
সাবা বিনতে মুরতাজ
এনএনবি, ঢাকা
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব বাকু ফোরামের সমাপনী সন্ধ্যায় ভাস্কর হেদভা সেরের হাত থেকে ‘ট্রি অব পিস’ স্মারক উপহারটি গ্রহণ করেন। যদিও বিভ্রান্ত
ইউনূস সেন্টার স্মারক উপহারটিকে ইউনেস্কোর পুরস্কার হিসেবে প্রচার করে।
ইউনূস সেন্টার কীভাবে বিভ্রান্ত হলো এবং ‘ট্রি অব পিস’ স্মারক উপহারটির
আদ্যোপান্ত এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
ইসরাইলি বংশোদ্ভূত ফরাসি ভাস্কর হেদভা সেরের তৈরি ‘ট্রি অব পিস’ ভাস্কর্যটির
ছোটো রেপ্লিকা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা গুণিজনদের সম্মানার্থে
স্মারক উপহার হিসেবে প্রদান করা হয়।
নারী ও কন্যাশিশুদের শিক্ষার প্রসারে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ২০১৪ সালের ৮
সেপ্টেম্বর ঢাকায় আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এই স্মারক উপহার তুলে দেন ইউনেস্কোর
তৎকালীন মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা।
বিভিন্ন সময় ইউনেস্কোর শুভেচ্ছা দূত হিসেবে ভাস্কর হেদভা সের শান্তি প্রতিষ্ঠায়
অবদান রাখা বিশিষ্টজনদের ‘ট্রি অব পিস’ ভাস্কর্যের স্মারক উপহারটি
দিয়েছেন।
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সালে অ্যাঙ্গোলা প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি, মিস্টার জোয়াও
লোরেনোকে ভাস্কর হেদভা সের এই স্মারক উপহার প্রদান করেন।
গত বছর ১৫ মার্চ, ‘নিজামী গানজাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার’ আয়োজিত বাকুতে
গ্লোবাল ফোরামের সমাপনী সন্ধ্যায়, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কৈলাশ
সত্যার্থীকেও ‘ট্রি অব পিস’ স্মারক উপহারটি দেন ইউনেস্কোর এই শুভেচ্ছা দূত।
‘ট্রি অব পিস’ আসলে কী?
![]() |
জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাস্কর হেদভা সের ও তাঁর ভাস্কর্য ‘ট্রি অব পিস’। ছবি: হেদভা সেরের সৌজন্যে |
ভাস্কর হেদভা সেরের তৈরি একটি ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য ‘ট্রি অব পিস’ নামে
বিশ্বজুড়ে শান্তির প্রতীক হিসেবে সমাদৃত।
‘ট্রি অব পিস’ ভাস্কর্যটির প্রথম অংশটি হল "চাই" প্রতীক, যা বাইবেলে জীবনকে
বোঝায়।
দ্বিতীয় অংশটি হল "শিন", যা হিব্রুতে, ‘শালোম’ শব্দের প্রথম অক্ষর এবং আরবিতে
‘সালাম’ শব্দের প্রথম অক্ষর। ‘শালোম’ এবং ‘সালাম’ দু’টি শব্দের অর্থই
শান্তি।
গাছের ভাস্কর্যের তৃতীয় অংশটি হলো আশা এবং স্বাধীনতার বার্তাবাহক ডালে বসা
ঘুঘু পাখি যা মানুষের মধ্যে শান্তি এবং ভালোবাসার আহ্বান জানায়।
এবং, অবশেষে, চতুর্থ অংশটি হলো একটি অর্ধচন্দ্র, যা ইসলামের প্রতীক।
‘ট্রি অব পিস’ সর্বজনীন, এবং বিভিন্ন জাতির মধ্যকার সন্ধির প্রতীক হিসাবে তৈরি
করেন হেদভা সের। শিল্পীর ভাষ্যমতে, ভাস্কর্যটি দ্বন্দ্ব নিরসনের পাশাপাশি
বিশ্বের জনগণের মধ্যে শান্তি উদ্যাপন করার আহ্বান জানায়।
৩০ ডিসেম্বর, ২০০৭ সালে ডা. অ্যালেন ফিঙ্কেলস্টাইনের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘ট্রি অব
পিস’ সর্বপ্রথম স্থাপিত করা হয় জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং
হাদ্দাসা হাসপাতালের পাহাড়ে।
এরপর বিভিন্ন বিশিষ্টজনের পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে
শান্তির প্রতীক হিসেবে এই ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতেই ২০১৭ সালে ভাস্কর হেদভা সেরকে শুভেচ্ছা দূত মনোনীত করে
ইউনেস্কো।
ইউনূস সেন্টারের বিভ্রান্তি!
শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব বাকু ফোরামের সমাপনী নৈশভোজের পর
ভাস্কর হেদভা সেরের হাত থেকেই এই সম্মাননা স্মারক উপহারটি গ্রহণ করেন। যদিও
ইউনূস সেন্টার স্মারক উপহারটিকে ইউনেস্কোর পুরস্কার হিসেবে প্রচার করে।
বুধবার (২৭ মার্চ, ২০২৪) স্মারক উপহারটিকে ইউনেস্কোর পুরস্কার নামে প্রচার করে
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী
মহিবুল হাসান চৌধুরী।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন,‘পদাধিকার বলে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফর কমিশন ফর ইউনেস্কোর
(বিএনসিউ) চেয়ারম্যান আমি। আমার সঙ্গে বিএনসিউর ডেপুটি সেক্রেটারি জুবাইদাও
উপস্থিত আছেন। কিছুদিন আগে একটি প্রকাশিত সংবাদ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সেটি
হচ্ছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো একটি পুরস্কার দিয়েছে বলে প্রচার করা
হচ্ছে। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে ইউনেস্কোর সদর দফতরে যোগাযোগ করেছি। সেখান থেকে তারা
নিশ্চিত করেছেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো কোনো সম্মাননা দেয়নি।’
নিজামী গানজাভি ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে ড. ইউনূসকে ভাস্কর হেদভা সের এটা দিয়েছেন
বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ, ২০২৪) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইউনূস
সেন্টার জানায়, নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে আজারবাইজানের বাকুতে
মার্চ ১৪-১৬, ২০২৪ অনুষ্ঠিত একাদশ বিশ্ব বাকু ফোরামে বিশেষ বক্তা হিসেবে ভাষণ
প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানান হয়েছিল। বাকু ফোরামের আয়োজক ‘নিজামী গানজাভি
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার’-এর মহাসচিব রভশান মুরাদভ প্রফেসর ইউনূসকে পাঠানো
ইমেইলে জানান যে, এই সম্মেলনে বক্তব্য রাখা ছাড়াও এর সমাপনী দিনে প্রফেসর
ইউনূসকে ইউনেস্কো প্রদত্ত একটি পুরস্কার প্রদান করা হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘নিজামী গানজাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার’ থেকে
প্রফেসর ইউনূসকে পাঠানো বাকু ফোরামের অফিসিয়াল প্রোগ্রামেও প্রফেসর ইউনূস
ইউনেস্কো’র পুরস্কার গ্রহণ করবেন বলে উল্লেখ আছে। প্রফেসর ইউনূসকে বাকু ফোরামের
সমাপনী ডিনারে যোগদানের বিষয়টি বিশেষভাবে মনে করিয়ে দেয়া হয় যাতে তিনি ‘ট্রি অব
পিস’ পুরস্কারটি গ্রহণের জন্য স্টেজে সশরীরে উপস্থিত থাকেন। ইউনূস সেন্টার এ
কারণে প্রেস রিলিজে ইউনেস্কোর পুরস্কারের বিষয়টি উল্লেখ করে।’
COMMENTS