![]() |
পাবনার চাটমোহর রেলওয়ে স্টেশনে র্যাবের অভিযানে আটক ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের ৬ সদস্য। |
এনএনবি, পাবনা
পাবনার চাটমোহর রেলওয়ে স্টেশনে অভিযান চালিয়ে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের
মূলহোতা শরিফুল ইসলাম সহ ৬ জনকে আটক করেছে র্যাব।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪) বিকেলে চাটমোহর রেলওয়ে স্টেশন থেকে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন, চাটমোহর উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়নের অমৃতকুন্ডা গ্রামের মৃত নুরুল
ইসলামের তিন ছেলে শরিফুল ইসলাম (৩৮), জাহিদুল ইসলাম (৩৪) ও আরিফুল ইসলাম (৩২),
একই গ্রামের মৃত কামাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল জলিল (৪৫), আনোয়ার হোসেনের ছেলে
আনিসুর রহমান (২৮), পূর্বটিয়ারতলা গ্রামের আবুল কালাম শেখের ছেলে হাবিবুর রহমান
(২২)।
ওই দিন বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১২, সিপিসি-২ পাবনার কোম্পানি কমান্ডার
মেজর এহতেশামুল হক খান এসব তথ্য জানান।
কোম্পানি কমান্ডার বলেন, ‘চাটমোহর রেলওয়ে স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে ট্রেনের টিকিট
কালোবাজারি করে আসছিল একটি চক্র। অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে
টিকিট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতা শরিফুল ইসলামসহ উল্লিখিত ৬ জনকে আটক করে র্যাব
সদস্যরা। এ সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় বিভিন্ন ট্রেনের ৩৬টি আসনের টিকিট,
৭টি মোবাইল ফোন ও টিকিট বিক্রির নগদ ১৫ হাজার টাকা।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা র্যাবকে জানিয়েছে, চাটমোহর রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট
কালোবাজারি সিন্ডিকেটের মূলহোতা শরিফুলের নেতৃত্বে চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন
যাবত চাটমোহর স্টেশন থেকে রাজশাহী-ঢাকাগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, পদ্মা এক্সপ্রেস
ও ধূমকেতু এক্সপ্রেস এবং খুলনা-ঢাকাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস, দিনাজপুর-ঢাকাগামী
দ্রুতযান এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে আসছিলেন।
এ ঘটনায় মামলা দায়ের করে আটককৃতদের চাটমোহর থানায় সোপর্দ করার বিষয়টি
প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানায় র্যাব।
যেভাবে টিকিট কালোবাজারি করতো চক্রটি
আটককৃতদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে র্যাব-১২ পাবনার কোম্পানি কমান্ডার জানান,
আটক শরিফুলের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা প্রথমত ট্রেনের কাউন্টারে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ
যাত্রী, রেলওয়ে স্টেশনের কুলি, স্টেশনের আশেপাশের এলাকার টোকাই, রিকশাওয়ালা ও
দিনমজুরদেরকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে টিকিট সংগ্রহ করে থাকে।
এইক্ষেত্রে তাদের প্রত্যেককে ৪টি করে টিকিট সংগ্রহ করার বিনিময়ে ১০০ টাকা করে
দেয়া হতো।
এছাড়াও কাউন্টারে থাকা কিছু অসাধু টিকেট বুকিং কর্মচারীদের দিয়ে বিভিন্ন সাধারণ
যাত্রীদের টিকিট কাটার সময় প্রদেয় এনআইডি সংগ্রহ করে রাখতো এবং পরবর্তীতে সেগুলো
ব্যবহার করে সংরক্ষণকৃত প্রতিটি এনআইডি দ্বারা ৪টি করে ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ
করতো। এভাবে তারা প্রতিদিন প্রায় শতাধিক টিকিট সংগ্রহ করতো। সেইসাথে ঈদ, পূজা,
সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ্য করে আটককৃতরা তাদের কাছে সংরক্ষিত
জনসাধারণের এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে, এমনকি সার্ভার ডাউন করে অনলাইনে টিকিট
সংগ্রহ করতো।
আটককৃত আরিফুল, আনিছুর, জলিল, জাহিদুল ও হাবিবদের প্রধান কাজ ছিলো অনলাইন টিকিট
প্রত্যাশিদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে দর কষা-কষি করে অনলাইন টিকিটগুলো অতিরিক্ত
মুল্যে বিক্রি করা।
উল্লেখ্য, নিরাপদ ও আরামদায়ক যাত্রার জন্য এ রুটে ট্রেনের টিকিটের ব্যাপক চাহিদা
রয়েছে। টিকিটের বেশি চাহিদা থাকায় টিকিট কালোবাজারিরা বিভিন্ন কৌশলে ট্রেনের
টিকিট অগ্রিম সংগ্রহ করে অবৈধভাবে নিজেদের কাছে মজুদ করে রেখে সাধারণ যাত্রীদের
নিকট দুই থেকে তিন গুন বেশি দামে বিক্রি করে। চাহিদা অনুযায়ী টিকিট না পাওয়া এবং
টিকেট কালোবাজারি কর্তৃক বেশি দামে টিকিট বিক্রয়ের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচিত হয়।
COMMENTS