে আসার জন্য শনিবার রাত থেকেই একাধিক অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন
করে নানান ধরনের হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে বলে এসময় অভিযোগ করেন বুয়েটের
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ওইদিন বুয়েটের ঠিক পাশেই অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এক প্রতিবাদী
সমাবেশ করেছে ছাত্রলীগ। সমাবেশে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা
প্রত্যাহার এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইমতিয়াজ রাব্বির হলের সিট ফিরিয়ে দিতে
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়েছে ছাত্রলীগ।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের একটি ইউনিটের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি বলেন,
'আমাদের এক ভাই স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। এ কারণে তার আবাসিক
হলের সিট বাতিল করা হয়েছে। আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার সিট ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি
জানাই।'
তিনি বলেন, 'দাবি না মানলে যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কথা বলছেন, আমরাও তাদের
বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করব এবং কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।'
কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়টি
'অসাংবিধানিক, শিক্ষা পরিপন্থি ও মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন' বলেও অভিহিত করেন।
ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি ফিরিয়ে আনার দাবির পাশাপাশি কর্মসূচি থেকে ছাত্রলীগ
সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বুয়েটে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি
জানান।
তিনি বলেন, ‘আদালত এবং রাজপথ দুই জায়গাতেই ছাত্রলীগ একই সাথে লড়বে।
নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বুয়েটে
তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম আবারও শুরু করবে।’
সমাবেশ শেষে দুপুরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মৌন মিছিল নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে
প্রবেশ করলে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুটা ভীতির সঞ্চার হয়।
যদিও ক্যাম্পাসের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল
দিয়ে তাঁরা বুয়েট ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
অন্যদিকে, ছাত্র রাজনীতির ব্যাপারে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই সিদ্ধান্ত নিবেন বলে
জানিয়েছেন বুয়েটের উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার।
COMMENTS