ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের অন্তর্ভুক্ত তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সদস্যদের প্রশিক্ষণ। ফাইল ছবি |
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মিয়ানমারের সামরিক সরকার ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ নামে পরিচিত বিদ্রোহী জোট পূর্ব মিয়ানমারের একটি বিশাল অংশ দখল করেছে। এই জোটের অগ্রগতি এবং মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে—তারা কি সামরিক জান্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে?
মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকট ও গৃহযুদ্ধ ক্রমেই গভীরতর হচ্ছে, যেখানে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সামরিক সাফল্য ও অগ্রগতি সামরিক জান্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’-এর সফল অভিযান মিয়ানমারের ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। তবে, সামরিক জান্তা মান্দালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো রক্ষার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা সংকটকে আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে। চীনের কৌশলগত অবস্থান ও বিদ্রোহীদের স্বায়ত্তশাসনের দাবিও পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। ফলে, মিয়ানমারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখনও অত্যন্ত অনিশ্চিত এবং জান্তা পতন হলেও দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা অর্জন চ্যালেঞ্জপূর্ণ হতে পারে।
মিয়ানমারের সামরিক সরকার ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ নামে পরিচিত বিদ্রোহী জোট পূর্ব মিয়ানমারের একটি বিশাল অংশ দখল করেছে। এই জোটের অগ্রগতি এবং মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে—তারা কি সামরিক জান্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে?
ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সে কারা আছে?
ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স তিনটি শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত: মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), এবং আরাকান আর্মি। এই গোষ্ঠীগুলো তাদের নিজ নিজ অঞ্চলের স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সাথে লড়াই করছে। বর্তমানে, তারা মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে উৎখাত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স যেভাবে লড়ছে
২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স একটি বড়সড় সামরিক অভিযান শুরু করে, যার নাম ‘অপারেশন ১০২৭’। প্রায় ১০ হাজার যোদ্ধা এই অভিযানে অংশ নেয়। শান প্রদেশ জুড়ে পরিচালিত এই আক্রমণে বিদ্রোহীরা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ও সামরিক ঘাঁটি দখল করে নেয়। এমনকি তারা মান্দালয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়, যা মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।জান্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে?
ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সাম্প্রতিক সাফল্য মিয়ানমারের সামরিক সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জোটের মান্দালয় এবং এর আশেপাশের এলাকাগুলো দখল সামরিক জান্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার সম্ভাবনা তৈরি করছে। তবে, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে, কারণ সামরিক বাহিনী মান্দালয়ের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার জন্য প্রচুর শক্তি বিনিয়োগ করছে।ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের লক্ষ্য
ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে উৎখাত করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ। তবে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো নিজেদের অঞ্চলের জন্য স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা। মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি)-এর সাথে তাদের কিছুটা মতৈক্য থাকলেও, উভয় পক্ষের মধ্যে কোনো সামরিক চুক্তি হয়নি।চীনের ভূমিকা
মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চীনের প্রভাবও দেখা গেছে। চীন পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে চাইলেও, এমএনডিএএ এর মতো গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন জানায়। চীনের সহায়তায় এমএনডিএএ কিছু সাফল্য অর্জন করলেও, ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের অগ্রগতি চীনকেও বিস্মিত করেছে।মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংকট ও গৃহযুদ্ধ ক্রমেই গভীরতর হচ্ছে, যেখানে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সামরিক সাফল্য ও অগ্রগতি সামরিক জান্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’-এর সফল অভিযান মিয়ানমারের ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। তবে, সামরিক জান্তা মান্দালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো রক্ষার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা সংকটকে আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে। চীনের কৌশলগত অবস্থান ও বিদ্রোহীদের স্বায়ত্তশাসনের দাবিও পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। ফলে, মিয়ানমারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখনও অত্যন্ত অনিশ্চিত এবং জান্তা পতন হলেও দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা অর্জন চ্যালেঞ্জপূর্ণ হতে পারে।
COMMENTS