রংপুর থেকে রুকসানা রাফা
শিশুকন্য হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পিতাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। র্যাব-১৩ রংপুরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সিনিয়র এএসপি মোস্তাফিজুর রহমান এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানান, ২০১৬ সালে ২২ মাস বয়সী নিজ শিশুকন্যাকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামী আলাল ওরফে দুদু (৩৪) পিতা- মোসলেম উদ্দিন ওরফে প্লান্টু, সাং-কিশামতবিষূ মানজাই, রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এই হত্যাকান্ডের বিচার চলাকালীন সময় আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে নিজ এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম গিয়ে আত্মগোপন করে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরা-ছোয়ার বাইরে চলে যায়। গত ১৪ ই অক্টোবর সিপিসি-২, হাটহাজারী ক্যাম্প, র্যাব-৭ এবং সিপিএসসি, র্যাব-১৩, রংপুর এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানাধীন পশ্চিম খুলশী, ৩ নং রোড, আবাসিক এলাকা থেকে ঐ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী তার কন্যা সন্তানকে নিজ হাতে হত্যা করার বিষয়টি স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামী আলাল ও তার স্ত্রী চট্টগ্রামে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন, সেই সূত্রে তারা চট্টগ্রামে বসবাস করতেন। তাদের ঘরে ২২ মাস বয়সী একটি কন্যা সন্তান ছিল। শিশুটি তার নানীর কাছে রংপুরে থাকত। ২০১৬ সালে ঈদে আলাল তার স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি রংপুরে বেড়াতে যায়। এ সময় একদিন দুপুরে মেয়েকে নিজের বাড়িতে বেড়ানোর কথা বলে বের হয় আলাল। বিকাল বেলা মেয়েকে নিয়ে ফিরে আসার কথা থাকলেও আলাল ফিরে না আসায় শিশুটির নানী মোবাইলে যোগাযোগ করলে সে কিছুক্ষণের মধ্যে আসবে বলে জানায় এবং নাতনীর সাথে তাকে কথা বলিয়ে দেয়। পরে শিশুটির মামা শুভ তার মোবাইল থেকে আলালকে ফোন করলে ফোন রিসিভ করে উল্টা-পাল্টা কথা বলতে থাকে। আলালের অসংলগ্ন কথা শুনে নানী এবং মামা আলালের বাড়িতে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার মা, বাবা, ভাই এবং ভাবীকে জিজ্ঞেস করলে তারাও আলালের ব্যাপারে কিছু বলতে পারে না। এর দুদিন পর রংপুর কোতয়ালী থানা পুলিশ তাজহাট এলাকায় কলা বাগানে একটি শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে। পরে শিশুটির মা, নানী এবং আত্মীয়-স্বজন গিয়ে মরদেহটি সনাক্ত করে। এ সময় শিশুটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে পোকা ধরা, গলায় একটি দাগ এবং কান ও নাক দিয়ে রক্ত বের হওয়ার দাগ ছিল। এ ঘটনায় শিশুটির নানী বাদী হয়ে রংপুর কোতয়ালী থানায় আলাল ওরফে দুদু (৩৪) এবং আরও ৫জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ওই বছরের অক্টোবরে পুলিশ আলালকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তিনি নিজ হাতে তার ২২ মাস বয়সী শিশু কন্যাকে হত্যার বিষয়টি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে স্বীকার করে। এ ঘটনায় আদালত তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে। হত্যাকান্ডের বিচার চলাকালীন সময় আসামী আলাল আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে নিজ এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম গিয়ে আত্মগোপন করে। আসামীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
COMMENTS