![]() |
মৃত হাসমত আলী শেখের স্বজনদের আহাজারি। ইনসেটে হাসমত আলী শেখ। |
এনএনবি, পাবনা
পাবনায় বন্ধুর 'ভুল' ইনজেকশনে হাসমত আলী শেখ (৪০) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর
অভিযোগ উঠেছে।
বাল্যবন্ধু স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আতিকুজ্জামান ওরফে সুমন পরপর ৪ ডোজ ইনজেকশন পুশ
করতেই হাসমত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বলে অভিযোগ স্বজনদের।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪) সকাল ৯টার দিকে সদর উপজেলার দোগাছী গ্রামে এ
ঘটনা ঘটে। ঐ দিন সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে
পুলিশ।
নিহত হাসমত দোগাছি ইউনিয়নের দোগাছি মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত আবুল মজিদ প্রামানিকের
ছেলে। তিনি জর্ডান প্রবাসী ছিলেন। কয়েক বছর আগে তিনি দেশে ফিরে আসেন। দুই
সন্তানের জনক হাসমত নানা ব্যবসায় জড়িত ছিলেন।
অভিযুক্ত পল্লী চিকিৎসক আতিকুজ্জামান ওরফে সুমন মহুরি দোগাছি চিথুলিয়া গ্রামের
আব্দুল জব্বার শেখের ছেলে।
এদিকে হাসমতের মৃত্যুর পরপরই অভিযুক্ত চিকিৎসকের ফার্মেসীর দোকান ভাঙচুর করে ও
কয়েক লক্ষ টাকার ওষুধ পুড়িয়ে দেয় হাসমতের স্বজনরা।
নিহতের চাচা ইসরাইল বলেন, ‘সুমন নামের পল্লী চিকিৎসক হাসমতকে ইনজেকশন পুশ করার
সঙ্গে সঙ্গে হাসমত মারা যায়। মনকে বুৃঝ দেওয়ার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলাম।
কিন্তু দোগাছী বাজার পার হতেই মরদেহ আবার বাড়িতে নিয়ে এসেছি। কোনো প্রকার
অনুমতি না থাকলেও সুমন এলাকায় ওষুদের দোকানের মধ্যে চেম্বার বসিয়ে শত শত রোগী
দেখেন। রোগী গেলেই ইনজেকশন পুশ করার অভ্যাস তার আগে থেকেই। এর আগেও তুলিয়া
আক্তার ও মর্জিনা খাতুন নামে দুই নারী সুমনের ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে। আগে
বিচার হয়নি তাই এখনো অনিয়ম করেই যাচ্ছে।’
নিহতের স্ত্রীর ঈশিতা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্বামী ছোটখাটো অসুস্থ
হলে সুমন ডাক্তারের থেকে বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। গত ৩ দিন ধরে বুকে
ব্যাথা ও যন্ত্রণায় ভুগছিল। সোমবার রাতে তার কাছ থেকে গ্যাসের ট্যাবলেট নিয়ে
খায়। সকালে অসুস্থ বেশি হলে ওই ডাক্তারকে আমার স্বামী ফোন করে ডাকেন। স্বামীকে
বারবার বলি যে পাবনায় যেতে হবে। সে এ কথা না শুনে ওই ডাক্তারকেই ডাকে। এরপর
ডাক্তার আমার বাড়িতে এসে পরপর ৪ ডোজ ইনজেকশন পুশ করেন। এক মিনিটের মধ্যেই স্বামী
আমার হাতের উপর মারা যায়।’
এই ঘটনায় হাসমতের স্বজনরা সুষ্ঠু বিচার ও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক
ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে পল্লী চিকিৎসক আতিকুজ্জামান ওরফে সুমন মুহুরি বলেন, ‘হাসমত আমার ঘনিষ্ঠ
বন্ধু। আমরা সব সময় একসঙ্গে চলাচল করেছি। সকালে তার বুকে ব্যাথা বেশি হলে আমি
গিয়ে প্রথমে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলেছি। এরপর একটা সার্জেল গ্যাসের ইনজেকশন
পুশ করি। হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। আসলে তার মৃত্যুর জন্য আমি দায়ি নই।
অযথা আমার ফার্মেসীর দোকান ভাঙচুর করে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ওষুধ পুড়িয়ে দিয়েছে।’
এর আগে ভুল চিকিৎসায় দুইজনের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত চিকিৎসক বলেন এ সম্পর্কে তিনি
কিছু জানেন না।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা নিহতের বাড়ি
পরিদর্শন ও স্বজন-প্রতিবেশিদের সাথে কথা বলেছি। মরদেহ উদ্ধার করার পর
হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর
কারণ জানা অসম্ভব। রিপোর্টে যদি অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে
আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
পাবনার সিভিল সার্জন ডা. শহিদুল্লাহ দেওয়ান বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো আমরা কোন
অভিযোগ পাইনি। পল্লী চিকিৎসকদের কোন অনুমতি থাকে না। সেজন্য ওইভাবে
রেজিস্ট্রারও থাকেনা। যদি কোন ক্লিনিক বা হাসপাতাল হতো তাহলে রেজিস্ট্রার থাকত।
তখন আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে তদন্ত করতে পারতাম। যদি কেউ অভিযোগ
দেয় তাহলে খতিয়ে দেখা হবে।’
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি।
COMMENTS