ছবি: সংগৃহীত |
অনলাইন ডেস্ক
সম্প্রতি কেরালা রাজ্য সরকারের এক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রিতে কীভাবে নারীদের যৌন হেনস্তা করা হয় তা বেরিয়ে এসেছে। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে মালায়ালাম সিনেমার প্রযোজক ও অভিনেতা দিলীপের অভিনেত্রী লাঞ্ছিত মামলার প্রতিক্রিয়ায় উইমেন ইন সিনেমা কালেক্টিভের পিটিশন অনুসরণ করে কেরালা সরকার হেমা কমিটি গঠন করেছিল।
এই কমিটির প্রতিবেদন ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে কেরালা, যা ছড়িয়ে পড়ছে ভারতের অন্যত্রও।
কেরালার হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কে. হেমার নেতৃত্বাধীন এ কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছিল সাড়ে চার বছর আগে। তবে একাধিক আইনি চ্যালেঞ্জের পর ১৯ আগস্ট, ২০২৪ হেমা কমিটির ওই রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করেছে কেরালা সরকার।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কে. হেমার সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য হিসেবে প্রবীণ অভিনেত্রী সারদা এবং অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার কেবি ভালসালা কুমারীকে নিয়ে তিন সদস্যের প্যানেলের ২৯০ পাতার এ রিপোর্টে মালয়ালম অভিনেত্রীদের যৌন হয়রানি, বেআইনি নিষেধাজ্ঞা, মাদক ও অ্যালকোহলের অপব্যবহার, পারিশ্রমিক বৈষম্য, কিছু কিছু ক্ষেত্রে অমানবিক কাজের বিবরণ উঠে এসেছে।
এরপরেই যৌন হেনস্থার একের পর এক অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রির তারকারা। এই নিয়ে একাধিক অভিনেত্রী একাধিক নায়কের বিরুদ্ধে অতীতের যৌন হেনস্থার কথা প্রকাশ করেছেন।
গত সোমবার (২৬ আগস্ট, ২০২৪) প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসার পর টালিউড অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র কোচি সিটি পুলিশ কমিশনারের কাছে মালয়ালম পরিচালক রঞ্জিত বালকৃষ্ণনের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিনেত্রীর অভিযোগে বলা হয়, ২০০৯ সালের ‘পালেরি মনিক্যম: ওরু পাথিরাকোলাপাথাকাথিনতে কথা’-এর অডিশনের সময়ে তাঁকে যৌন হেনস্তা করেছেন পরিচালক রঞ্জিত।
অভিযোগ অস্বীকার করলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেরালার সরকারি সংস্থা ‘কেরালা চলচ্চিত্র একাডেমি’ থেকে পদত্যাগ করেন পরিচালক রঞ্জিত।
রঞ্জিত বালকৃষ্ণনের পদত্যাগের পর অ্যাসোসিয়েশন অব মালয়ালম মুভি আর্টিস্ট সংগঠনের সভাপতি সুপারস্টার মোহনলালসহ ১৭ সদস্য সবাই একযোগে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
জানা যায়, অ্যাসোসিয়েশন অব মালয়ালম মুভি আর্টিস্ট সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অভিনেতা সিদ্দিকী ও যুগ্ম সম্পাদক বাবুরাজের নাম হেমা কমিটির প্রতিবেদনে আসায় মোহনলাল সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন। তারপর মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট, ২০২৪) বাতিল হয়ে যায় সংগঠনটির এক্সিকিউটিভ কমিটি।
এদিকে সোমবার (২৬ আগস্ট, ২০২৪) অভিনেত্রী মিনু মুনিরও জনপ্রিয় মালয়লাম অভিনেতা মুকেশ এবং জয়সূর্যের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেন। ফেসবুকে একটি পোস্টে অভিনেত্রী দাবি করেন অভিনেতা মুকেশ, মানিয়ানপিল্লা রাজু, ইদাভেলা বাবু এবং জয়সূর্য – ২০১৩ সালের একটি সিনেমার সেটে তাঁকে শারীরিক ও মৌখিক নির্যাতন করেছিলেন।
যদিও মুকেশ তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং মুনিরের বিরুদ্ধে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করার অভিযোগ আনেন।
হেমা কমিটির প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, মালয়ালম সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে বিভিন্ন স্তরে প্রবেশের জন্য ‘কোডওয়ার্ড’ প্রচলিত রয়েছে। কোডওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা শব্দগুলো হলো ‘সমঝোতা’ ও ‘অ্যাডজাস্টমেন্ট’।
এর উদ্দেশ্য, এটাই বোঝানো যে সিনেমা জগতে যে নারীরা আসতে ইচ্ছুক, তাঁরা যেন ‘প্রয়োজনমতো’ পুরুষদের ‘যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য নিজেদের প্রস্তুত রাখেন’। চলচ্চিত্র প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা নবাগতদের সামনে একটা বিষয় বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন যে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কিন্তু ‘কাস্টিং কাউচ’ প্রচলিত পদ্ধতি। যাঁরা এই ব্যক্তিদের ‘জালে’ আটকা পড়েন, তাঁদের আবার ‘কোড নম্বরও’ দেওয়া হয়।
হেমা কমিটির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ঘটনা তদন্তের জন্য এক সিনিয়র পুলিশ অফিসারের নেতৃত্বে বিশেষ তদন্ত দল গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারায় বিজয়ন।
COMMENTS