![]() |
৩৩০ জন মায়ানমার নাগরিককে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের কাছে হস্তান্তর শেষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বিজিবি প্রধান। |
এনএনবি, কক্সবাজার
‘দেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় কখনও পিছপা হবো না।’– বলেছেন
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ
আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪) দুপুরে কক্সবাজারের ইনানীতে নৌবাহিনীর
জেটিঘাটে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বিজিপিসহ ৩৩০ জন মায়ানমার নাগরিককে সেদেশের
সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি'র কাছে হস্তান্তরের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে
মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন বিজিবি প্রধান।
এইদিন সকালে বিজিবি'র কক্সবাজার রিজিয়নের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে আশ্রয়
গ্রহণকারী ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ২ জন সেনা সদস্য, ১৮
জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং ৪ জন বেসামরিক নাগরিকসহ মোট ৩৩০ জন মায়ানমার নাগরিককে
সেদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) কাছে হস্তান্তর করা
হয়। এসময় বাংলাদেশে নিযুক্ত মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিয়াউ মো (Aung Kyaw Moe)
উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বিজিবি মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান আমাদেরকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম অখণ্ড বাংলাদেশ দিয়ে গেছেন। সেই স্বাধীন
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা ও নিরাপত্তা রক্ষা এবং সীমান্ত সুরক্ষার
পাশাপাশি সীমান্তবর্তী জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে বর্ডার গার্ড
বাংলাদেশ বদ্ধপরিকর। এ লক্ষে সীমান্তে বিজিবি'র টহল ও জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে বিজিবি সীমান্তের পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ
করছে। বর্তমানে সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে বিজিবি'র নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
পরিস্থিতি যাই হোক, দেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় কখনও পিছপা
হবো না। সীমান্ত দিয়ে আর একজন মায়ানমার নাগরিককেও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে
দেওয়া হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধৈর্য ধারণ করে এবং আন্তর্জাতিক
সম্পর্ক বজায় রেখে বিজিবিকে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করার নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে বিজিবির তত্ত্বাবধানে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে
বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী সদস্যদের সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্রীকরণ করে এবং তাদের
নিরাপদ আশ্রয় প্রদান করে। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় আগত ৯
বিজিপি সদস্যকে বিজিবির তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।’
এ সময় বিজিবি মহাপরিচালক স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক ও
সীমান্তবর্তী সর্বস্তরের জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে সীমান্তে উদ্ভূত যেকোনো
পরিস্থিতি মোকাবিলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। একইসঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয়
গ্রহণকারী বিজিপি সদস্যদেরকে মায়ানমারে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম অত্যন্ত সফলভাবে
সম্পন্ন হওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ এবং
সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী
বিজিপিসহ ৩৩০ জন সদস্যকে মায়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য বিজিবিকে নির্দেশনা দেয়া
হয়। এপ্রেক্ষিতে বিজিবি'র রামু সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মেহেদী হোসাইন
কবীর এর নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
প্রতিনিধি, কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের (৩৪ বিজিবি) অধিনায়ক, টেকনাফ ব্যাটালিয়নের
(২ বিজিবি) অধিনায়ক এবং কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সমন্বয়ে ৭
সদস্য বিশিষ্ট হস্তান্তর কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি মায়ানমারের সংশ্লিষ্ট
কর্তৃকপক্ষের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ ও সমন্বয় করে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী
বিজিপিসহ অন্যান্য সদস্যদেরকে মায়ানমারে প্রত্যাবাসনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন
করে।
এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জাহাজে করে
মায়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পুলিশ কর্নেল মায়ো থুরা নাউং (Myo Thura Naung)
এর নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট বিজিপি প্রতিনিধিদল কক্সবাজারের ইনানীর নৌবাহিনীর
জেটিঘাটে আসে। পরে বিজিবি'র কাছ থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী ৩৩০ জন
মায়ানমার নাগরিককে গহণ করে মায়ানমারে নিয়ে যায়।
COMMENTS