![]() |
ফাইরুজ অবন্তিকা (ফাইল ছবি) |
এনএনবি, ঢাকা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাইরুজ
অবন্তিকা একজন সহকারী প্রক্টর ও তাঁর একজন সহপাঠীকে দায়ী করে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা
করেছেন।
শুক্রবার (১৫ মার্চ, ২০২৪) রাত ১০টার দিকে কুমিল্লায় নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস নিয়ে
আত্মহত্যা করেন ফাইরুজ অবন্তিকা।
এর আগে অবন্তিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে দায়ী করে দীর্ঘ একটি পোস্ট দেন। সেখানে অবন্তিকার
সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী দ্বারা তাঁর সাথে হওয়া যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের
নিপীড়নের কথা প্রকাশ করেন। পোস্টটিতে আম্মান সিদ্দিকীর পক্ষ নিয়ে সহকারী
প্রক্টর দ্বীন ইসলাম দ্বারা তাঁর সাথে হওয়া মানসিক নিপীড়ন এবং অকথ্য ভাষায়
গালাগাল করার বিষয়টির উল্লেখ আছে।
ফাইরুজ অবন্তিকার ফেসবুক পোস্টটি দেখে তাঁর সহপাঠীরা ফোন করলে পরিবারের
সদস্যদের মাধ্যমে তাঁর আত্মহত্যার বিষয়টি জানতে পারেন। পরিবারের সদস্যরা ও
কুমিল্লায় অবস্থানরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী ঝুলন্ত অবস্থায়
ফাইরুজ অবন্তিকাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার আগে
অবন্তিকার নাড়ির স্পন্দন (পালস) পাওয়া গেলেও, হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক পরীক্ষা–নিরীক্ষা
শেষে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আম্মান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে ওনার সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করিনি। এমনকি ফেসবুক, মেসেঞ্জার বা কোনো জায়গাতেই কানেকটেড না আমি। আমাকে দোষী প্রমাণের জন্য এভিডেন্স লাগবে। এভিডেন্স ছাড়া এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।
সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম বলেন,
‘মেয়েটাকে দেখি ১ থেকে দেড় বছর আগে। তারা কয়েকজন সহপাঠী প্রক্টর অফিসে আসে।
সেসময় তৎকালীন প্রক্টর মোস্তফা কামাল স্যার, আমিসহ আরো কয়েকজন সহকারী প্রক্টর
অফিসে ছিলাম। মেয়েটা ফেক আইডি ব্যবহার করে তার বন্ধুদের এসএমএস দিত। এটা নিয়ে
থানায় জিডি হয়েছে বলে আমাদেরকে জানানো হয়। পরে মেয়েটা স্বীকার করে। এরপর তার
পরিবারের লোকজন অনুরোধ করে জিডি তুলে নেওয়ার জন্য। তখন সকল প্রক্টরিয়াল টিম
মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেয়, তিন মাস পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কোনো ঝামেলা না হলে
জিডি তুলে নেওয়া হবে। আমি কখনো মেয়েটার সঙ্গে একা কথা বলিনি। সিসিটিভি ফুটেজ বা
প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ দেখলেও বোঝা যাবে। আপনারা ঘটনা তদন্ত করে দেখুন।
আমি দোষী হলে শাস্তি দিন। কিন্তু আগেই আমাকে দোষী বানাবেন না দয়া করে। না হলে
আমারও সুইসাইড করা লাগবে।’
এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জগন্নাথ
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জাহাঙ্গীর হোসেন। উপাচার্য সাদেকা হালিমের নির্দেশে
তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার এবং সহকারী প্রক্টরকে সাময়িক অব্যাহতি
দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে বিধি মোতাবেক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে রাত ১২টার পর ফাইরুজ অবন্তীকার শুভাকাঙ্ক্ষী ও সহপাঠীরা ‘আমার বোন মরলো
কেনো, বিচার চাই বিচার চাই’ বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে প্রক্টরকে ঘেরাও
করে স্লোগান দিতে থাকেন। রাতের মধ্যেই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানান
সহপাঠীরা।
অবন্তিকার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে কুমিল্লা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের
কর্তব্যরত চিকিৎসক এ এন এম জোবায়ের বলেন, ‘গলায় ফাঁস নেওয়া এক রোগীকে রাত ১১টার
দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসে তাঁর স্বজনরা। আমি চেক করে দেখি সে অলরেডি ডেড। পরে
মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো
হয়েছে।’
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন
গনমাধ্যমকে বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরিবারের লোকজন এর আগেই
তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। শনিবার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে।’
COMMENTS