![]() |
বাঁ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ হালিম, এবং অভিযুক্ত শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন। ছবি: সংগৃহীত |
এনএনবি, ঢাকা
ডিবিতে গিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীমকে বিরক্ত না করার অঙ্গিকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের অভিযুক্ত শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন ও বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম।
বুধবার (২০ মার্চ, ২০২৪) রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে কাজী ফারজানা মীমের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত শিক্ষকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘দুই পক্ষকে আমরা ডেকেছি। ভুক্তভোগী মীম আমাদের কাছে আবদার করেছে, সে যেন স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে। আর যেন কেউ বিরক্ত না করে। আমরা বিষয়টি শিক্ষকদের বলেছি। তারা বলেছে, আমরা কোনো বিরক্ত করব না।’
হারুন অর রশীদ আরও বলেন, ‘এরপরেও যদি মীমকে কেউ বিরক্ত করে তাহলে মীমকে বলা হয়েছে আমাদের ডিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে যেন জানানো হয়। তারা পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেবে।’
যদিও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গণমাধ্যমের সামনে মীমের যৌন হয়রানির অভিযোগটিকে কাল্পনিক ঘটনার মিথ্যা অভিযোগ বলে মন্তব্য করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন।
এছাড়া বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম দাবি করেন, মিম দ্বিতীয় ও সপ্তম সেমিস্টারের ক্লাস না করায় ও অ্যাসাইনমেন্ট জমা না দেওয়ায় তার রেজাল্ট ফেল এসেছে।
শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন বলেন, ‘২০১৯ সালে ঘটনার কথা উল্লেখ করে ২০২২ সালে এসে কাল্পনিক একটি অভিযোগ দেয়। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্ল্যাকার্ড নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। এমনকি ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের তদন্তের দীর্ঘসূত্রতার ফলে দুই বছরেও ফলাফল পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় উচ্চ আদালতে যাওয়া ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার বিষয়ে ডিবি আমাদের ডেকেছে। এই বিষয়ে তারা যা জানতে চেয়েছে আমরা সেই তথ্য দিয়েছি।’
অভিযোগের বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিম বলেন, ‘এখানে দুই ধরনের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে ডিবিপ্রধান আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। যৌন হয়রানির বিষয়টি নিয়ে আদালতে কার্যক্রম চলছে। তাই এটা নিয়ে আমরা কথা বলতে পারছি না।’
ভাইভা পরীক্ষায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শূন্য পাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্টের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার একটা নিয়ম আছে। পরীক্ষকরা গোপন খামে সিলগালা করে নম্বরপত্র পাঠান। ও (ভুক্তভোগী ছাত্রী) ঠিকমতো ক্লাসে আসতো না। দ্বিতীয় সেমিস্টারের একটি কোর্সে অ্যাসাইনমেন্ট ও উপস্থিতি মিলিয়ে ৪০ মার্ক থাকে। সে এইটার কোনো কার্যক্রমে যোগ দেয়নি। ফলে সে শূন্য পেয়েছে। এছাড়াও সপ্তম সেমিস্টারে চারটি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়নি। ফলে সবমিলিয়ে ২৩ পেয়েছিল। যেহেতু ৪০ মার্কে পাস, তাই রেজাল্ট শিটে শূন্য এসেছে।’
এ সময় কাজী ফারজানা মীম উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মিডিয়ায় বক্তব্য দেওয়ার কারণে অভিযুক্ত শিক্ষকরা নানা মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখাচ্ছিলেন। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম। এ নিয়ে ডিবিতে অভিযোগ দিয়েছিলাম। আজ তারা এ বিষয়ে অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে ডেকেছিল। ডিবির প্রধান তাদের বলে দিয়েছেন, যেন আমাকে কোনোভাবে হুমকি না দেওয়া হয়।’
পরীক্ষায় শূন্য পাওয়ার বিষয়ে মীম বলেন, ‘তারা আমাকে শূন্য দেওয়ার বিষয়ে বানোয়াট কথা বলেছে। আমি পরীক্ষা দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাকে অনুপস্থিত দেখিয়েছেন। এই ঘটনা আমার যৌন হয়রানির অভিযোগেও উল্লেখ করেছি।’
এর আগে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী ১৮ মার্চ, ২০২৪ দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে যেয়ে অভিযোগ জানান। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতেই আজ দুই শিক্ষককে ডাকা হয়েছে। অভিযোগকারী শিক্ষার্থী মঙ্গলবার একই ঘটনায় রাষ্ট্রপতির কাছেও অভিযোগ নিয়ে যান। এ ছাড়া তার বিভাগের দুই শিক্ষক তাকে বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছে তার প্রতিকার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বরাবর এ আবেদন করেন।
COMMENTS