এনএনবি নিউজ
সাম্প্রতিক বন্যায় সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার নাইন্দা নদীতে ভাঙন শুরু হয়। সেই ভাঙনে সদরপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের ২০টির বেশি বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এখনও নদী তীরবর্তী অর্ধশতাধিক পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বসত ভিটা-ঘরেই বসবাস করছে এ সব পরিবার। এতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় সরকারিভাবে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন বলছে, খাস জায়গা না পাওয়ায় সরকারিভাবে তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না।
সদরপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের সংস্কৃতিক কর্মী শ্যামল দেব বলেন, “গত ১৬ জুন রাতে আমাদের সদরপুর পশ্চিমপাড়ার ঘরবাড়ি প্লাবিত হলে সবাই বাড়িঘর ছাড়তে শুরু করে। পরদিন কেবল প্রাণ নিয়ে পাশের সদরপুর সেতুর উপরে এসে উঠি। আমরা আসার পথেই দেখলাম উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ভয়াল স্রোত নাইন্দা নদীর দিকে ধেয়ে আসছে। এই স্রোত আমাদের পাড়ার অন্তত ২৪টি ঘর ভাসিয়ে নেয়। ঘরের সঙ্গে ভিটাও হারিয়ে যায় নদীতে। পানি কিছু কমার পর ঢেউয়ে বিলীন হয়ে গেছে অবশিষ্ট ভিটা ও বাড়ি।”
এর আগে ১৯৮৮ ও ২০০৪ সালের বন্যায় এভাবে একই পাড়ার কিছু ঘর নদীতে ভেঙে পড়েছিল বলে জানান তিনি। কিন্তু এবারের বন্যায় ভিটাবাড়িও খেয়ে ফেলেছে নদীটি। আমরা এখন অসহায় অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছি। কিন্তু অন্যত্র চলে যাবো, এমন আর্থিক অবস্থা এবং যাওয়ার জায়গা নেই অনেকেরই।
বন্যায় বসতবাড়ি হারানো ৪০ বছর বয়সী পাখি বিবি বলেন, “অর্ধেক ঘর গাঙ্গে নিছেগি। যাইবার জায়গা না থাকায় এখানে পড়ে আছি। রাইত অইলে ঘুমাইতে পারি না, হজাগ থাকি। থেকে থেকে উঠি। হাঁটাহাঁটি করে রাত পার করি।”
নদী গিলে খাওয়া অর্ধেক ভিটায় আর অর্ধেক ঘরে দিনমজুর স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন বলে জানান তিনি।
বন্যায় সব হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন অঞ্জনা রানী। মাথা গোজার ঠাঁই না থাকায় বন্যায় ভেঙে যাওয়া ঘরেই স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতে হচ্ছে।
অঞ্জনা বলেন, “রাইত আইলে ঘুম আয়না। মনে অয় অইনি ভাইঙা যায়গি। আমরারে কেউ আইয়া দেখেনা।”
একই গ্রামের রিনা বেগম বলেন, “আমরারে সরকারিভাবে ঘরবাড়ি বানাইয়া না কি উপায় হবে? আমরার যাইবার তো জায়গা নাই।”
পাঁচ সন্তানসহ পরিবারের সদস্য নিয়ে ঝুঁকিতে বসবাস করছে এ পরিবারটি।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্জনা রানী দে বলেন, “আমরা একশ বছর ধরে এই গ্রামে বসবাস করি। হিন্দু-মুসলিম মিলে বসবাস করি। আমরা সবাই গরিব মানুষ। সরকারের যেসব লোক আমাদের দেখতে এসেছেন সবাই দুর্দশা দেখে গেছেন। কেউ কিছু করতেছে না।”
“যাদের ঘর ভেঙে গেছে তাদের এখান থেকে না সরালে যে কোনো সময় দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটবে।”
এ বিষয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুজ্জামান জানান, নাইন্দা নদীর ভাঙনে তীরবর্তী ২০টি পরিবাররের ঘর বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ৫০টির মত পরিবার।
“আমি একাধিকবার ভাঙন কবলিত সদরপুর গ্রাম পরিদর্শন করেছি। বন্যার পর তাদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। ওই এলাকার জনপ্রতিনিধি যারা আছেন, তাদের বলেছি কাছাকাছি সরকারি খাস জায়গা থাকলে আমাকে জানাতে। আমরা তাদেরকে বন্দোবস্ত দিয়ে ঘরবাড়ি সরকারি খরচে তৈরি করে দেব। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা এমন জায়গা এখনো বের করতে পারেন নাই।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জয়কলস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত সুজন বলেন, “ভাঙন কবলিত মানুষরা দরিদ্র ও অসহায়। বন্যার পর তাদের আমরা নানা সহায়তা দিয়েছি। তাদেরকে পুনর্বাসনে বিশেষ সহায়তা দিতে চেষ্টা করছি। কিন্তু কাছাকাছি খাস জায়গা না পাওয়ায় সরকারিভাবে তাদেরকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না।”
COMMENTS